ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমার বাবা, আমার বন্ধু

আদনান সৈয়দ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৩
আমার বাবা, আমার বন্ধু

যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে চলে আসার আগের রাত। আম্মা আড়ালে নীরবে তার চোখ মুছছেন আর আমার ব্যাগ গোছাচ্ছেন।

আর আমি বাবার মুখোমুখি হয়ে, ‘লাস্ট মিনিট ফাদারলি অ্যাডভাইস’ শুনছি। তখন হঠাৎ করেই বাবা আমার হাত দুটো ধরে বললেন, “আচ্ছা, তোর সাথে আমার আবার দেখা হবে তো? তুই সত্যি সত্যি পড়াশোনা শেষ করে লক্ষ্মী ছেলের মত আবার দেশে চলে আসবি তো?”

আমি আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু, শিক্ষক আর পরম পূজনীয় বাবাকে আশ্বস্ত করে বললাম, “কি যা তা বলছো? এইতো মাত্র চারটি বছর। তারপর ঠিক দেখবে তোমার এই দেশের ছেলে আবার দেশেই ফিরে আসবে। ”

বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে পারেনি। সেই চার বছর এখন অনেকগুলো বছরের সমাহার।

এই জগৎ-সংসারের বাস্তবতা, জীবনের কঠিন চেহারা, আর প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌঁড়ে আমি আটকে গেছি। আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম বাবা। আমি আমার কথা রাখতে পারি নি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।

আমার সেই উত্তাল কঠিন সময়গুলোতে তুমি ছিলে আমার প্রাণের মানুষ, আত্মার আত্মীয়। অথচ এখন তুমি নেই। না, তুমি নেই এ কথাটা আমি বলবো না। এই পৃথিবীতে তুমি নেই। কিন্তু তুমি আছ। আমার অন্তর জুড়ে, আমার অস্তিত্বের প্রতিটা পরতে পরতে তুমি আছ।

একদিন নিউইয়র্কে বন্ধুদের সাথে যখন আমার জন্মদিন পালনে ব্যস্ত, ঠিক সেদিনটাই বেছে নিয়ে তুমি আমার ওপর অভিমান করে চলে গেলে। আমার জন্মদিনটি এখন আমার কাছে ভয়াবহ রকমের এক বিপর্যয়ের দিন। তুমি এই কাজটা কেন করলে? আমিতো এখন আর আমার জন্মদিন পালন করি না? আমার জন্মদিনেই তোমাকে কেন চলে যেতে হল? এত অভিমান তোমার আমার ওপর?

বন্ধু আমার, তোমার কথা যখন মনে হয়, তখন আকাশের দিকে তাকাই। আকাশে অনেক তারার ভিড়ে তুমিও কি একটি তারা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছ? সেই একা অজানা জায়গায় তুমি ভালো আছ তো বাবা? তুমি কি জান, তোমার শূন্যতা নিয়ে কি অসহায় ভাবে আমি এই ফিরিঙ্গিদের দেশে আমার সময় কাটাই? আমার প্রতিটা জন্মদিন আসে আর আমার মনে হয় আমি যেন তোমার সাথে আরেক দফা ওয়াদা ভঙ্গ করলাম।

বাবা আমার, আমি আমার প্রিয় দেশটায় যেতে চাই। আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ। কিন্তু আর কতকাল আমাকে অপেক্ষা করতে হবে? এখন আমি সত্যি এক ক্লান্ত সৈনিক।

বাবা, তুমি কি তোমার এই স্বপ্ন ঘেরা সবুজ দেশটার ভালোবাসার আঁচলে আমাকে এক রত্তি জায়গা দেবে না? তোমার মনে আছে সেই কথা! তুমি আমাকে সবসময় বলতে, “আমি জানি তুই অনেক বড় হবি। আমাদের মান রাখবি। তারপর একদিন তুই চলে আসবি ঠিক আমাদের কোলেই। তখন আবার জমবে মেলা হাটতলা বটতলা...”

কিন্তু বাবা, তুমিও কিন্তু তোমার কথা রাখ নি। তুমি রণে ভঙ্গ দিলে।   কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে এই অবেলায়? তুমি কি জান যে তোমাকে ছাড়া বাংলাদেশ আমার কাছে ধূসর, মূল্যহীন। তুমি নিশ্চয়ই সে কথাটা জানতে? তাহলে এত তাড়াতাড়ি তোমাকে চলে যেতে হলো?  

বন্ধু আমার, তুমি ভালো থেকো । আর একদিন ঠিক দেখো আমি তোমার বাধ্য সন্তানের মতই দেশে চলে আসব। আমার শিক্ষা, আমার মনন, মেধা আর রুচি সবকিছু ঢেলে দেব তোমার আর আমার স্বপ্নের এই দেশটাকে। বাংলাদেশের ধুলা-বালি আবার গায়ে মেখে নতুন করে মানুষ হব। সেই দিন কি খুবই দূরে?

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ১৬ জুন, ২০১৩
লেখক: আদনান সৈয়দ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী
Adnansyed1@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।