ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

হারিয়ে যাচ্ছে কুসংস্কারের শিকার ‘অশুভ প্রাণীরা’

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭
হারিয়ে যাচ্ছে কুসংস্কারের শিকার ‘অশুভ প্রাণীরা’ হারিয়ে যাচ্ছে কুসংস্কারের শিকার অশুভ প্রাণীরা

অনেকেই আমাদের চারপাশের অনেক প্রাণীকে অস্বাভাবিক বলে মনে করে ভয় পান। এমনকি শহরের বাসিন্দারাও কখনো কখনো একটি বাদুড় দেখামাত্র সেটিকে জঘন্য বলেন, একটি কালো বিড়াল তাদের পথ অতিক্রম করলে অশুভ ঘটনা ঘটবে বলে মনে করেন।

প্রাণীদের সম্পর্কে মানুষের এ সমস্ত কুসংস্কার তাদের জন্য ক্ষতিকর পরিণতি বয়ে আনে বলে জানিয়েছেন লেখক ও প্রাণী অধিকার কর্মী মার্গো ডেমেলো।

তার মতে, অশুভ বলে বিবেচিত প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করা ছাড়াও তাদের বাসস্থান ধ্বংস করেন অনেকে।

ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্তও হয়ে গেছে।

এমনকি অনেক নারীকেও এক সময় অশুভ ডাইনি মনে করে হত্যা করা হতো। ডেমেলো বলেন, ‘এটিও অসাধারণ ও হাস্যকর বলে মনে হয়। কিন্তু নারীরাও সেখানে ‘ডাইনি’ বলে মামলা হওয়ার পর আদালতে তারা পরীক্ষিত হয়েছিলেন। এবং তাদের প্রতিবেশীদের ভুতুড়ে সাক্ষ্যে দোষী সাব্যস্ত হন’।

মধ্যযুগীয় সাহিত্য ও শিল্প এবং পৌরাণিক কাহিনী অনেক পশু-পাখিকে নানা অশুভ প্রতীকে চিহ্নিত করা এ কুসংস্কারের মূল উৎস বলে মনে করেন অধ্যাপক ব্রিগিট রেসল। তিনি বলেন, নিশাচর প্রাণীদের সম্পর্কে মজ্জাগতভাবে তখনকার মানুষের অদ্ভুত সব ধারণা ছিল।

‘প্রাক আধুনিককালে অন্ধকার রাতকে অনেক বেশি ভীতিকর কিছু বলে মনে করা হতো। সেখান থেকে প্রাণীদের সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক ধারণা এসেছে, যা কেবল আমাদের নিজস্ব বদভ্যাস থেকেই তৈরি। আবার রাতে দেখার সুবিধার্থে নিশাচর প্রাণীদের চোখ জ্বল জ্বল করাও তাদেরকে আতঙ্কজনক বলে চিহ্নিত করে’।

আবার এসব বৈশিষ্ট্য ছাড়াও নির্দোষ প্রাণীদেরও বদনাম আছে। যেমন প্রজনন মৌসুমে টোডস্‌ ব্যাঙের মাত্রাতিরিক্ত যৌন কার্যকলাপকে ধর্মীয় মধ্যযুগের সময় অশুভ প্রাণীদের আচরণের সঙ্গে যুক্ত করা হতো, যার কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন।

মার্গো ডেমেলো অনেক আগেকার অপছন্দনীয় প্রাণীদের মধ্যে আরেকটি বিস্ময়কর উদাহরণ দিয়েছেন। ১৮ শতকে সুইডেনের লোকেরা বিশ্বাস করতেন, খরগোশ নিজেকে ডাইনিতে রূপান্তরিত করতে পারে। যা প্রতিবেশীদের গরুর দুধ পান করে যায়। অথচ, এসব নিরীহ-শান্ত প্রাণীর কারো ক্ষতি করারই ক্ষমতা নেই।

‘আমাদের নিজের ব্যর্থতার কারণে এসব প্রাণীকেও প্রাণীর মন্দ বৈশিষ্ট্যের বাহন হিসেবে ব্যবহার করছি’- ধারণা ডেমেলোর।

কিছু সংস্কৃতিতে এখনও খুব গভীরভাবে পশুদের মন্দ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। এর জোরালো উদাহরণ মাদাগাস্কারের একটি বিরল লেমুর আয়ে-আয়ে, যা আদিবাসীদের কুসংস্কারের শিকার। তাদেরকে ভুত বলে মনে করায় নির্বিচার শিকারে পরিণত হচ্ছে রাতে সবচেয়ে সক্রিয় আয়ে। ক্ষুদে প্রাণীটি মূল ভূখণ্ডে বিলুপ্ত না হলেও মাদাগাস্কারের জার্সি দ্বীপের পূর্ব বনে সীমিত সংখ্যায় পৌঁছে গেছে। এমনকি গ্রামবাসীরা তাদেরকে হত্যা করে ঝুলিয়ে প্রদর্শনও করছেন।

স্থানীয়দের বিশ্বাসের বিধ্বংসী প্রমাণ হিসাবে আয়ে প্রজাতিটি বর্তমানে আইইউসিএনের বিপন্ন প্রাণীদের লাল তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভা সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রামবাসীকে এটিকে রক্ষায় সচেতন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।