ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নির্বাচনী কভারেজের শুকনো দৌড়

তুষার আবদুল্লাহ, পরিচালক (বার্তা) সময় টেলিভিশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৪
নির্বাচনী কভারেজের শুকনো দৌড় ছবি: বাংলানিউজ(ফাইল ফটো)

শুকনো দৌঁড়ে কতোটা উর্ত্তীণ হলাম! টেলিভিশনের পরিভাষায় ‘ড্রাইরান’ পরিচিত শব্দ। যেকোন অনুষ্ঠানকে সম্প্রচারে আনার আগে যে হোমওযার্কটি করে নেওয়া হয়, টেলিভিশন কর্মীদের কাছে সেটি ড্রাইরান।

২০১৪’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি গণমাধ্যম কর্মীরা ড্রাইরান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। পত্রিকা, অনলাইনের চেয়ে চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল টেলিভিশনের জন্য। কারন কারিগরি সক্ষমতার বিষয়টি টেলিভিশনের জন্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কারিগরিভাবে কে কতোটা এগিয়ে আছে, তার প্রদর্শণ করার এক ধরনের লড়াই শুরু হয়েছিল পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই। তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি শুকনো দৌড় হিসেবে ঐ পাচঁ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকেই বেছে নিয়েছিল। কিন্তু টেলিভিশনসহ সকল মিডিয়ার কাছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিও আরেকদফা শুকনো দৌঁড় দিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিলো।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনের কাঠামোগত পার্থক্য রয়েছে। তিনশ’ আসনের জাতীয় নির্বাচন। যদিও ১৫৩টি আসনে আগেই নির্বাচন হয়ে গেছে। ভোট হয়েছে ১৪৭টি আসনে। কিন্তু দেশজুড়ে সকল জেলাতে নির্বাচন হওয়াতে কভারেজ এলাকা বিস্তৃত ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেয়ে বেশি। তাই নির্বাচনের ঘটনা এবং ফলাফল দ্রুত প্রচারের ক্ষেত্রে কে এগিয়ে থাকবে, তা নির্ভর করবে কারিগরি সক্ষমতার উপর। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সেই সক্ষমতার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেছে সংবাদ চ্যানেল এবং দুই-একটি পাঁচমিশালী চ্যানেল। কোন কোন পাঁচমিশালী চ্যানেল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে খবর প্রচার করে গেছে সারাদিন। স্কাইপ, ডিএসএনজি, ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে রিপোর্টাররা ভোটের মাঠ থেকে সর্বশেষ খবর দিয়ে যাচ্ছিলেন। বিভাগের বাইরেও বগুড়া, কুমিল্লা, পাবনা, নওগাঁ, যশোরের মতো জেলার সংগে ক্যাবল সংযোগ স্থাপণ করা হয়েছিল। ঢাকা থেকে রিপোর্টারদের বিভাগ ও জেলাতে পাঠিয়েছে সময় টেলিভিশন ছাড়া প্রায় সব চ্যানেল। একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় ছিল, সেটি হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়ে বেশি নবাগত ও তরুণ রিপোর্টারকে মাঠে দেখা গেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেশির ভাগ চ্যানেলের অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞদেরই ভোটের রিপোর্টিং-এ বেশি দেখা গিয়েছিল।   চ্যানেলগুলো এই শুকনোদৌড়ের নির্বাচনে নবাগত ও তরুণদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে, তাদের সক্ষমতাটিও পরখ করে নিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লোকবলের ছক তৈরিটা সহজ হয়ে গেল।

দিনজুড়ে নিজের চ্যানেল দেখার পাশাপাশি অন্যান্য চ্যানেলও দেখেছি। সোজাসাপ্টা বলতে গেলে পরোক্ষ মৃদু চাপ থাকা স্বত্ত্বেও টেলিভিশন গুলো প্রকৃত চিত্রই (বিটিভি ছাড়া) তুলে ধরেছে। ভোটারহীন ভোটকেন্দ্র, সহিংসতার খবর প্রচারে রাখঢাক ছিলনা। আরেকটি বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করেছে, সেটি হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফলাফল ঘোষনার ইদুঁর দৌঁড়ের ট্র্যাক থেকে সরে এসেছে টেলিভিশনগুলো। তারা রিটানিং অফিসারের ঘোষিত ফলাফলের উপরই নির্ভর করেছে। অন্য কোন সোর্সের উপর ভরসা রাখেনি। হতে পারে প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন বলেই হয়তো তারা সেই লড়াইতে নামেনি। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেই অসুস্থ লড়াই ছিলনা বলেই টিভির পর্দাকে অযথা অস্থির মনে হয়নি। একটি টেলিভিশন হেলিকপ্টার দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্তু হেলিকপ্টার দিয়ে ঘুরে নিউজ কভারেজে কতোটা এগিয়ে থেকেছে চ্যানেলটি, আমি তা মেপে দেখতে পারিনি। হয়তো হেলিকপ্টার ব্যবহারটিও ছিল শুকনো দৌঁড়ের অংশ। তবে প্রযুক্তি প্রধান যুগে আশি’র দশকের অস্ত্র ব্যবহার করে লড়াইতে নামাটা কতোটা সংগত তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে।

কাউকে কাউকে সমালোচনা করে বলতে শুনেছি, নতুনদের মাঠে নামানো ঠিক হয়নি। তাদের অপরিপক্কতা চোখে পড়েছে দর্শকদের। এমনকি মূলধারার অনলাইনে কেনো তরুনরা ভোট নিয়ে রিপোর্ট করছেন, সমালোচিত হয়েছে সেই বিষয়টিও। সমালোচকরা বলছেন-কোন কোন গণমাধ্যম বাচ্চা-কাচ্চা নির্বাচনী রিপোর্টিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। নতুনদের শিখিয়ে-পড়িয়ে নামানোর কৌশলটাও ঠিক নয়। তাদের মতে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। গণমাধ্যমের কোন কোন সহকর্মী সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও এই ধরনের মন্তব্য করছেন। যারা করেছেন, তাদের সবাই আমার পরিচিত। কেউ কেউ কোন কোন সময়ের সহকর্মী। তাদের প্রতি ভালবাসা রেখেই বলছি-পত্রিকা, অনলাইন এবং টেলিভিশনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তরুণ ও নবাগতরা যে সাহসিকতার সংগে নির্বাচন রিপোর্টিং করেছেন, সেটা আমার সেই অভিজ্ঞ(!) পরিচিত ও সহকর্মীদের কখনো করতে দেখিনি। দু’একজনকে এই ধরনের রিপোর্ট করার জন্য তার হাউজ যোগ্যও মনে করেননি। আর অভিজ্ঞ সাংবাদিক মানেই তো সেই দলকানাদের পরিচিত মুখ। নতুনরা এখনো সব ফকফকা ভাবেই দেখতে পাচ্ছেন। এখনো তাদের গায়ে কোন রং অমোচনীয় কালির মতো লেগে যায়নি।

তাই বলে নতুনরা কি লেটার মার্ক পেয়ে গেছে? অবশ্যই নয়। এই শুকনো দৌঁড়ে তারা উত্তীর্ণ হয়েছে সন্তোষজনক নম্বর পেয়েই। কিন্তু আজকালকার জিপিএ-৫ পেতে হলে তাদেরকে আরো বহুদূর হেঁটে যেতে হবে। প্রথমত চলমান রাজনীতির মনোযোগী শিক্ষার্থী হতে হবে তাদের। পাতা উল্টাতে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের। জেনে নিতে হবে নির্বাচনের ধারাবাহিক পরিসংখ্যানও। এই তিনটি কাজ বা হোমওয়ার্ক করে নিলে পরবর্তী নির্বাচনে পত্রিকা, অনলাইন এবং টেলিভিশনগুলোর নির্বাচনী কভারেজ যেমন অনেক গোছালো হবে, তেমনি তরুণ রিপোর্টারদের দক্ষতার স্ফুরণে মুগ্ধ হবে পাঠক, দর্শক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।