ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

ধাপ্পাবাজি, দখলবাজি চলছে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
ধাপ্পাবাজি, দখলবাজি চলছে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সদস্যরা

আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে গিয়ে কতিপয় সদস্য একটি মনগড়া পকেট কমিটি ঘোষণা করেছিলেন।

ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল যথাক্রমে সাপ্তাহিক প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ ও সাপ্তাহিক আজকালের শওকত ওসমান রচিকে।  

কিন্তু স্বঘোষিত ও পকেট কমিটি গঠনের ২২ দিনের মাথায় মোহাম্মদ সাঈদকে বাদ দিয়ে রোববার (১৯ মার্চ) নিজেকেই সভাপতি ঘোষণা করে আবারো পাল্টা একটি পকেট কমিটি করলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর।

জানা গেছে, নতুন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ সংগঠনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীরের কাছে সংগঠনের ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে বলেন। আর এতেই দর্পণ কবীরের বিরাগভাজন হন মোহাম্মদ সাঈদ।  

এ নিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দুজনের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলে আসছিল। বিদায়ী সভাপতি নাজমুল আহসান এবং সাপ্তাহিক আজকালের প্রধান সম্পাদক ও জেবিবিএর সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ ব্যাংক হিসাবসহ সংগঠনের হিসাব বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে গত ১৮ মার্চ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মোহাম্মদ সাঈদ এবং তার মালিকানাধীন প্রবাস পত্রিকায় কর্মরত প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ওয়ালী-উল-আলম।

২২ দিন আগে গঠিত কমিটি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাজমুল আহসান ও জাকারিয়া মাসুদ জিকোর পরামর্শে রোববার সন্ধ্যায় কথিত জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করেন। ওই সভায় সাপ্তাহিক আজকাল ও প্রবাস পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারিরা উপস্থিত হন। ওই সভায় উপস্থিত হয়ে মোহাম্মদ সাঈদ ও সৈয়দ ওয়ালী-উল-আলম পদত্যাগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দর্পণ কবীরকে সংগঠনের হিসাব-নিকাষ বুঝিয়ে দিতে বলেন।  

এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে একপর্যায়ে দর্পণ কবীর দায়সারা গোছের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ওই প্রতিবেদনে ক্লাবের ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ১০ হাজার ডলারের কোনো সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মোহাম্মদ প্রতিবাদ জানান।  

এনিয়ে দর্পণ কবীরের সঙ্গে তার আবারো উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলে সভা থেকে বেরিয়ে যান মোহাম্মদ সাঈদ। পরে জাকারিয়া মাসুদ জিকোর অনুরোধে সভাস্থলে আসেন। সভায় মোহাম্মদ সাঈদ সভাপতি পদে তার অপারগতা প্রকাশ করায় দর্পণ কবীর নিজেই সভাপতি হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন।  

অন্যদিকে স্বঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি দর্পণ কবীরের স্থলাভিষিক্ত হন জাকারিয়া মাসুদ জিকোর সহধর্মিনী, আজকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মডেল ও অভিনেত্রী মিলা হোসেন। তবে মোহাম্মদ সাঈদকে কমিটিতে কার্যকরী সদস্য পদে রাখা হয়েছে। এতেও আপত্তি করেন তিনি।

আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে পাল্টা প্রেসক্লাব গঠন এবং পকেট কমিটি গঠনের ২২ দিনের মাথায় আবারো নতুন কমিটি গঠন করায় কমিউনিটিতে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাবের হিসাব না দেওয়ায় তাদের সহযোগীরাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।  

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দর্পণ কবীর। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদক সাঈদ-উর-রব।  

কিন্তু কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসানের অব্যাহত অপকৌশলের কারণে প্রেসক্লাবের সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেন সাঈদ-উর-রব।  

এরপর থেকে ২০১০-২০১২ মেয়াদ ছাড়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দর্পণ কবীর। এই দীর্ঘমেয়াদে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে পরিবর্তন আসলেও তাদের কাউকে কখনো ব্যাংকের হিসাব বুঝিয়ে দেননি তিনি।  
এমনকি গত আট বছরে লক্ষাধিক ডলার বিনিময় হলেও কখনো হিসাব দেননি দর্পণ কবির।  

এ নিয়ে পরিস্থিতি যখন জটিল আকার ধারণ করে এবং সাধারণ সদস্যরা নেতৃত্বের পরিবর্তন দাবি করছিলেন তখন নাজমুল আহসানকে নিয়ে কূটচাল শুরু করেন দর্পণ কবীর। সাধারণ সভায় ৫২ জন সদস্যের মধ্যে ৪৯ জন সরাসরি ভোটে ও গোপন ব্যালটে নির্বাচন দাবি করলে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ক্লাব থেকে বের হয়ে অগঠনতান্ত্রিকভাবে একটি পকেট কমিটি গঠন করেন নাজমুল আহসান ও দর্পণ কবীর। কিন্তু সেই কমিটিও এক মাস পার করতে পারেনি। তার আগেই ২২ দিনের মাথায় ভেঙে গেলো। তাহলে প্রশ্ন হলো- আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা কারা করছে? 

জানা গেছে, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে থেকে বিগত বছরগুলোকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিলেন দর্পণ কবীর। ক্লাবের নামে চাঁদা আদায় করলেও পরে তা ক্লাবে জমা না দিয়ে নিজের গল্প ও কবিতার বই এবং কবিতার সিডি প্রকাশের কাছে ব্যয় করতেন। এসব নিয়ে আগের কার্যকরী কমিটিতে প্রায়ই বাদানুবাদ হলে সবাইকে হুমকি-ধমকি দিতেন দর্পণ কবীর। প্রেসক্লাবের সভায় ইতিপূর্বে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যায়েও গড়ায়।

উল্লেখ্য, নারী সহকর্মীর সঙ্গে কর্মস্থলে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে এটিএন বাংলা ইউএসএ কার্যালয় থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চাকরিচ্যুত হন দর্পণ কবীর। বর্তমানে ট্যাক্সিক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ এবং সাংবাদিকতা পেশায় না থাকলেও দর্পণ কবীর প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন।

রিপোর্ট: ইউএস-বাংলা নিউজ, নিউইয়র্ক’র 

বাংলাদেশ সময় ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ