ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মাসেতুর রেলপথে দর্শনার্থীদের আড্ডা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
পদ্মাসেতুর রেলপথে দর্শনার্থীদের আড্ডা

মাদারীপুর: দেশের উত্তরাঞ্চলের মতো পদ্মাসেতুর দক্ষিণাঞ্চলে রেল লাইন ছিল না এতদিন। রেল বলতে এ অঞ্চলের মানুষেরা উত্তরের জনপদকেই বুঝে থাকে।

নৌযানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সে রেলের সুবিধা পেতে যাচ্ছে খুব শিগগিরই। পদ্মাসেতুকে ঘিরে রেল যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলে। পদ্মাসেতু থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইনের কাজ শেষের পথে।  

এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়েই উঁচু রেল লাইন। তার ওপর পাথর বিছানো রেলপথ এখন এ এলাকার দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। খুব শিগগিরই এ পথে ট্রেন চলবে। উত্তরের জনপদ রাজশাহী এবং ঢাকাতেও ট্রেনে চড়ে যাওয়া যাবে শিবচর থেকেই। এ রেলপথ দেখতে প্রতিদিনই শিবচরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের ভিড় থাকে। বিশেষ করে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেল পথের সূর্য্যনগর, দত্তপাড়ার বাঁচামারা, পাঁচ্চর, কুতুবপুরসহ পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন, রেলপথ ধরে হাঁটেন। বসে আড্ডাও দেন।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেল পথের সূর্য্যনগর, বাঁচামারা, পাঁচ্চর, কুতুবপুর এলাকার রেলপথে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষের ভিড়। লোকজনের ভিড়কে কেন্দ্র করে রেল লাইনে ঝালমুড়ি, বাদামসহ খেলনা বিক্রেতাদেরও দেখা মিলে। অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন। রেললাইনের ওপর বসে বাদাম খান আবার কেউ রেলপথে হেঁটে বেড়ান। পরিবার ছাড়াও দলবদ্ধ হয়ে স্কুল-কলেজের বন্ধুরা, চাকরিজীবী, স্থানীয় বয়স্কদের হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়। সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত রেললাইনে দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় থাকে।  

বরিশাল থেকে পাঁচ্চরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা মো. জামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন,এখানে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। বিকেলে তাদের সঙ্গে রেললাইনে ঘুরতে এসেছি। দক্ষিণাঞ্চলে রেলপথ নতুন। আমাদের কাছে রেললাইন কাঙ্ক্ষিত ছিল না। আমরা বাংলা সিনেমায় রেল লাইন দেখতাম! এখন দক্ষিণাঞ্চল রেল সংযোগের আওতায় এসেছে। বেশ ভালো লাগছে। অবসর সময় কাটাতেই রেলপথ ধরে হাঁটছি। অনেক লোকজন আসছে।

স্কুলছাত্রী সিনহা বলেন,আমাদের বাড়ি রেলপথের কাছেই। রেললাইন থেকে দেখা যায়। বিকেলে এখানে প্রায়ই ঘুরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকজন ঘুরতে আসে এখানে। সূর্য ডোবার মুহূর্তে রেল লাইন থেকে বেশ ভালো লাগে।

উপজেলার দত্তপাড়া থেকে আসা দুই যুবক বলেন,রেল চালু হলে তো আর এভাবে হেঁটে বেড়ানো যাবে না। আমাদের এখানে তেমন দর্শনীয় স্থান নেই। পদ্মানদীর পাড়ে ঘুরতে যেতাম আগে। সেতু দেখতে। এখন বিকেলের সময়টা রেলপথে ঘুরে বেড়াই। সময় কাটাই। ভালো লাগে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকজন আসে। বিকেলে একপ্রকার মেলা মিলে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা সংলগ্ন কুতুবপুর এলাকার জংশন থেকে আগামী মাসের ১৬ তারিখের দিকে ট্রেন চালু হতে পারে। এখান থেকে রাজশাহী পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলার কথা রয়েছে। চলতি মাসের ১ তারিখে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে জাজিরা টোলপ্লাজ পর্যন্ত রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেনের কয়েকটি বগি চালানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান,পদ্মাসেতুর পর মাদারীপুর জেলার শিবচরবাসীর কাছে রেলসংযোগ বহুল কাঙ্ক্ষিত। ট্রেন চালু হলে যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে রেল যোগাযোগ। আর তাই ট্রেন চালু হওয়ার আগে এ রেললাইন স্থানীয়দের কাছে অবসর সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে রেল লাইন জমে উঠে দর্শনার্থীদের ভিড়ে।

শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান মাদবর জানান, রেল চালু হলে নতুন দিগন্ত খুলবে যোগাযোগের। রেল ঘিরেও স্বপ্ন এ অঞ্চলের মানুষের মনে। পদ্মাসেতুর পর রেল চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এ এলাকার মানুষ। এখন এ রেললাইন মানুষের অবসর সময় কাটানোর স্থানে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য মানুষের পদচারণা দেখা যায় বিকেল হলেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।