ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মোদির এজেন্ডা।। আমেনা মহসিন

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৪
মোদির এজেন্ডা।। আমেনা মহসিন

মোদির শঙ্কার জায়গাগুলো হলো— তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, আর্টিক্যাল ৩৭০, যার ভিত্তিতে কাশ্মির বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পায়, কথা হচ্ছিল যে এটা তারা সরিয়ে দেবে। ফলে মুসলমানদের জন্য অবশ্যই এটা একটা শঙ্কার জায়গা; ভারতে এবং কাশ্মিরে যেসব মুসলমান বসবাস করছে।

সেই আর্টিক্যাল ৩৭০-এর ভিত্তিতেই কিন্তু কাশ্মিরে বাইরে থেকে গিয়ে কাশ্মিরে জমি কিনতে পারত না। মোদি নির্বাচনের সময় একটা মাইনোরেটি কার্ড প্লে করেছে। তিনি বলছেন যে, ইণ্ডিয়ায় হিন্দুরা মাইনোরিটি। দিন দিন তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মোদির এই কথায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর। আমি আর্টিক্যাল ৩৭০ ধরেই বলছি, কাশ্মিরে এর ফলে বড় রকম প্রভাব পড়তে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একটা বড় রকম অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতর।

এর বাইরে ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তবে আর্টিক্যাল ৩৭০ সংবিধানেই অংশ। ফলে এর পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে, তা সংবিধান সংশোধন করেই তাঁকে করতে হবে। অবশ্য তা করতে চাইলে এখন মোদির পক্ষে সম্ভব। কেননা তারা ইতিমধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে। ফলে সংবিধান সংশোধন করার জন্যও তাদের খুব একটা বেগ পেতে হবে না। কিন্তু ভোটার টানার জন্য তখন মোদি এসব কথা বললেও বাস্তবে ঘটাবে কী-না, তা স্পষ্ট নয়।

গত মাসেই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তখন অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, মুসলিম জনগোষ্ঠী বেশ আতঙ্কিত হয়ে আছে। তবে মুসলিম ছাড়া অন্যান্য গোষ্ঠীর উপর কোন প্রভাব পড়বে না বলেই আমার মনে হয়। মূল টার্গেট আসলে মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং তাদের উপরই এ ফল, মোদি কর্তৃক সরকার গঠন প্রভাব ফেলবে বলেই আমার মনে হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বড় রকম প্রভাব পড়তে পারে। কেননা, তারা বলছে যে, ভারতে যেসব মুসলিম বাঙালি রয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এটা আমাদের জন্য একটা ইস্যু। ওরা কাদেরকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করছে— তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে একটা বড় শঙ্কার বিষয় তো থাকছেই। এই অবৈধ অনুপ্রবেশ কিন্তু আমাদের জন্য একটা টেনশন পয়েন্ট— এ বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। তাছাড়া একটা মৌলবাদী শক্তি যদি পাশে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও একটা প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে জঙ্গীবাদের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
 
শেষে আমি যে কথাটি বলব, তাহলো অনেকেই বলছেন মোদি যেহেতু ব্যবসায়ীদের পক্ষে এবং তাকে ভারতের প্রায় সব কর্পোরেট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সমর্থ দিয়েছে, সে কারণেই অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গেও স্থিতিশীল সম্পর্ক থাকুক।   এটা ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই করবে। তবে লক্ষ্য করার বিষয় যে, বাংলাদেশ শুধু নয়, চায়না আছে, কোরিয়া আছে, তাছাড়া ওরা আফগানিস্তানের দিকেও যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছে। ফলে বাংলাদেশ তাদের কাছে কতটুকু গুরুত্ব পাবে, তা আমার কাছে প্রশ্নবোধক হিসেবেই বিদ্যমান। আমার মনে হয়, আগেই যেহেতু বিজেপি ক্ষমতায় ছিল, কংগ্রেসের বাইরের দল ক্ষমতায় ছিল। অকংগ্রেস ছিল তখন জনতা পার্টি, আইকে গুজরালের মতো লোক ছিলেন তখনকাল দলের কাণ্ডারি। তাছাড়া বাজপেয়ী আর মোদি কিন্তু এক ব্যক্তিত্ব নয়। ফলে এসবকিছুই বিবেচনার মধ্যে থাকবে। আর আমাদের কিছুদিন তো অপেক্ষা করতেই হবে, বাস্তবিকই কী দাঁড়ায়, মোদি সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।




লেখক :
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।