মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু বিচারহীনতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র সেই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে।
আমরা আজ সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অন্তত একটি ঘটনার বিচার করার মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি পাল্টাতে এখনই পদক্ষেপ নিন। মনে রাখতে হবে একাত্তর সালে যারা হামলা করেছে, তারা ছিল পাকিস্তানি বা তাদের সমর্থক। একই সাথে সে সময় যারা ক্ষমতায় ছিল তারাও ছিল পাকিস্তানি। কিন্তু এখন আমাদের জন প্রতিনিধিরাই ক্ষমতায়, তাই এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় আমরা এড়াতে পারি না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্থানে অসাম্প্রদায়িক সচেতন নাগরিক সমাজের কর্মসূচি পালিত করেছে। রাজধানীতে নাগরিক সংহতি’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত একটি কর্মসূচি থেকে অন্তত একটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার প্রত্যাশাও করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের বসতবাড়ি-ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, করা হয়েছে লুটপাট। ফলে দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও, যশোর, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর প্রভৃতি জেলায় নির্যাতিত ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবার ও তাদের স্বজনরা নিরাপত্তাহীন মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

আমরা জানি না, দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়েছে যেসব কারণে, সেসব কারণের সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এবং তাদের মন্দির ভাঙার প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? অথচ ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত জামায়াতে ইসলাম ও তাদের অনুসারীরা দেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঘটনা ঘটার পর তার দায় চাপানোর জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতার কারণে অপরাধীরা নিরাপদে থেকে যায়। ফলে তারা পরবর্তীতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। আমরা অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাই না, আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিচার চাই।
আমরা একই সাথে সরকার, তার দল ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছি। আমরা জানতে পেরেছি, কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাপ দিতে স্থানীয় অনেক রাজনীতিবিদ পারস্পরিক রাজনৈতিক বৈরীতা ভুলে যান। তাদের অভিন্ন লক্ষ্য হয়ে ওঠে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তাদের সম্পদ দখল।
আমরা দেশের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে সাম্প্রদায়িক এই হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি, দীর্ঘ সময় পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষ নিরাপত্তাহীন ও অনাহারে মানবেতরভাবে বেঁচে আছে। অথচ তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার চেয়ে এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলাদলি, একপক্ষকে রক্ষার চেষ্টা, আবার দায়ভার পরস্পরের উপরে চাপানোর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে।
শরিফুজ্জামান শরিফ, সাবেক ছাত্রনেতা
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
এমজেএফ