ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তৃতীয় বিকল্পের প্রচেষ্টাঃ প্রশ্ন ও বিতর্ক

ড. মঞ্জুরে খোদা, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৪
তৃতীয় বিকল্পের প্রচেষ্টাঃ প্রশ্ন ও বিতর্ক ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

তৃতীয় বিকল্প, স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলা প্রশ্নে সিপিবি’র বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত ও বিতর্ক লক্ষ্য করছি। কেন এবং কাদের মধ্যে এই প্রশ্ন ও বিতর্ক? আমার পর্যবেক্ষণে এই বলয়ের একটি সাবেক অংশ যারা এখনও দলটির প্রতি সহানুভূতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও আওয়ামী ঘরানার একটি বড় অংশ।

বর্তমান বাস্তবতায় তাদের বক্তব্য ও উপলব্ধি কতটা সঠিক ও যুক্তিযু্ক্ত? এই বিষয়ে সিপিবি হয়তো তাদের বক্তব্যে বিস্তারিত বলেছেন। ভাষা ও ব্যখ্যার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও যে কাজটি তারা যত্নের সাথেই করে থাকে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ইতিহাসের দায় কার কতটা তার আলোচনাই এই লেখার উদ্দেশ্য।

যে কারণে এই বিতর্কটি সামনে এসেছে তা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিপদ মোকাবেলার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া  বা এই ইস্যুতে দলটির সাথে সমঝোতা না করা। এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের (?) ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান প্রতিপক্ষের অবস্থান ও ক্ষমতায়নের পথকে সুগম করবে। এতে মৌলবাদী শক্তি আরও ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, যেটি হবে স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের জন্য বিরাট বিপদ। আর সিপিবি যেহেতু এই চেতনার একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন সেই জন্যই আওয়ামী লীগের অধীনে তাদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিন্ধান্তকে অনেকে যথার্থ ও সময়োচিত মনে করছেন না। চলমান বাস্তবতায়- ভাবনার এই সমীকরণকে অস্বীকার করছিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিপদ মোকাবেলায় সিপিবি’র সাথে আওয়ামী লীগের এই ভাবনার কোন বিরোধ নেই বরং এটি সিপিবি’র একটি আদর্শগত অবস্থান। এই প্রশ্নে দলটি সবসময় এই সংগ্রামকে প্রাধান্য দিয়েছে। একই সাথে ক্ষমতাসীনদের উপর একটা রাজনৈতিক চাপ রেখেছে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় অগ্রসর করতে।

ভবিষ্যতেও এই বিষয়ে তাদের অবস্থান অভিন্ন থাকবে। তাহলে প্রথমত মানতে হবে, এটা আওয়ামী লীগের একটা শক্তির দিক যে তারা এই প্রশ্নে একা নয় দেশের বৃহৎ জনগষ্ঠীর সাথে এই দলটিও তার পাশে আছে। তাহলে এ প্রশ্নে এই বলয়ের নাগরিকদের দ্বিধান্বিত হবার কি কোন সুযোগ আছে? যে বিপদ মোকাবেলায় অপরিপক্কতার দায়ে আজ তাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে, তারা কি সেই এজেন্ডা থেকে সরে এসেছে? যদি না থাকে তাহলে বরং দলটির প্রতি তাদের অধিক দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল হবার কথা, কিন্তু তা না হয়ে এদের ভাবতে শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাস্তবতা উপলব্ধিতে অপারগ। কেউ বলছেন এরা বিএনপি-জামাতের সমার্থক বা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী..! আর কেউ এক ধাপ এগিয়ে দেখছেন বিভিন্ন ধরণের লেন-দেনের হিসেবে। যাই হোক, এখানে দুই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পায় একটি হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক অন্যটি হচ্ছে ইতিবাচক ভিন্নতা।

সিপিবিকে ঘিরে একটি অংশের নাগরিকদের মধ্যে যে ইতিবাচক ভিন্নতা আছে তা একটি রাজনৈতিক আকাঙ্খা। ইতিহাসের নিরীখে বর্তমান বাস্তবতায় দলটি তাদের সেই আকাঙ্খাকে ধারণ করতে পারছে না.., এখানেই হচ্ছে বোঝাপড়ার সমস্যা! প্রথম বিবেচনা, বর্তমান বাস্তবতায় সিপিবি’র যে রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মসূচী তার সাথে কি ঐ আকাঙ্খার কোন বিরোধ আছে? যে প্রশ্নে আজকে দলটিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে সেই ইস্যুটি কি তাদের কর্মসূচীতে অতি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভূক্ত নয়? তাহলে সমস্যটা কোথায়? আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির ‘একটি বিষয়ের সমর্থন ও সহযোগী’ হতে গেলে তাদের যে রাজনৈতিক আকাঙ্খা, বক্তব্য ও কর্মসূচী তাকে কি প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় না? একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের অবস্থান কি সঠিক নয়? এটা তো মানতে বা স্বীকার করতে হবে যে, দেশের জনগণ বর্তমান দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে একটি তৃতীয় বিকল্পের রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ আশা করে। সেই আকাঙ্খা কি এই দুই ধারার কোন একটির সাথে মিলেমিশে সম্ভব হবে? আমার মনে হয় এই বিষয়ে তাদের রাজনীতি ও ইতিহাসের পাঠ ভাল জানা আছে। আবার এও মনে করি যারা এই আকাঙ্খা ও আবেগ ধারণ করেন তাদের সবাইকে মতলববাজ ও প্রতিপক্ষ ভাবা সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার গেলে বা থাকলে তাদের সবাই সুবিধা ভোগী হবে, এমনটা ভাবাও ঠিক না। যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিচলিত হয়ে সমালোচনা করছেন তাদের সবাইকে সেই দলের কর্মী বানিয়ে দেয়াটাকেও যথার্থ মনে করি না। মনে রাখতে হবে এদের সবাই আওয়ামী লীগ করে না। হতাশা এবং প্রত্যাশা থেকে এমন ভাবনা ও যুক্তির কথা বলছেন। এই অংশকেও নিজেদের আস্থায় নেবার কাজটি ধৈর্য ও যত্নের সাথে করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।  

চলমান ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির তলোয়ার বাজিতে আওয়ামী লীগকে জিতে আসতে হবে নিজের দক্ষতা ও কৌশলে। যে কোন কারণে একটি রাজনৈতিক দলের বিপর্যয় ঘটতে পারে, জনপ্রিয়তা কমে যেতে পারে, সেটি যেমন সেই দলের জন্য ক্ষতিকর একই সাথে দেশের জন্যও মঙ্গলজনক নয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেই ধসের অন্তর্গত কারণ উপলব্ধির যথার্থ জ্ঞান। গত ৫ বছরে কি বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে? মাঠের অবস্থা কি তাই বলে? সেটাও ক্ষমতাসীনদের সাথে প্রায় সমগতিতে নিম্নমুখী।   কিন্তু সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতির যে কোন জনদূর্ভোগের দায় চলে যায় সরকারের কাঁধে। তখন দেয়ালের বাইরে থাকা মানুষগুলো হাত মেলায় আরেক প্রতিপক্ষের সাথে। কিন্তু মুক্তি মেলেনা, যেন সেই পুরানো গল্প ফের নতুন করে। জনগণের যে অংশ তাদের থেকে মুখ ফেরাবে তাদের কাছে সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধাপরাধের ইস্যু কতটা মুখ্য? তাহলে ক্ষমতার উৎস সেই জনগণের আকাঙ্খা ও মনস্তত্ত্বকে বিবেচনায় না নিয়ে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কোন কিছু করা কি ‘সেই ইস্যুর’ কোন স্থায়ী সমাধান দেবে? স্বাধীনতার পর প্রথম ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২১ বছর। পরাধীনতার সময় ক্ষমতা পেয়েও ভোগ করতে পারেনি। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অভাব ও সংকট। কিন্তু ৯০ এর পর প্রায় ২ যুগে তারা ৩ বার (?) ক্ষমতায় এসেছে, সেটা সম্ভব হয়েছে একটি গণতান্ত্রিক ধারা (?) অব্যাহত থাকার কারণে। আর এই ধারা কোনভাবে ব্যাহত হলে কি তাদের জন্য খুব মঙ্গলজনক হবে? ২৪+৪২ বছরের ইতিহাস কি তাই বলে? তাই যে কোন মূল্যে গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। সেই জন্যই বলা হয়েছিল সকলের অংশগ্রহনে নির্বাচন এবং তার মধ্যেই খুঁজতে হবে আসল বিপদ মোকাবেলার উত্তর।

জাসদ-ওয়ার্কাস পার্টিসহ কয়েকটি বামদল যদি জোট সরকারে যোগ না দিত তাহলে কি আওয়ামী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করত না? সরকারে তাদের অবস্থান অনেক গণবিরোধী কাজ থেকে কি তাদের বিরত রাখতে পেরেছে? গণভিত্তি সম্পন্ন পার্টি ও দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তিই কেবল জোটের রাজনীতিতে নিজেদের মর্যদাপূর্ণ অবস্থান রাখতে পারে। জামাত বিএনপিকে ব্যবহার করতে পারছে তাদের সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক শক্তির কারণে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির পিছনে দৌড়ঝাপ করছে তাদের কিছু এলাকা ও ভোট ব্যাংকের কারণে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সিপিবি’র কি এরকম কিছু আছে? তা না হলে থাকতে হবে তাদের উচ্ছিষ্টের আশায়। সরকারের গত টার্মের শেষ বেলায় হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন সাহেব মন্ত্রী হলেন। আবার দল ও ব্যক্তিত্বে খুব অনুজ্জল একজন বামনেতা সরকারের শুরুতেই হলেন পূর্ণমন্ত্রী! সবকিছুই একজন ব্যক্তির ইচ্ছা ও অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে পরিমান বেপরোয়া আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা রক্ষার জন্য যে পরিমান মরিয়া তাতে কি কারো পক্ষে জনগণের সায় আছে? তাহলে রাজনীতির প্রধান দুই প্রতিপক্ষের এক পক্ষকে দূর্বল করতে অপর পক্ষের সাথে হাত মেলানোর এই নীতি কি এখানে কার্যকর? কৌশলগত মিত্রের ক্ষেত্রে কেবল নিজের সামর্থের উপর প্রতিপক্ষ নির্ভরশীল হলেই কেবল এই নীতির ফল পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আমিও হতাম আওয়ামী লীগের সাথে জোটের রাজনীতির একজন জোড়ালো সমর্থক। তা না হলে নির্ভরশীলতা দূর্বল দলগুলোকে ক্ষমতার প্রভাবক না করে করবে এর সুবিধাভোগী ও আজ্ঞাবাহী।  

তর্কের খাতিরে ধরলাম সিপিবি নির্বাচনে অংশ নিল এবং একটা সিটও পেল না (সাংগঠনিক শক্তি অনুযায়ী তা হবার সম্ভবনাই সমুহ) তাতে এই সংগ্রামের কোন পরিবর্তন ঘটতো? তা যদি না হয়, কেবল নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে একটি রাজনৈতিক দল কেন নীতি-আদর্শের জায়গায় ছাড় দেবে? এরা কেবল নির্বাচন থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে, একে বর্জন, প্রতিহত করার কোন কর্মসূচী দেয়নি। যা কেবল বিএনপি-জামাতই করেছে। তখন আবার অনেকে চোখ কপালে তুলে বলবেন তাদের সেই শক্তি কোথায়? সেই প্রশ্নেও আমি এমনও সমালোচনা শুনেছি বামদের এই অবস্থান আসলে প্রকারন্তরে এই বিতর্কিত নির্বাচনকে সহযোগিতার নামান্তর! এ তো দেখছি উভয় সংকট! বলা হয়ে থাকে, বিএনপি-জামাতের নির্বাচনে না যাবার প্রধান ইস্যু ছিল রাজাকাদের বিচার বানচাল করা আর বিএনপি হয়েছিল জামাতের সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে করবে ব্যপক সহিংসতা, সেই আশংকার কারণেই- সিপিবি-বাসদের বক্তব্য ছিল বিএনপি জামাত ছাড়, আওয়ামী লীগ গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দাও। যে বক্তব্য নিয়ে তারা উভয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বৈঠকও করেছে। যে দাবী আজ আওয়ামী লীগও করছে এবং যা দেশে-বিদেশে সমর্থিত হয়েছে। তাহলে এখনে তো তাদের এক ধরনের নৈতিক বিজয় হয়েছে এবং যা তাদের নির্বাচনে না যাওয়ার একটি বড় কারণ। নির্বাচন পরবর্তিতে সংলাপ ও সমঝোতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং খালেদা জিয়ার সমাবেশের জামাতের অনুপস্থিতি (কৌশলগত দিক থেকে) সেই অবস্থানের আপাত যথার্থতা প্রমান করে।

বিএনপি’র অংশগ্রহনে নির্বাচনে যদি আওয়ামী পরাজিত হতো তাহলে কি আমাদের ধরে নিতে হবে যে দলটি ক্ষমতায় থেকে  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে পারেনি এই কারণে পরাজয় হয়েছে? আর যদি বিএনপি বিজয়ী হয় তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই দল ক্ষমতায় যেয়ে এই দাবীর বাস্তবায়ন করবে! আসলে এই দুই দলের জয়-পরাজয় প্রধান কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা বা না করা নয়। জয় পরাজয়ের প্রধান কারণ জন আকাঙ্খা পুরণ না করতে পারার দায়। বিরোধী দল থাকা অবস্থায় বিএনপি যা করেছে এবং করছে তাতে কি জনগণ খুশী হয়ে তাদের ভোট দেবে? এক্ষেত্রে বলা যায়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র জয়-পরাজয় ‘উভয়ের নেতিবাচক রাজনীতির’ একটিকে জনগণ পালা করে গ্রহন করে।

সিপিবি-বাসদ যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলয়ের বাইরের শক্তিগুলোকে নিয়ে ঐক্য প্রচেষ্টায় তৎপর তখন নানা ধরনের কথা শুরু হলো, ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরা সাবেক আওয়ামী লীগ, সুবিধা বঞ্চিত রাজনীতিক, আমেরিকার দালাল ইত্যাদি। আসলে ভাল-মন্দের বিষয়টি ঘটে উদ্দেশ্য, স্বার্থ ও সমীকরণের উপর। তাদের কথার রেশ ধরেই বলছি একজন মানুষ কখনো খারাপ তারমানে কি সে সবসময় বা সারাজীবনই খারাপ? সমাজ ও মনোবিজ্ঞানে কোথাও এমন ব্যখ্যার কথা আমার জানা নাই। একজন মুক্তিযোদ্ধা কি সারাজীবন বা আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা? তাহলে তো বলতে হয় একজন কমিউনিস্ট বা বামপহ্নী সারাজীবনই কমিউনিস্ট বা বামপহ্নী। তাদের বক্তব্য কি এই যুক্তির সাথে যায়? তারাই আবার সিপিবি-বামদের আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থানকে সমর্থন করতে বলছেন। এটা কি  স্ববিরোধীতা নয়? সিপিবি’র সমালোচনা করতে যেয়ে এই ঘরনার একজন সাবেক তার লেখায় নেতাদের লেনদেনের কথা উল্লেখ করেছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যে কোন যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা গ্রহনযোগ্য। কেবল শোনা যায় দিয়ে একটি অনৈতিক বিষয়ের উত্থাপন লেখার উদ্দেশ্যকে গোপন করা যায় না। তাহলে সাঈদিকে যারা চাঁদে আবিষ্কার করে তাদের সাথে আপনার পার্থক্যটা কোথায়? কোন সৎ ও চিন্তাশীল মানুষ এমন গুরতর ভুল করতে পারে আমার বিশ্বাস হয় না। কিছু মানুষ আছে যারা সাদা আর কালোর বাইরে কোন রঙ দেখতে পায় না। সমালোচনা একটি স্বীকৃত বিষয়, কোন এক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো কি সিন্ধান্ত নিল, তা কতটা সঠিক ও বেঠিক তা বুঝতে ও অনুসিন্ধান্তে আসতে সময়ের প্রয়োজন। ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলোর তাৎক্ষনিক প্রামানিক পাঠ খুব বেশি নয়। যেটা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বলা যায়। তবে আলোচনা-সমালোচনা-মূল্যায়ন ও বিতর্ক হচ্ছে এই বিষয়ের কষ্টিপাথর বিশেষ- যাকে শুদ্ধতা ও সঠিকতা দিতে সহায়তা করে। সেই জন্যই এর মূল্য অনেক। কিন্তু অন্যায় অপবাদ কখনোই নয়, তা দিয়ে সাময়িক বিভ্রান্তি ছড়ানো যায় হয়তো কিন্ত উদ্দেশ্য হাসিল করা যায় না।  

সবশেষে, বামপহ্নীদের তৃতীয় বিকল্পের প্রচেষ্টাকে যদি সমর্থন নাও করি, তা যেন কোন অন্যয্য ও অন্যায় অপবাদের দায় না দেই বা বিশ্বাস করি। কি পরিস্থিতি ও প্রতিকূলতার মধ্যে এরা রাজনীতি করছে একটু ভাবুন, চিন্তা করুন! বঙ্গবন্ধুর সময় তখন সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার যে দল ও শক্তি ছিল তার একটি অংশ ছিল আপোষকামি আর অন্যটি হটকারি। আর সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছিল তৃতীয় পক্ষ। যার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস হয়েছে অবিভাবকহীন। যে ঐতিহাসিক ভুলের দায় আজ ডান-বাম কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আরেকটি সময় পার করছে জাতি ইতিহাসের সেই দায় পরিশোধের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও একটি অংশ “মন্দের ভালো তত্ত্বে” সবকিছুর সমাধান খোঁজেন। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের বলেছিলেন- “ভোটের অধিকারের চেয়ে মানুষের বাঁচার অধিকার বড়”। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে একজন ছিনিয়ে নিয়েছেন আমাদের ভোটের অধিকার আর অন্যজন কেড়ে নিয়েছেন আমাদের বাঁচার অধিকার। যারা ভোট ও বাঁচার অধিকার হরণ করছে সেখানে নিশ্চয়ই আত্মরক্ষার অধিকার তারচেয়ে বড়, যে অধিকার মানুষের আদি ও অকৃত্তিম। এখানেই তৃতীয় বিকল্প প্রচেষ্টার প্রশ্নটি যৌক্তিকতা ও অনিবার্যতা পায়।

ড. মঞ্জুরে খোদাঃ লেখক ও গবেষক, ইনস্টিটিউট অব পলিসি সাইন্স, জাপান, torikbd@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।