ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর

১৯৯৭ সালে উত্তর স্পেনের সিয়েরা দে আতাপুরেকা প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে নতুন একটি মানব প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। একটি পর্বতের সিঙ্কহোলের মধ্যে একটি ছোট, সমতল মুখবিশিষ্ট খুলির টুকরার পাশাপাশি চোয়ালের কিছু হাড় আবিষ্কৃত হয় সেবার।

এ দেহাবশেষ একটি অজানা হোমিনিন প্রজাতির বলে চিহ্নিত করে এর নামকরণ করা হয় হোমো অ্যান্টেসেসর।

অ্যান্টেসেসরদের সঙ্গে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেকটাসের মিল থাকলেও পরবর্তী ধাপ হোমো হাইডেলবার্গেনসিসদের কোনো মিল নেই।

প্রথমে এটিকে আমাদের সমসাময়িক প্রজাতি আদি নিয়ান্ডারথালের জীবাশ্ম ভাবা হলেও পরবর্তীকালে একে একটি আলাদা প্রজাতি হিসেবেই মেনে নেওয়া হয়।

২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে হাপিসবারঘে ইউরোপের প্রাচীনতম কিছু মানব পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোও গোমো অ্যান্টেসেসরদের বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর

গবেষণা শেষে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃ-তত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিংগার  জানান, প্রথম অভিবাসিত মানব প্রজাতি হিসেবে ১৮ লাখ বছর আগে যে হোমো ইরেকটাসরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে ইউরোপে এসেছিল, তারাই বিবর্তিত হয়ে সাড়ে আট লাখ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল হোমো অ্যান্টেসেসর হিসেবে। বিবর্তনের ধারায় সাড়ে পাঁচ লাখ বছর আগে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যায় অ্যান্টেসেসররা।


স্ট্রিংগার বলেন, ‘আমরা ৭ লাখ বছর  বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষে ভাগ হয়ে যাই। আর আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সদের জন্ম দুই লাখ বছর আগে। তাই অ্যান্টেসেসরদের সঙ্গে আমাদের দেখাই হয়নি। কিন্তু বিষ্ময়করভাবে তাদের মুখ ছিল আমাদের ও নিয়ান্ডারথালদের মতোই একইসঙ্গে আদিম ও আধুনিক’।

ফলে হোমিনিন এই প্রজাতিটিকে আধুনিক মানুষের সহোদর বলে চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণা এটাও প্রমাণ করছে যে, আমাদের মুখভঙ্গি সব সময়ে আধুনিক হতে পারে না। আমাদের হাড় ক্রমাগত নবায়ন ও পুনর্গঠিত হয়।

জার্মানির লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের জাঁ জ্যাক হাবলিন ও তার সহকর্মীরা সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি শিশু হোমো অ্যান্টেসেসর প্রতিমূর্তি গড়েন।

সেটি নিয়ে গবেষণা শেষে হাবলিন বলেন, ‘তাদের মুখের আকৃতির সঙ্গে আধুনিক মানুষের চেয়ে বেশি মিল নিয়ান্ডারথালদের। কিন্তু প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ান্ডারথালদের অনুরূপ নয়। বরং এর শোষণ হাড় আধুনিক মানুষের চোয়ালের শ্বাদন্তের মতোই। আধুনিক মানুষের নাকের তলদেশ ও ওপরের চোয়ালের অধিকাংশ এলাকা আবার গরিলা জাতীয় প্রাণীর বিবর্তিত রূপ, যা চর্বণাস্থি নামে পরিচিত। অ্যান্টেসেসরেরও হাড়ের প্যাটার্নও চর্বণাস্থির মতোই ছিল’।  


আরেক গবেষক ল্যাকরুজ বলেন, ‘এতোসব মিল বিবর্তনশীল আধুনিক মানুষের চারিত্রিক মুখের পরিবর্তনের জন্য হোমো অ্যান্টেসেসরের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এ প্রজাতি মানুষের বিকাশের প্রক্রিয়া ছাড়াও ৮ লাখ বছর আগের কিছু মানুষের অঙ্গসংস্থান বিদ্যার প্রমাণও দেখায়’।

মানুষের আরেক বিলুপ্ত সহোদর
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে স্ট্রিংগার ও অন্য নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেখান যে, হোমো অ্যান্টেসেসরের মতো আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আরও আবিষ্কৃত হবে। আমাদের প্রজাতির সঙ্গে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের চেয়ে নিয়ান্ডারথালদের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে প্রজাতিটি বেশি চিহ্নিত হতে পারে।


বিজ্ঞানীরা এমনকি নতুন বিবর্তনীয় গাছেরও প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন, যেখানে বলা হবে, আমাদের প্রজাতি হোমো ইরেক্টাস নয়, হোমো  অ্যান্টেসেসর থেকে বিবর্তিত হয়েছে। এদিকে হোমো হাইডেলবার্গেনসিসও প্রায় ৫ লাখ বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের নেতৃত্বে চলেনি এবং স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছে।  

যদি তা সত্যি হয়, আমরা ও আমাদের পরিবারবর্গের সহোদরদের মধ্যে বিবর্তনীয় ধারার অনেককিছুও অনেক ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এএসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।