ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

আদি মানুষের উৎসভূমি

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
আদি মানুষের উৎসভূমি ছবি: সংগৃহিত

আদি মানুষের উৎসভূমি ইথিওপিয়া। ১৯৭৪ সালে দেশটিতে আবিষ্কৃত ৩২ লাখ বছর বয়সী অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ (ডাক নাম লুসি) এ ধারণাটিকে শক্ত করেছে।

আদি মানুষের উৎসভূমি ইথিওপিয়া। ১৯৭৪ সালে দেশটিতে আবিষ্কৃত ৩২ লাখ বছর বয়সী অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ (ডাক নাম লুসি) এ ধারণাটিকে শক্ত করেছে।



কিশোরী লুসি’র  কঙ্কাল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস ও পূর্বপুরুষের নাম-পরিচয় জানা যায়। কিভাবে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম, সেটিও শেখায় লাখো বছর মাটিচাপা পড়ে থাকা লুসি’র জীবাশ্ম।

আমাদের নিজের প্রজাতি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সরা বিবর্তিত হয়েছে এই হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ প্রজাতি থেকে। ৩৬ লাখ ৬০ হাজার বছর আগে এ হোমিনিডিন প্রজাতির উদ্ভব এবং আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস্‌ তাদের পরবর্তী ধাপ।
ছবি: সংগৃহিত
এরও অর্ধ শতাব্দী আগে ১৯২৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার টং এলাকায় পাওয়া যায় ২৮ লাখ বছর আগে বাস করা শিশুর জীবাশ্ম। ‘টং শিশু’ লুসি’র প্রজাতি হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌দের অন্তর্ভুক্ত অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস্ প্রজাতির সদস্য ছিল।

লুসি’র সময়কালেরই আরেকটি মানব প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে ইথিওপিয়ার আফার এলাকায়। লুসি ও তার পরিবারের লোকজনদের সমসাময়িক বলে প্রজাতিটির নাম দেওয়া হয়েছে অস্ট্রালোপিথেকাস ডেইরিমিডা।

ইথিওপিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও স্পেনের একদল বিজ্ঞানী যৌথভাবে আফারে ৩৩ লাখ থেকে ৩৫ লাখ বছরের পুরনো ডেইরিমিডার চোয়ালের কিছু হাড় ও দাঁত খুঁজে পান।

যার অর্থ দাঁড়ায়, ওই প্রজাতিও পৃথিবীতে বাস করতো মানুষের আদি প্রজাতির প্রাণীদের সঙ্গে।

গবেষকরা বলেন, মাটি খুঁড়ে ডেইরিমিডাদের যে প্রাগৈতিহাসিক দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, সেগুলো ছিল চার ব্যক্তি বা প্রাণীর। কিছুটা বনমানুষ, আবার খানিকটা মানুষের মতো বৈশিষ্ট্য ছিল ডেইরিমিডাদের।

ডেইরিমিডা আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের ভৌত নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জোহানস হেইল সেলাসি। তিনি বলেন, ‘আমরা দাঁত ও ওপর-নিচ চোয়ালের গঠন সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং আমরা পরিষ্কার পার্থক্য দেখতে পেয়েছি। নতুন প্রজাতিটির খুব শক্তিশালী চোয়াল ছিল’।
ছবি: সংগৃহিত
‘এদের দাঁত ছিল অতীতে পাওয়া সব হোমিনিনদের চেয়ে ছোট’।

দেহাবশেষের বয়স থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সম্ভবত এরা ছিল মানুষের চারটি আদি প্রজাতির একটি, যারা একই সময়ে জীবিত ছিল। এদের মধ্যে বেশি পরিচিত অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিস বা লুসি।

২০০১ সালে কেনিয়ায় কেনিয়ানথ্রোপাস প্লাটিওপস এবং চাদে অস্ট্রালোপিথেকাস বাহরেলগাজালি নামে আদি মানবের দু’টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সর্বশেষ ইথিওপিয়ায় ডেইরিমিডার আবিষ্কার এটিই নির্দেশ করে যে, একই সময়ে আফ্রিকা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি প্রজাতির বসবাস ছিল।

লুসিদের প্রজাতি অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিসকে এতোদিন মানুষের সরাসরি পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হতো। তবে ১৯৮৪ সালে হোমো ইরেকটাস্‌ বা ইরেক্ট প্রজাতির হোমিনিনি শিশু ‘তুরকানা বয়’ বা ‘নারিওকোটমি বয়’ এর পূর্ণাঙ্গ অববয়ব আবিষ্কার প্রমাণ করে, অস্ট্রালোপিথেকাস্‌ থেকে স্যাপিয়েন্সে পরিণত হতে মাঝের ধাপ আদি আধুনিক ইরেক্ট পার হয়েছে আধুনিক মানুষেরা।

ইরেকটাসরা পাথরের তৈরি যন্ত্রগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল। ২০১০ সালে একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেন, পাথরের অস্ত্র দিয়ে এরা শিকার করতো। লুসি এবং তার প্রজাতির প্রাণীরাও পাথর ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল এবং তারা এভাবেই মাংসকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে।

এটি এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, আফ্রিকার আধুনিক মানুষের উৎপত্তিটা ঠিক কোথা থেকে হয়েছিল। লুসির আবিষ্কার এখানে কেবল ধারণা দেয়, মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাসে ইথিওপিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু ২০০৮ সালে অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা নামে আরও একটি অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতি আফ্রিকায় পাওয়া যায়। এটি পৃথিবীতে ছিল প্রায় ২০ লাখ বছর আগে, যখন পৃথিবীতে মনুষ্য প্রজাতির প্রথম উদয় হয়। প্রথম টং শিশুটিও একই জায়গা থেকে এসেছে। যা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আফ্রিকাই আমাদের জন্মস্থান।

এরই সূত্র ধরে পরে আবিষ্কৃত হয়েছে আর্ডিপিথেকাস প্রজাতির আদি মানুষ।

লুসি যেই সময়ের মানব প্রজাতি, সেই সময়ে পৃথিবীতে আরও অনেক প্রজাতি ছিল। যাদের সম্পর্কে আমরা এখনো জানতে পারিনি।

জোহানসনের মতে, ‘আমাদের বিবর্তনের গল্পটা পুরোপুরি জানার এখনো অনেক বাকি আছে। আরও অনেক প্রজাতি আছে, যারা আমাদের এ পৃথিবীর বুকেই কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে, আবিষ্কারের অপেক্ষায়’।

ড. হেইল সেলাসি বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক জীবাশ্ম খুঁজে পেতে হবে, যার মাধ্যমে মানুষের বিকাশের পথটি বোঝা আরও স্পষ্ট হবে’।

‘আমাদের ক্রমবিকাশের পদ্ধতিটি নিতান্তই সরল ছিল না। মানব বিবর্তনের এ রাস্তায় অনেক বৈচিত্র্য এসেছে কালের পরিক্রমায়। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দ্বারা এটি বোঝা যায় যে, বিভিন্ন প্রজাতির বসবাস ছিল পৃথিবীতে, যারা এখন বিলুপ্ত’।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।