ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা হিসেবেই নথিভুক্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে। এতে উল্লেখ রয়েছে, ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথিতে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখেই ওয়াশিংটনে স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এক জরুরি বৈঠক চলছিলো। ওই বৈঠকে সিআইএ’র পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছিলেন রিচার্ড হেমস। সভাপতিত্ব করছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। বৈঠকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই বৈঠকেই রিচার্ড হেমস বলেন, অজ্ঞাত স্থান থেকে রেডিও বার্তায় শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।
স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া ওই বৈঠকের বিষয় ছিলো ‘পাকিস্তান’। স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অপর দুই কর্মকর্তা ইউ আলেক্সিস জনসন ও ক্রিস্টফার ভ্যান হলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন ডেভিড প্যাকার্ড ও জেমস এইচ নয়েস। সিআইএ’র প্রতিনিধিত্ব করেন রিচার্ড হেমস ও ডেভিড ব্লি, জেসিএস‘র পক্ষে লেফটেনেন্ট জেনারেল মেলভিন জায়েস ও ফ্রাঙ্ক ডব্লিউ রি, এনএসসি‘র পক্ষে কর্নেল রিচার্ড টি কেনেডি, হ্যারল্ড এইচ সন্ডার, স্যাম হকিন্সন ও কিথ গাথরি।
বৈঠকে রিচার্ড হেমস বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আপডেট জানাচ্ছিলেন। বিভিন্ন প্রশ্ন করে হেনরি কিসিঞ্জার জেনে নিচ্ছিলেন প্রয়োজনীয় তথ্য। পরে এই বৈঠকের কথপোকথন নোট আকারে পররাষ্ট্র দফতরের গোপন নথিতে স্থান পায়। গত ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখে পররাষ্ট্র দফতর এসব গোপন নথি প্রকাশ করে। তাতেই নির্দিষ্ট তথ্য মেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেই সময়ের অবস্থান সম্পর্কে।
স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা হিসেবেই চিহ্নিত করে।
রিচার্ড হেমস তার বর্ননায় তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট অফিসের পরিস্থিতি বৈঠকে অবহিত করছিলেন। রিচার্ডের বক্তব্যের প্রথম লাইনটি অবশ্য এখনো গোপনই রাখা হয়েছে। তবে ৩১ মার্চ যেটুকু বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে রিচার্ড হেমস বলছিলেন-
কন্স্যুলেট জেনারেলের এলাকা খুবই শান্ত। কিন্তু শহরের পুরোনা অংশে (পুরোনো ঢাকা) ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলছে। কিছু গুলি বা বিষ্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ পর্যন্ত কেবলমাত্র দুই জন কন্স্যুলেট কর্মকর্তা কন্স্যুলেট ভবনে ঢুকতে পেরেছেন। (হেমসের বক্তব্যের এর পরের লাইনটিও গোপন রাখা হয়েছে। )
প্রকাশিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন- দুপুর ১টায় সামরিক শাসক কর্তৃপক্ষ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার দুই সমর্থক নিহত হয়েছেন। (এ পর্যায়ে মূল বক্তব্যের আরও দুটি লাইন অপ্রকাশিত রয়েছে। )
প্রকাশিত বক্তব্যের পরের অনুচ্ছেদে দেড় লাইন অপ্রকাশিত রেখে রিচার্ড হেমসের ভাষায় আরও বলা হয়- তারা বলছে শুক্রবার রাতে ইয়াহিয়া তার ভাষণে মুজিবুর রহমানের ওপর বর্ণনা দিতে গিয়ে যে বিষ ছড়িয়েছেন তার প্রশংসা করতে বক্তব্যটি শুনতে হবে। ইসলামাবাদ নিশ্চিত করেছে মুজিবুর রহমানকে সফলভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচনা কি কারণে ভণ্ডুল হলো তা অস্পষ্ট।
এসময় কিসিঞ্জারের একটি বক্তব্য রয়েছে প্রকাশিত নথিতে। তিনি বলছিলেন, গতকালও তো অবস্থা দৃশ্যে মনে হচ্ছিলো একটা চুক্তি হয়ে যেতে পারে।
আর রিচার্ড হেমস এর উত্তরে আবার বললেন- ২৪ মার্চেও পরিস্থিতি একটি চুক্তির কাছাকাছি পর্যায়ে ছিলো। হতে পারে মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সামরিক আইন তুলে নেওয়ার দাবির কারণেই তা ভণ্ডুল হয়েছে।
হেমস আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন অজ্ঞাত স্থান থেকে এমন একটি রেডিও বার্তা প্রচার করা হয়েছে। পুর্বপাকিস্তানে ২০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি বিশ্বস্ত সেনা অবস্থান করছে। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের নিয়মিত ৫ হাজার এবং পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ হাজার আধাসামরিক সেনা রয়েছে, তবে তারা কতটা বিশ্বস্ত থাকবে সেটি সন্দেহজনক। ভারতের সংবাদপত্রগুলো রিপোর্ট করছে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা জাহাজযোগে পৌঁছে গেছে, তবে আমরা তা নিশ্চিত করতে পারিনি।
২৬ মার্চ তারিখটির কথা উল্লেখ করে হেমস আরও বলেন, আজই সৈন্য বোঝাই ছয়টি সি-১৩০ করাচি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে। এই সেনাদের যেহেতু সিলন হয়ে যেতে হবে সে কারণে তাদের পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
হেমস আরও বলেন, সরিয়ে নেওয়ার মতো ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৭০০ জন এবং চট্টগ্রামে ৬০ অথবা ৭০ জন রয়েছেন। তবে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এখনো কোনো অনুরোধ আসেনি।
**যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথিতেও ‘রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব’
বাংলাদেশ সময় ১৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৪