ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রী কী এভাবে বলতে পারেন?

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১২
প্রধানমন্ত্রী কী এভাবে বলতে পারেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে মাঝে তার সরকারের আমলে সৃষ্টি করা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে ইচ্ছে করে! তার কথা এমন সাতদিন বন্ধ রাখলেই নাকি লোডশেডিং নিয়ে সমালোচনা বন্ধ হয়ে যাবে! ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান নির্বাহীর মুখে এমন কথা শুনে চমকে যেতে হয় বৈকি! এটি কী বেশি কথা অথবা বেশি বক্তৃতার কুফল? প্রতিদিন এমন একটা বক্তৃতা দিতেই হবে এমন কে কাকে হাতে পায় ধরেছে? যা একটি সরকারের পক্ষে করা সম্ভব না, তা একজন সরকারপ্রধান কেন বলবেন? বিদ্যুতের প্রোডাকশন এ সরকারের আমলে বেড়েছে এটি যেমন সত্য, পাল্লা দিয়ে চাহিদাও বেড়েছে। চুরি বন্ধ হয়নি।

এর সঙ্গে আমাদের দেশের বিতরণ ব্যবস্থা সহ নানাকিছু ত্রুটিপূর্ণ।

এই তো সেদিন আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম বিদ্যুৎ পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টাকে দায়ী করে বলেছেন, তার অদক্ষতার জন্যেই বিদ্যুৎ সংকটের সুরাহা হচ্ছে না! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে কথা বললেন না। তার উপদেষ্টা-মন্ত্রী এদের কারও কোথাও কোন সমস্যা নেই। এরা সবকিছু এত ভালো(!) চালাচ্ছেন যে, দেশের সবকিছুতে দুধের নহর বইছে! যত দোষ সব পাবলিকের! কারণ এরা চোখ থাকতে অন্ধ! বাড়তি বিদ্যুৎ চোখে দেখে না! এক-আধটু লোডশেডিং হলেই খামোখা চিল্লায়! এখন প্রধানমন্ত্রীর মন চায় গত নির্বাচনে তার ভোটার দুষ্ট পাবলিকের আক্কেল ফেরাতে অন্তত সাতদিন তার আমলে যোগ হওয়া বাড়তি বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে! ট্রাই করে দেখবেন নাকি প্রধানমন্ত্রী?

আমাকে একবার একজন একটি অটোগ্রাফ লিখে দিয়েছিলেন, ‘যে যাহা করে তার একটি সুন্দর পরিণতি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়’। অর্থাৎ আপনার কাজটি যদি ভালো ও সফল হয়, তাহলে প্রশংসার শেষ থাকবে না। অসফল অথবা আধা খেচড়া হলে বদনামের শেষ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুতের বিষয়টিও সে রকম। কারণ ইনাদের ভোটের সময় কে কিভাবে কী বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন, তখন আর কোনও হুঁশ-জ্ঞান থাকে না! গত নির্বাচনের আগে কোনও একটি বক্তৃতায় কী শেখ হাসিনা কোথাও বলেছেন, বিএনপি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করে নি? আমরা ক্ষমতায় যেতে পারলে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো!

উনিতো তখন সব করে দেবার কথা বলে দিয়েছিলেন! ক্ষমতায় আসার পর সব সরকারের মতো এই সরকারেরও অনেকদিন বক্তব্য ছিল, বিএনপি সব খেয়ে ফেলেছে, দেশ কানা-ফোকলা করে ফেলেছে! এরপর যখন কুইক রেন্টাল সহ বিদ্যুতের অগ্রাধিকার নানা ব্যবস্থা নেয়া শুরু হলো তখন বলা হয়েছে, বছর তিনেকের মধ্যে এসবের সুফল পেতে শুরু করবে দেশের মানুষ। লোডশেডিং শব্দটা চলে যাবে জাদুঘরে! বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হলো ঠিক, কিন্তু দামের কথা মাথায় রাখা হলো না। এখন বাড়তি দাম সামাল দিতে গিয়ে নিত্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে, আর সঙ্গে চড়ছে বাজার। বিদ্যুতের অভাবে বসে যাচ্ছে চালু শিল্প-কারখানাও। বসে যাচ্ছে সেচযন্ত্র। এসবের যোগফল আগামী নির্বাচনে সরকারকে কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না। কিন্তু এখন খোদ প্রধানমন্ত্রীর বয়ানে এ রকম কথা বলা হচ্ছে কেন? কত কত চাহিদা, কত উৎপাদন, কত ঘাটতি, প্রতিদিন চাহিদা কত বাড়ছে, এর সবকিছু হিসাব করে কথা বলা উচিত ছিলো না?

সরকারের নানাকিছুতে এখন শুধু অসহিষ্ণু ভাবটা প্রকাশ পাচ্ছে বেশি! প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ কথাতেও এর প্রমাণ আছে। সবকিছুতে আক্ষেপ! এত কাজ করছি, এত কাজ করলাম, কেউ কোন প্রশংসা করছে না, মিডিয়া যা খুশি সত্যমিথ্যা লিখছে, ইত্যাদি! কাজ করছেন, এটা উনাদের শপথ। কাজ করার কথা বলে ভোট নিয়েছেন। কাজ ভালো করলে পরবর্তী নির্বাচনে পাবলিক এর ইনাম ঠিকই দেবে। পাবলিকের ভালো না লাগলে দেবে না। এটা সোজা হিসাব। কে কী বললো-লিখলো কী লিখলো না তাতে কিছু যায় আসে না। পাবলিক সন্তুষ্ট হয়ে পক্ষে থাকলেই হলো। পাবলিক গত নির্বাচনে তার রেডিমেট ভোট পুরোটাই দিয়েছে। বিদ্যুৎ সহ সবকিছুতে রেডিমেট সবকিছু পুরোটা পাবার আশাতেই দিয়েছে। আংশিক বা এক চিমটে বিদ্যুৎ, এক চিমটি লোডশেডিং এমনটা আশা করে তো ভোট দেয়নি। অতএব পাবলিককে জব্দ করতে পাবলিকের বিদ্যুৎ সাতদিন বন্ধ রাখতে যে মন চায়, এসব কথাবার্তার রেজাল্ট কিন্তু ঘৃতাহুতির সৃষ্টি করবে। কারণ পাবলিক কেন একা একা কষ্ট করবে? একটা দেশের নেতারা চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। দেশের মানুষকে অনেক কিছুতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। সে রকম নেতা দেশে থাকলে বিদ্যুতের ব্যাপারেও মানুষকে পরিস্থিতির সঙ্গে  শেয়ার করানো যেত। যদি দেখা যেত প্রধানমন্ত্রীও একই পরিস্থিতির শিকার। লোডশেডিং’এর কারণে গণভবনও অন্ধকারও হয়! যদি দেখতো শুধু তারা না, লোডশেডিং’এর নিত্য শিকার হয় মন্ত্রিপাড়া, বিরোধীদলের নেত্রীর গুলশানের বাসা এবং গুরুত্বপূর্ণরা, তাহলে তো পরিস্থিতি সবে মিলেমিশে শেয়ার করার বিষয় আসতো! এমন নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থায় রেখে,আলোকোজ্জ্বল-শীতাতপ রেখে পাবলিককে এমন ঢালাও নসিহত করার রেজাল্ট আখেরে কী হতে পারে তা প্রধানমন্ত্রীর জানার-বোঝার কথা।
 
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।