ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ছেলেটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ‘বড় ভাইরা’!

ক‍াকলী প্রধান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪
ছেলেটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ‘বড় ভাইরা’!

বিরোধী জোটের ডাকে হরতালসহ অবরোধ চলছে। অফিস যাবো বলে বিকেল ৫টার দিকে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হচ্ছি।

কলাবাগান লেক সার্কাসে নিজের বাসার সামনেই রাস্তায় দেখি ১৪-১৫ বছর বয়সী কয়েকটি ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি আর হাতাহাতি চলছে। অনেকেই চড়াও হয়েছে একটি ছেলের ওপর।

দ্রুত ছুটে ওদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। দু’জনকে দু’দিকে সরিয়ে সমস্যাটা জানতে চেষ্টা করলাম। তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।

জানলাম, ঘটনাটি অতি তুচ্ছ। কিন্তু তাতেই উত্তেজিত ছেলেগুলো। ওদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না।

আমার উপস্থিতিতেই ওরা যে ভাষায় গালাগালি করছিলো তাতে প্রশ্ন জাগে আমরা আমাদের সন্তানদের মুখে কী ভাষা তুলে দিচ্ছি?

ততক্ষণে অবশ্য আশপাশের বাড়ির কয়েকটি ভদ্রগোছের ছেলে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলাম।

হঠাৎ হামলাকারীদের একজন বলল “অ্যাই বড় ভাইদের খবর দে। এখানে কিছু করা যাইব না। ওরে এলাকার বাইরে নিতে হইবো। ”

একজন বলল “তোরে পিস পিস কইরা কাইটা ফালামু। ”

ভূমিকা বাড়ালাম। দুই পক্ষকেই যার যার বাবা মাকে ডাকার কথা বললাম।

আমার কথা কানে তুললো না কেউ। দুই-একজন বরং আমাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

“আন্টি আপনি যান আপনি আমাদের মাঝে পইড়েন না,” বললো একজন।

অল্পক্ষণেই ফিল্মি কায়দায় মটর সাইকেলযোগে ‘বড় ভাইরা’ হাজির হলো। কোন কথা ছাড়াই আক্রান্ত ছেলেটাকে কোমরের বেল্ট খুলে পেটাতে শুরু করল তারা।

তথাকথিত এই বড় ভাইদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আরো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে লাগলো। উদ্ধতভাবে উল্টো প্রশ্ন করলো, আপনারা কারা?

বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনতে চাই। তাকে বলতে চাই প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, “আমরা অসহায় মানুষ। ”

চোখের সামনেই অসহায় ছেলেটাকে ‘বড় ভাইরা’ মোটর সাইকেলে তুলে নিল। আমরা পথরোধ করে দাঁড়ালাম। ছেলেটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে তারা বললো কলাবাগান ক্লাবে।

আটকাতে পারলাম না। ওদের রক্তচক্ষুর কাছে আমরাও অসহায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওই ছেলেটা এখন কোথায় জানিনা! ওরা বলছিল ‘বিচার করে’ ছেড়ে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী! এরাই যদি বিচার করে তবে বাবা-মা থাকার দরকার কী? আর আইন-আদালতই কি জন্য। বিচারের দায়িত্ব এই  তথাকথিত বড় ভাইদের!

প্রধানমন্ত্রী, জেনেছি এরা আপনার দলের কর্মী।

একজনতো আপনার দলের একটি সহযোগী সংগঠনের সহ-সভাপতি বলে দর্পভরে পরিচয় দিচ্ছিলেন। তবে নাম জানালেন না। নিজের চেহারার ও আচরণের ছাপ রেখে গেছেন ঘটনাস্থলে।
 
পরে জানলাম এলাকার সবাই নাকি তাকে চেনে।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী- যে বাচ্চাগুলো প্রথম অবস্থায় হাতাহাতি করছিলো অথবা একে অপরকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছিলো তারা এই প্রজন্মের। ধরেই নিচ্ছি আমাদের প্রজন্ম ওদের বাবা মা। আমাদের সন্তানদের সমস্যাটি খুব অল্পেই হয়তো আমরা সমাধান করে দিতে পারতাম। হয়তোবা আমার কিংবা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের হস্তক্ষেপে ওরা একে অপরের বন্ধু হতে পারতো।

কিন্তু তথাকথিত বড় ভাইরা এসে সব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলো মোটরবাইক আর পেশিশক্তির প্রভাবে।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আবেদন করি এই ‘বড়ভাই’ তৈরির কারখানাগুলো বন্ধ কর‍ুন। আপনার এই কর্মীরা আমার সাথেই যে স্বরে কথা বলে গেল তাতে আমি শঙ্কিত।

এদের সুরাজনীতির সুশিক্ষা প্রয়োজন। তার মাধ্যমেই এদের দেশের কাজে লাগানো যাবে।

আর এই প্রজন্মের বাবা-মা দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আসুন আমরা সচেতন হই। আগামী প্রজন্মকে এইসব দলীয় বড়ভাইদের হাত থেকে রক্ষা করি। দেশকে রক্ষা করি।

লেখক: সিনিয়র ফটো ‍সাংবাদিক, কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময় ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৪
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।