ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

সমুদ্রের নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী মায়েরা

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
সমুদ্রের নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী মায়েরা অরকা তিমি শাবকেরা জন্মের পরও এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত মায়ের আশ্রয়ে থাকে। ছবি: সংগৃহীত

মহাসাগরগুলোতে অক্টোপাস ও হাঙ্গর থেকে অরকা তিমি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কঠিন সাহসী মায়েদের বাস, যাদের প্রজননকাল দীর্ঘ হয়ে থাকে। সন্তান জন্মদানের পরও দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালনে তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষাও বেশ চমকপ্রদ।

 

প্রজননকালসহ সন্তান লালন-পালনের দীর্ঘতম এ সময় কখনও কখনও রেকর্ডও গড়েছে। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় গ্রানেলডোন বোরোপাশিসা প্রজাতির একটি গভীর সমুদ্রের অক্টোপাস সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানান, সে ৫৩ মাস ধরে তার ডিমের যত্ন নিয়ে সন্তানকে পৃথিবীতে আনে।

 

একটি অক্টোপাস মা তার ডিমের যত্ন নেওয়ার সময় ও জন্মের পর সন্তানদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করে এবং নিশ্চিত করে যেন, তারা যথেষ্ট অক্সিজেন পায়।  

গবেষকদের মতে, গভীর সমুদ্রের ঠাণ্ডা ও নিম্ন তাপমাত্রায় বাসস্থান হওয়ায় অক্টোপাসটিকে এই দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। কিন্তু যে প্রজাতিগুলোর অক্টোপাস মায়েরা অগভীর উষ্ণমণ্ডলে থাকে, তারা তাদের ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফুটাতে মাত্র ১ থেকে ৩ মাস সময় নেয়।  

গভীর সমুদ্রে সাবমেরিনে ভ্রমণের সময় গবেষকরা দেখেন যে, ওই গ্রানেলডোন বোরোপাশিসা অক্টোপাসটির অবস্থার অবনতি হয়েছে, তার রঙ ম্লান হয়ে গেছে এবং চোখটি মেঘলা হয়ে উঠেছে। তারা বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি এক কঠিন মা, সাড়ে চার বছর ধরে চালানো তার প্রজননকাল অপরিসীম ধৈর্য ও কৃতিত্বের ফল।  

হাঙ্গরের গর্ভাবস্থার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।  ছবি: সংগৃহীতগবেষকদের মতে, এ কারণেই জীবনের সেরা শুরু হয় তাদের। তারা সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে উন্নত অক্টোপাস, যা তাদের বেঁচে থাকতে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।

পৃথিবীর দীর্ঘতম গর্ভধারণকারী অন্য প্রাণিগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি সাধারণ স্কুডিয়াস আন্টেটিস প্রজাতির হাঙ্গর। ডগফিস নামে পরিচিত এ হাঙ্গরের গর্ভাবস্থার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কারণ, মায়েরা বাচ্চাদের জন্মদানে গড়ে অর্ধডজন পর্যন্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।  

তবে দুর্ভাগ্যবশত, দীর্ঘ প্রজননের এ সময়কাল ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির তালিকায় ফেলে দিয়েছে ডগফিশকে। কারণ, দলবেধে থাকা এ হাঙ্গরের বেশিরভাগ প্রায়ই মৎস্যজীবীদের শিকারে পরিণত হয়। ফলে নিম্ন প্রজনন হারের প্রাণির তালিকায়ও রয়েছে এটি। আইইউসিএনের ধারণা, গত ৭৫ বছরে বিশ্বজুড়ে স্কুডিয়াস আন্টেটিসের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের মতো কমে গেছে।

অক্টোপাস মা তার ডিম, ভ্রুণ ও জন্মের পর সন্তানদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা এবং যথেষ্ট অক্সিজেন পাওয়া নিশ্চিত করে।  ছবি: সংগৃহীতআরেকটি হাঙ্গর মেরুদণ্ডী প্রাণিদের মধ্যে সর্বাধিক গর্ভাবস্থার জন্য রেকর্ড ভঙ্গকারী হতে পারে। সমুদ্রের ৫০০ থেকে ১ হাজার মিটার গভীরে বসবাসকারী ক্ল্যামিডোডেলাস অ্যাঙ্গুইনিয়াস প্রজাতির এ ফ্রিল্ড হাঙ্গরের গর্ভাবস্থার সময়কাল সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত হয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম কানাডা ও উত্তর-পশ্চিমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যালিশ সাগরের বাসিন্দা অরকা তিমির জীবনযাত্রা আরও আশ্চর্যময়। নারী নেতৃত্বে চলা অরকা গোষ্ঠীর তিমি শাবকেরা জন্মের পর দীর্ঘদিন মায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়েরা ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানো শেখায় এবং খাবার যোগাড় করে দেয়। এমনকি নারীদের তুলনায় পুরুষের ২৫ শতাংশ বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হওয়ায় পুরুষ শাবকেরা এমনকি কয়েক দশক ধরে মায়ের সঙ্গী হয়।

গবেষকরা বলছে, পৃথিবীর মহাসাগরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। প্রত্যেক বাসিন্দার বিশেষ বাসস্থান, স্বতন্ত্র আচরণ এবং সামাজিক কাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে ওই মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের দীর্ঘকাল ধরে জন্ম দেওয়া ও যত্ন নেওয়ার যে সুকঠিন দায়িত্ব পালন করে, তা সত্যিই ব্যতিক্রম, চিত্তাকর্ষক ও অনুকরণীয়। এর মাধ্যমে তারা উচ্চতর জীবনযাত্রার দক্ষতা অর্জন করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে তাদের জিনগুলোকে আরও বেশি স্থানান্তর করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।