ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

৬ প্রকল্পে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হবে চট্টগ্রাম

তপন চক্রবর্তী, ডেপুটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
৬ প্রকল্পে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হবে চট্টগ্রাম ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হিসেবে গড়ে তুলতে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল , বন্দরের বে টার্মিনাল, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প।

 

বঙ্গবন্ধু টানেল  

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই টানেলের ৯৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়াতেও নদীর তলদেশে প্রথম টানেল। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে ঢাকার সঙ্গে পর্যটন শহর কক্সবাজারের দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমে যাবে। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে চীনের সাংহাই নগরীর আদলে গড়ে উঠবে ‘টুইন সিটি’। সেই সঙ্গে ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে এই টানেল। অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৯.৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চীন সরকার। টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ও ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখানের সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গাড়িগুলোকে আর চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। পতেঙ্গার আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম নগরীর ওপর বাড়তি যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসবে।  

গত ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউবের পূর্তকাজ সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলসহ অর্থনীতি গতিশীল হবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকার উপযুক্ত সময়ে এটি উদ্বোধন করবেন।  

বে-টার্মিনাল 

সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা ধরে রাখতে অপরিহার্য হয়ে পড়ে বে-টার্মিনাল। বহুল প্রত্যাশিত বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলতি বছরে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। বে-টার্মিনাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশাসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। ২০২৬ সালে টার্মিনালটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে।

বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নিয়োজিত কনসালটেন্ট মেসার্স কুনহুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি তৈরি করেছে মাস্টারপ্ল্যান। বে-টার্মিনাল প্রকল্পে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের জন্য ৬৮ একর জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে ৪শ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে মাল্টিপারপাস টার্মিনালের বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা, ড্রইং ও প্রাক্কলনে পরামর্শক সেবার জন্য কুনহোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পনি লিমিটেড-ডি ওয়াই ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজের তদারকিও করবে।

মাল্টিপারপাস টার্মিনালে ছয়টি জেটি থাকবে। তবে বে-টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। এ টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্বদিকে রয়েছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেলপথ। বে-টার্মিনাল চ্যানেলে কোনো বাঁক নেই এবং যথোপযুক্ত নাব্যতা রয়েছে। তাই সেখানে ১০-১২ মিটার ড্রাফটের সর্বোচ্চ ৬ হাজার টিইইউজ বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। বে-টার্মিনালে একটি ১২২৫ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি ১৫শ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মিত হবে। এই তিন টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার।

বর্তমানে জোয়ারের সময় গড়ে চার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ বন্দরের জেটিগুলোতে ভিড়তে পারে। তবে বে-টার্মিনালে রাত-দিন ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বে-টার্মিনালের সক্ষমতা হবে প্রায় ৫০ লাখ টিইইউএস। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। তিনটি টার্মিনালের মধ্যে একটি বন্দরের নিজস্ব খরচে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পের অবশিষ্ট দুটি টার্মিনাল দক্ষ ও অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরদের অর্থায়নে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে।

মীরসরাই ইকোনমিক জোন 

শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন হচ্ছে মীরসরাই ইকোনমিক জোন। বঙ্গোপসাগরের মীরসরাই উপকূলের তীর ঘেঁষে জেগে ওঠা বিশাল চরাঞ্চলে অতি লবণাক্ততার কারণে ফসল ফলতো না। তাই কয়েক হাজার একর আয়তনের এলাকাটিতে মূলত মাছ চাষ হতো আর ছিল গবাদি পশুর বিচরণক্ষেত্র। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই অঞ্চলটিই এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নিয়েছে। একসময় ৫ হাজার একর জমি ঘিরে বাংলাদেশের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা শিল্পাঞ্চলটি এখন ৩৩ হাজার একরের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’, যার পুরোটাই গড়ে উঠেছে সাগর থেকে জেগে ওঠা জমিতে।

মীরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’। ইতিমধ্যে এ শিল্পনগরের মোট আয়তন ৩৩ হাজার একর জমির মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ১৭ হাজার একর জমি বেজা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন শেষে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৩ একর জমি দেশি-বিদেশি ১৩৬ বিনিয়োগকারীর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত জমিতে মোট প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ৭ লাখ ৫২ হাজারে বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হবে বলে বেজা সূত্র জানিয়েছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেল চলাচল শুরুর আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন তিনি। একইসাথে এই রেলপথের মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে কক্সবাজারের ঝিনুকের আদলে করা দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনে। এর ফলে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এজন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। কক্সবাজারের রামু, ঈদগাঁও, পেকুয়া ও চকরিয়া অংশে রেলট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর নির্বিঘ্নে চলাচল করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এই রেলপথে হাতি চলাচলে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড় কেটে সমতল করে একটি ওভারপাস করে হাতি ও অন্যান্য প্রাণি চলাচলের পথটি স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ করতে ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক। আর এই ওভারপাসের নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।  নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি আন্ডারপাসও। আন্ডারপাস দিয়ে চলবে ট্রেন। তিনটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে।  

সিডিএর মেগা প্রকল্প 

চট্টগ্রাম শহরে খাল ছিল ৭১টি। ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে ৫৭টি খাল পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৩৬টি নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প চলছে। সিডিএ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।  অবশিষ্ট ২১টি খালের উন্নয়ন ও পুনরূদ্ধার বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।  

নগরের ৩৬টি খাল উদ্ধার ও সংস্কারে ৫৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের চলমান এ প্রকল্পে ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে। নালা তৈরি করা হবে ১ হাজার ৭৭ কিলোমিটার। প্রায় ১০৮ একর জমি অধিগ্রহণ এবং রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার। ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫টি স্লুইস গেট করা হবে। এখন পর্যন্ত ১২টি খালের কাজ শেষ হয়েছে; আরও ৫টি খালের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।

কালুরঘাট সেতু পুনঃনির্মাণ 

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর নকশা তৃতীয় দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণে কালুরঘাট সেতুটি আর পদ্মা সেতুর আদলে হচ্ছে না। নকশা পরিবর্তনের কারণে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় আরও অন্তত ৭০০ কোটি টাকা বাড়বে।

দ্বিতীয় নকশা অনুযায়ী, কালুরঘাট সেতুর ওপরতলা দিয়ে গাড়ি চলার কথা ছিল। নিচতলা দিয়ে চলার কথা ছিল ট্রেন। কিন্তু এখন পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী, সড়ক ও রেলের জন্য চার লেনের সেতু হবে। দুই লেনে চলবে গাড়ি। বাকি দুই লেনে ট্রেন।

প্রথম নকশায় সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় নকশায় ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। তৃতীয় নকশায় খরচ হতে পারে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। চার লেনে করা নতুন নকশার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।

এখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ শুরু হবে। তারপর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। এগুলো শেষ করতে ২০২৩ সালের পুরো সময় লাগতে পারে। ২০২৪ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেতুর স্থান, দৈর্ঘ্য, উচ্চতাসহ সবকিছুই আগের মতো থাকবে। তবে চার লেন হওয়ায় সেতুর প্রস্থ বেড়ে গেছে। সেতুটি এখন প্রায় ৬৫ ফুট প্রস্থের হবে। নির্মাণকাজ শেষ হতে তিন বছর সময় লাগবে বলে জানান কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা।

১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলে ১০ কিলোমিটার গতিতে। সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়ি চলে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে।  

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প 

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। দ্বিতীয় ইউনিটে শুরু হবে জুলাই মাসে। ৫১ হাজার সাড়ে ৮ শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইতিমধ্যে পোর্ট ও ভৌত অবকাঠামোর কাজ ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, সার্বিক ভৌত অবকাঠামোর কাজ হয়েছে ৭০ শতাংশ। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম এসব বিষয় জানিয়েছেন।  

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর সময় মাত্র একবার ওই কয়লা দেখা যাবে। তারপর ওই কয়লা সরাসরি প্ল্যান্টে চলে যাবে জেটি থেকে। এতে পরিবেশ দূষিত হবে না। লোকবল নিয়োগে টেকনিক্যাল কাজ ছাড়া অন্যান্য কাজে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা নির্ভর করছে চট্টগ্রামের উন্নয়নের ওপর। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে চট্টগ্রাম হবে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর- এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।