ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

খাবারের খোঁজে গাছ থেকে মাটিতে, এরপর পৃথিবীর নেতৃত্বে

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
 খাবারের খোঁজে গাছ থেকে মাটিতে, এরপর পৃথিবীর নেতৃত্বে ছবি: সংগৃহীত

৩২ লাখ বছর আগে মাটিতে নেমে আসে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌। এর আগে গাছে বসবাস করতো শিম্পাঞ্জি থেকে মানবে বিবর্তিত দ্বিপদ প্রাণীটি।

৩২ লাখ বছর আগে মাটিতে নেমে আসে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌। এর আগে গাছে বসবাস করতো শিম্পাঞ্জি থেকে মানবে বিবর্তিত দ্বিপদ প্রাণীটি।

১৯৭৪ সালের ২৪ নভেম্বর পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় একদল বিজ্ঞানী হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌ প্রজাতির একটি কিশোরীর জীবাশ্ম খুঁজে পান। আবিষ্কারক দলের প্রধান জীবাশ্ম নৃ-বিজ্ঞানী ডোনাল্ড জোহানসন কিশোরীর নাম দেন লুসি। ছবি: সংগৃহীতলুসিকে খুঁজে পাওয়ার পর নৃ-বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানান, অস্ট্রালোপিথেকাস্‌রাই ছিল আমাদের আদিম ও সবচেয়ে পুরনো মানুষ। আর লুসির উত্তর পুরুষ হোমো ইরেক্টাস আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের সরাসরি পূর্বপুরুষ।

লুসির আকৃতি ছিল মানুষ ও বানর প্রজাতির মাঝামাঝি। তার শরীর ও মাথার গঠন ছিল বনমানুষের মতো। কিন্তু লুসি আমাদের মতো করেই হাঁটতো। তবে তার জীবনের কিছু সময় সে শিম্পাঞ্জির মতো করে গাছে কাটিয়েছে এবং এক জাতীয় প্রাণী এখনো এভাবে দিন কাটায়।

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়ামের ক্রিশ স্ট্রিঞ্জার বলেন, লুসির মাটিতে নেমে আসার আসল উদ্দেশ্য ছিল, খাদ্য খোঁজা।

লুসির দাতগুলো ছিল পরিণত। হাড়গুলো ছিল নিরেট। ধারণা করা হয়, সে খুব অল্প বয়সে (আনুমানিক ১২ বছর) মারা গিয়েছিল। এদের খাদ্য ও দাঁতের ওপর গবেষণা করে বোঝা যায় যে, অস্ট্রালোপিথেকাসের খাবার ছিল পরিবর্তনশীল। তাদের খাবারের বেশিরভাগ ছিল গাছ থেকে সংগ্রহ করা। ছবি: সংগৃহীতঘাস এবং বীজ ছিল তাদের প্রাত্যহিক খাবার। ধারণা করা হয়, পরে তারা মাংস খেতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। খাদ্যাভ্যাসের এ পরিবর্তন তাদের জীবনের সীমাকে বিস্তৃত করেছিল। তাদের চলাচল পরিবর্তনশীল পরিবেশে আরও সহনশীল হয়ে উঠেছিল।

জার্মানির লেপজিংয়ের ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট অব ইভিউলুসনারির নৃ-বিজ্ঞানী ফ্রেড স্পুর বলেন, ‘লুসির প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল। কর্কশ শব্দ করে বাদামও সংগ্রহ করতো তারা। তবে পাথরের টুকরোগুলোকে ছুরিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়নি’।

সমসাময়িক যুগের আরও জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণার পর নৃ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন, লুসিরা একটি সামাজিক দলে বসবাস করতো। তাদের সমাজ পুরুষশাসিত হলেও বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। পুরুষরা এখানে সুস্পষ্টভাবে নারীদের তুলনায় আকৃতিতে বড় ছিল। সেখানে একজন পুরুষ একাধিক নারীর ওপর কর্তৃত্ব করত।

গরিলাদের সঙ্গে এদের জীবন ব্যবস্থার মিল পাওয়া যায়।

২০০৬ সালে অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌ প্রজাতির প্রাণীগুলোর গবেষণায় নতুন করে জানা যায়, আমাদের মস্তিষ্ক পরিণত হতে যে সময় লাগে, তার চেয়েও কম সময়ে এদের মস্তিষ্ক পরিণত হয়।

স্ট্রিঞ্জার বলেন, পরবর্তী সময়ে ওই সময়ের আরও জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আবিষ্কার করা হয় কেনিয়ানথ্রোপাস প্লেটিওপাস্‌, আরডিপিথেকাস্‌ ও অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা প্রজাতিগুলোকে। এর মধ্যে প্লেটিওপাস্‌রা লুসিদেরও আগের প্রজাতি, যারা ৩৫ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে ছিল।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টিম হোয়াইট বলেন, ‘অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌ প্রজাতির প্রাণীরা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। আমরা জানি, জিনগতভাবে আমরা শিম্পাঞ্জির কাছাকাছি। আমাদের শেষ মিলগত পূর্বপুরুষের সঙ্গে আমাদের ভাগাভাগি হয়েছে মোটামুটি ৬০ লাখ বছর আগে। আমাদের জ্ঞানের এই ফাঁকা স্থান লুসি পূর্ণ করে দিয়েছিল’।

‘এ সময়ে আরও অনেক মনুষ্য প্রজাতি ছিল যারা পাশাপাশি বাস করতো এবং নিজেরাই ছিল প্রজননক্ষম। তবে লুসির প্রজাতিটি ছিল সবচেয়ে ভালো উদাহরণ, আমাদের পূর্বপূরুষ আসলে কারা ছিল তা বোঝার জন্য’।

লুসিদের গাছ থেকে নামা ও দুই পায়ে হাঁটতে শুরু করা, নতুন নতুন শিকার কৌশল এবং সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের ধারাবাহিক বিবর্তনে আসে আধুনিক মানব প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স, পর্যায়ক্রমে যাদের দখলেই চলে যায় পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব।

লুসির আবিষ্কারক ডোনাল্ড জোহানসন বলেন, ‘আমরা হোমো স্যাপিয়েন্সরা মানব প্রজাতি হিসেবে অনেক ভাগ্যবান। কেননা, আমাদের বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক উন্নত এবং এতো বিবর্তন সত্ত্বেও আমরা টিকে আছি’।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬

এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।