ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‌‌‍‍'বছর ফিরলেও ২৪ ঘণ্টা শেষ হয় না এয়ারটেলের'

অনীক ইসলাম জাকী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৪
‌‌‍‍'বছর ফিরলেও ২৪ ঘণ্টা শেষ হয় না এয়ারটেলের'

আমি ২০০৭ সাল থেকে এয়ারটেল মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করি, ঢাকার মুগদাপাড়ায়। কিন্তু গত  দুই বছর ধরে আমাদের এলাকায় নেটওয়ার্কের উন্নয়ন হয় নাই, বরং আগের চেয়ে সেবার মান অনেক নিম্ন হয়েছে।



বর্তমানে আমরা কেউ ঠিকমতো এই মোবাইল কোম্পানির সংযোগ ব্যবহার করতে পারছি না।

আমরা মোবাইলের সিম পরিবর্তন করতেও পারছি না। কারণ, আমাদের অফিসের সহকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন সবাই এ নম্বরগুলো জানেন।

এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ারে হাজারবার বলেও কোনো লাভ হয় নাই, তারা তোতা পাখির মতো একই কথা বলে (স্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে)। ১ বছর ধরে অপেক্ষা করেও তাদের ২৪ ঘণ্টা শেষ হয় না।

এবার আসা যাক দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ারের কথায়। গত ২০ মার্চ দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে টোকেন নিয়ে বসলাম। ৩০ মিনিটের কিছু বেশি সময় অপেক্ষা। অতঃপর সমাধান... এই যে, আপনার মোবাইল সেটটি পরিবর্তন করেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালো কথা। আর দেরি না করে বায়তুল ভিউ টাওয়ার থেকে স্যামসাং ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফোন কিনলাম। বাসায় আসতেই যেই লাউ সেই কদু। নেটওয়ার্কের ঝামেলা, কথা ইকো (প্রতিধ্বনি)  হচ্ছে, কথা বলতে বলতে লাইন কেটে যাওয়া ইত্যাদি। পরদিন শুক্রবার, তাই আর যাওয়া হয়নি।

২৭ এপ্রিল ২০১৪, সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট। আবার অপেক্ষা। অতঃপর সমাধান। আপনার কি প্রবলেম বলেন? আমি আমার সব সমস্যা বললাম, সেবাদাতা গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনলেন এবং ১ মিনিটে সমাধান দিলেন- হ্যান্ড সেটে প্রবলেম, ১০০% শিওর আমি। আমি বললাম যে, ভাই দেখেন, আমি ৭-৮ দিন হয় কিনছি সেট। তিনি বললেন, কি সেট দেখি, দিলাম সেট, ভেতরে নিয়ে গেলেন। ৫ মিনিট পরে বিরক্তিকর মুখ নিয়ে এসে বললেন, কি ভাই সেট তো নষ্ট, অন হয় না। আমার তো হার্ট অ্যাটাক এর অবস্থা স্যামসাং ব্র্যান্ড কিনলাম এতো টাকা দিয়ে, ৭ দিনেই সেট নষ্ট! কি হবে এখন! কিন্তু কিছুই না, তিনি ৫ মিনিট চেষ্টা করে সেটের লক খুলতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি শেষ পর্যন্ত আমার নম্বর রাখলেন। আর সেই তোতা পাখির কথা, ‘স্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হবে’।

সেই ২০ মার্চ থেকে প্রতিদিন একজন নারী/পুরুষ এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ার থেকে কল করেন, আর বলেন, স্যার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চলছে, একটু অপেক্ষা করুন। আমিও জি আপা জি আপা, জি ভাই জি ভাই বলি।

এখানেই শেষ নয়। ২৭ এপ্রিল দুপুর ১২টায় দৈনিক বাংলার মোড়ে মেঘনা ভবন এর নিচতলায় এয়ারটেল কাস্টমার কেয়ারে গেলাম। গিয়ে দেখি, ২ জন লোক খুব ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলছেন। কারণ জিজ্ঞেস করতেই আমার সমস্যার মতো একই কথা বললেন। আমি বললাম আমিও একই সমস্যার জন্য এসেছি, উত্তরে ভদ্রলোক বললেন—ভাই এই কাস্টমার কেয়ারে তো সেবা দেয় না, এখানে চলে রাজনৈতিক আলাপ ও আড্ডা, এরা এগুলা নিয়েই ব্যস্ত, সেবা কিভাবে দেবে??

ভদ্রলোকের কথার সত্যতা যাচাই করতে কথা বলি এয়ারটেলে কর্মরত শফিউল্লাহর সঙ্গে। তিনি তা অস্বীকার করেন। আমি দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে সরাসরি আমার সমস্যায় চলে গেলাম, তিনি বললেন যে, এ দায়িত্ব তার না, আর এটা কাস্টমার কেয়ারও না (!!)। আমি তখন আবার ভালো করে আশেপাশে দেখলাম যে, আমি ভুল কোন অফিসে ঢুকে পড়ি নাই তো (!!)। নাহ, সব ঠিকই আছে। জানতে চাইলাম যে, এটা তাহলে কি??? তিনি বললেন, এটা ডিস্ট্রিবিউটর সেন্টার। আমি বললাম, তাহলে ওখানে ২ জন আপা কম্পিউটারে কি দেখেন?? কোনো বাংলা ছবি?? নাকি ফেসবুক?? উত্তর না দিয়ে তিনি জানতে চান, আমি কে?? আমি বললাম, কাস্টমার। কি করি জানতে চাইলে বললাম, সাংবাদিক। তখন তিনি বললেন, ভেতরে আসেন, কথা বলি। তার চেম্বারে নিয়ে গেলেন। বললেন যে, এটা অর্ধেক ডিস্ট্রিবিউটর সেন্টার আর বাকিটা কাস্টমার কেয়ার।

আর কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বে আছেন নিজামুদ্দিন। তিনি এখানে বসেন না, তিনি বসেন মতিঝিলের প্রিন্টার্স বিল্ডিংয়ের ১৬ তলায়। নিজামুদ্দিন সাহেবের মোবাইলে ফোন করে আমার সমস্যা জানাই। তিনি বলেন প্রায় একই কথা, নেটওয়ার্কের সমস্যা ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে। কতো সময় লাগবে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন, যতোদিন না নতুন টাওয়ার বসানো হবে ততোদিন এমন করেই ব্যবহার করতে হবে।

ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। মাগরিবের আজান দিচ্ছে, অজু করে নামাজে যাবো। মসজিদের গেটের সামনে তখন মোবাইলে বেজে উঠল, নম্বর অপরিচিত +৮৮০২৪৬৪৩। ভাবলাম, দেশের বাইরে থেকে কেউ। কিন্তু না, রিসিভ করা মাত্রই বেত্তমিজ দিল, বেত্তমিজ দিল মানে না, মানে না বলে গান ধরলো, কি আর করা নামাজের পূর্ব মুহূর্তে গান শুনলাম আর নামাজ পড়তে গেলাম।

রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে পর পর ৩টা এসএমএস। ঘুম ঘুম চোখে দেখি, লেখা কৃষি সংবাদ জানতে ... ( আমার কথা হলো, যারা কৃষক তাদের দে এসএমএস, আমাদের কেন??)

এরকম শত শত ঘটনা আছে এয়ারটেলের।

এখন এমন অবস্থা যে, আমরা জরুরি কল পর্যন্ত করতে পারি না। আমার বাবা ব্রেন টিউমারের রোগী। প্রায়ই বাবাকে নিয়ে রাত বিরাতে স্কয়ার হাসপাতালে যেতে হয়, আমি এমনও সময় পার করেছি যে হাসপাতালে বাবা আছেন, এটাও কাউকে জানাতেও পারি নাই।

এখন কথা হচ্ছে, এ অপারেটর প্রতি বছর গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সেবার মান নিম্ন, এমন অবস্থায় চলা কিভাবে সম্ভব?? এদের বিরুদ্ধে সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না???

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।