ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

শিম্পাঞ্জি-মানুষের ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
শিম্পাঞ্জি-মানুষের ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা ছবি সংগৃহীত

প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর আগে প্রাইমেট (গ্রেট এপ বা মহান বানর শিম্পাঞ্জি) থেকে আলাদা হয়ে পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের ধারায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে প্রথম মানব (হোমো জেনাস) জন্ম নেয় পৃথিবীতে, যাদেরকে অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির বলে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। ৩৬ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস প্রজাতির মানবরা আমাদের প্রথম ও আদি পূর্বপুরুষ।

প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর আগে প্রাইমেট (গ্রেট এপ বা মহান বানর শিম্পাঞ্জি) থেকে আলাদা হয়ে পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের ধারায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে প্রথম মানব (হোমো জেনাস) জন্ম নেয় পৃথিবীতে, যাদেরকে অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির বলে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। ৩৬ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস প্রজাতির মানবরা আমাদের প্রথম ও আদি পূর্বপুরুষ।

তাদের পরের ধাপ আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস বিবর্তিত হয়ে আমাদের প্রজাতির আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের উৎপত্তি।    

বিবর্তনের নানা পর্যায়ে হোমো হ্যাবিলিস, হোমো রুডোলফেনসিস, হোমো ইরগেস্টার, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেনসিস বা নিয়ান্ডারথাল, হোমো প্যারানথ্রোপাস্‌ বোইসেই, কেনিয়ানথ্রোপাস প্লাটিওপস, অস্ট্রালোপিথেকাস বাহরেলগাজালি, ডেইরিমিডা, হোমো সোলোয়েনসিস, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস, হোমো ডেনিসোভান, আদি আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সসহ বিভিন্ন প্রজাতিরও লাখ লাখ বছরের জীবাশ্ম আফ্রিকা, আরব উপদ্বীপ, সাইবেরিয়া ও ইউরেশিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে।

সেগুলোসহ সবচেয়ে সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত হোমো নালেদিদের নিয়ে গবেষণায় মানব বা হোমোদের বিবর্তনের ইতিহাস জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা। একটির পর একটি প্রজাতি আবিষ্কারে পূরণ হচ্ছে দুই প্রজাতির মাঝের মিসিং লিঙ্কও।  

তবে যে শিম্পাঞ্জি বা পিগমি শিম্পাঞ্জি (বনোবো) থেকে আলাদা হয়েছিলাম আমরা, তাদের পরের ধাপ বা মানুষ হয়ে ওঠার আগের ধাপ কি ছিল?- তা জানতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে গবেষকদের। কারণ, শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের মাঝের ধাপটিতে রয়ে গেছে ১৫ থেকে ২৫ লাখ বছরের একটি বড় শূন্যতা।

বিজ্ঞানীরা বানর ও আমাদের মধ্যে এ ‘মিসিং লিঙ্ক’ খুঁজে চলেছেন আজও। কারণ, শিম্পাঞ্জিরা (বা অন্যান্য বনমানুষ) মানুষের মধ্যে অভিব্যক্ত হয়নি। উভয়েই আমরা একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে আবার একটি সাধারণ ধাপ অতিক্রম করেছিলাম।

শিম্পাঞ্জি ও বনোবোদের সঙ্গে আমাদের জেনেটিক সিকোয়েন্স সম্পর্কে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন,  আমাদের ও এসব নিকট আত্মীয়দের সাধারণ পূর্বপুরুষরা প্রায় ৯৯ শতাংশ জিন শেয়ার করে আলাদা হয়ে যায়। আর সেখান থেকে আমাদের বংশ বিবর্তনের ফাঁকা ধাপটিতে মানুষের মতো আরো প্রজাতি রয়েছে। শিম্পাঞ্জি ও বনোবোদের থেকে অন্যান্য মহান বনমানুষ যেমন বিভক্ত হয়, এরাও তেমনটিই ভাগ হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। তাদেরও হাজার হাজার জীবাশ্ম হয়তো অনাবিষ্কৃত আছে।

কুকুর প্রজাতির সঙ্গে নেকড়ের বিবর্তন বা শঙ্করায়নের মতোই অসাধারণ পর্যায় ছিল সেটি, যা বিবর্তনও হতে পারে, আবার মিউটেশনও হতে পারে।

আমরা আধুনিক মানুষেরা হোমো অভিব্যক্তি চালিয়ে যাচ্ছি বটে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের প্রজাতি, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জীববিদ্যা উদ্ভাবিত তথ্য-প্রমাণ নিয়েই চলছি আমরা। বানরসহ অন্যান্য প্রাণীর অভিব্যক্তি থেকে বিশেষত তাদের এখনকার পরিবেশের বিশাল পরিবর্তনের ধারাটিও মানুষের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণে জানা জ্ঞানই আমাদের সম্বল।

উভয়ের জিনগত ও জীবাশ্মের সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রমাণ দেয় যে, মানব বিবর্তন আফ্রিকায় ঘটেছিল। বুদ্ধিমান মহাজাতি হোমো দক্ষিণ অথবা পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম আবির্ভূত কি-না, তা এখনও অস্পষ্ট। যে কারণ ও পরিবেশ আমাদের প্রজাতিকে আফ্রিকা ছেড়ে সারা পৃথিবীতে অভিযোজিত হতে সাহায্য করেছে কিংবা যে জেনেটিক মেকআপ ও আকৃতি আমরা আজও আমাদের সঙ্গে বহন করে চলেছি, সেটি কোথায় কিভাবে পেয়েছিলাম সে দীর্ঘ গল্পটির প্রথম অধ্যায় থেকে আমরা এখনও বঞ্চিত।

মানব বংশ সাত মিলিয়ন বছর আগের হলেও বনমানুষের বংশ ১৩ মিলিয়ন বছর আগে থেকে পৃথিবীতে আছে। আমাদের প্রজাতির নিকটতম অবিসংবাদিত সদস্য অস্ট্রালোপিথেকাসরা নিয়মিতভাবে সোজা হয়ে হাঁটতে শেখে, যার সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ লুসির প্রজাতি ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস। লুসির বয়স ছিল ৩.২ মিলিয়ন বছর। আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত আমাদের হোমো মহাজাতির প্রাচীনতম পাথরের হাতিয়ারের বয়স ৩.৩ মিলিয়ন বছর বয়সী, যা  অস্ট্রালোপিথেকাসরা তৈরি করেছিল। অস্ট্রালোপিথেকাসদের মতোই আদি হোমো প্রজাতি ইরেক্টাস ও হ্যাবিলিসরাও দুই পায়ে হাঁটতো। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো লুসির বা হোমোদের প্রথম ফর্ম খুঁজে পাননি।

আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রথম আগুনের আবিষ্কার করে ১.৮ মিলিয়ন বছর আগে। এরপর রান্না করা মাংস মানুষের মস্তিষ্কের নাটকীয় বিবর্তন ও প্রসার ঘটায়, আরও শক্তি লাভ করে, বড় মস্তিষ্ক হয়। ধারাবাহিকভাবে আরও ক্ষেত্রজ্ঞ হাত, জটিল ভাষা, কৃষি, শিল্প, উন্নয়ন অর্জন করে, যা ১ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের প্রজাতি স্যাপিয়েন্সের আদি প্রজাতির আবির্ভাবের পূর্বশর্ত ছিল।

এসব কোথায় ঘটেছিল, কেন এবং এটি কোন ঘটনা থেকে কোথায় যাচ্ছিল?- জানতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

জিন ও জীবাশ্ম প্রমাণ করে যে, প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে স্যাপিয়েন্সরা আফ্রিকার বাইরে গিয়ে পুরো বিশ্বের নেতৃত্ব দখল শুরু করে। জেনেটিক প্রমাণেও পাওয়া গেছে যে, আফ্রিকা ছাড়ার পর শিগগির তারা নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ইন্টারব্রিড হয়ে এশিয়ার রহস্যময় মানব প্রজাতি ডেনিসোভানদের জন্ম দেয়। হোমো স্যাপিয়েন্সই এখন পৃথিবীতে মানুষের একমাত্র প্রজাতি। কিন্তু মাত্র ৩০ হাজার বছর নিয়ান্ডারথাল ও ১২ হাজার বছর আগে বামুন মানব ফ্লোরেসিয়েন্সিসরা চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেটি  সত্য হয়েছে।

এখানে বাস্তব প্রশ্ন হল, কারা ছিল আধুনিক শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষ, যারা উভয়ের এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত জনক? আমরা এখনো জানি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।