ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক পায়ে লিখে দাখিল পাস করলো ‘অদম্য’ রাসেল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
এক পায়ে লিখে দাখিল পাস করলো ‘অদম্য’ রাসেল ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: মানুষের শারীরিক শক্তি থেকে ইচ্ছা শক্তিটাই বড়। কথাটির আরও একটি প্রমাণ দিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার রাসেল মৃধা।

আজ তিনি তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির বদলোতে প্রশংসায় ভাসছেন। তার দুটি হাত ও একটি পা নেই। তাই বলে দমে যাননি জীবন যুদ্ধে। একটি পা দিয়ে লিখে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছেন রাসেল। প্রকাশিত ফলাফলে জানা যায় তিনি জিপিএ ৩.৮৮ পেয়ে পাশ করেছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রাসেলের পাসের খবরে পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী, এলাকার মানুষ, সহপাঠি ও শিক্ষকরা খুশিতে উদ্বেলিত। পাশাপাশি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এমএম সামিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী রাসেল পাস করার খবর সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। খবর পেয়ে তিনি রাসেলের সঙ্গে কথা বলে শুভ কামনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি কলেজে ভর্তি ও পড়াশুনার ব্যাপারে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

ইউএনও আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকেও সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন।

রাসেল নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে। সে স্থানীয় শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে এ বছর দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল।

জন্ম থেকেই রাসেলের দুই হাত নেই, ডান পা নেই। বাম পা থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। পড়াশোনা শেষ করে বাবা-মায়ের সকল দায়িত্ব নেওয়ার স্বপ্ন তার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তার চেষ্টার কোনো কমতি নেই।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অভাব-অনটনের মাঝেও প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধার লেখাপড়ার প্রতি আলাদা স্পৃহা দেখে তার দরিদ্র বাবা-মা হাল ছাড়েন নি। তার স্বপ্ন পূরণে পড়াশোনায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে রাসেল। সামনের দিনগুলোও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে চান এ অদম্য যোদ্ধা।

রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, আমার দুটো হাত নেই, একটি পাও নেই। এক পা দিয়ে লিখে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছি। সকলের দোয়ায় আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন সামনের দিনগুলোতে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারি। আমার ফলাফলের জন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।

রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা আমার ছেলের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সে দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তার লেখা পড়ার খরচ চালিয়ে যাবো। তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাতে চাই।

শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা মোর্তারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাসেল আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে শিক্ষক-কর্মচারীসহ সকলেই খুশি। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

বাংলাদেশ সময় : ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।