ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখার বায়না

তুষার আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৪
ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখার বায়না ছবি: সংগৃহীত

কবে কখন প্রথম ‘গোল’ বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম?স্মৃতির জলছাপে আছে প্লে গ্রুপে যখন পড়ি তখন স্কুলে গাছ থেকে বাতাবী লেবু পেড়ে প্রথম বলে লাথি দিই। তারপরের বলটিই ছিল পুতুলের গোলাকার মাথা।

ঢোঙায় পত্রিকাভরে,দুধের প্যাকেটে কাগজ ভরে বল বানিয়ে খেলেছি এইতো সেদিনও ক্লাস নাইন, টেনে পড়ার সময়। যে সময়গুলোর কথা বলছি তখন জীবনে যতোবার বিশ্বকাপ এসেছে নাম জপেছি-পেলে, বেকেন বাওয়ার,পাওলো রসি, জিকো.কাফু,গেওর্গে হাজি,সালভাতোরে শিলাচ্চি,বেবেতো,ইয়ুর্গেন ক্লিসমান,পাওলো মালাদিনি,প্লাতিনি,পিটার শিলটন,ভিয়েরি,রজার মিয়া,দুঙ্গা,কানিজ্জিয়া,রোনালদো,রোনালদিনহো,লোথার ম্যাথাউস,জিদান,বাজ্জিও,মাকানাকি, রাইকার্ড, রুদ খুলিত,ফন বাস্তেন।

কোনো কোনো নাম হয়তো স্মৃতির অতল গহবরে হারিয়ে গেছে। ১২ জুন বিশ্বকাপের বল মাঠে গড়ালে নতুন তারকাদের নাম আত্মস্থ হবার পাশাপাশি হয়তো স্মৃতিপটে তারাও ভেসে উঠবে। প্রতিবারই যখন বিশ্বকাপ উন্মাদনায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছি ততোবারই স্বপ্ন দেখেছি দেশের ফুটবল নিয়ে। একটা সময় পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবলের সোনালী দিন ছিল। মোহামেডান-আবাহনীর খেলার দিন দেশ বিভক্ত হয়ে পড়তো। এই মূহুর্তে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে যেমন দেশ, বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তখন জিকোর সঙ্গে আসলাম, সালাম মুর্শেদী, ইউসুফ, ইলিয়াস, মনু, কৃষ্ণাদের মিলিয়ে দেখতাম। ঘরোয়া ফুটবলের সেই উন্মাদনা আমাকে স্বপ্ন দেখাতো একদিন হয়তো বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। ছেলে মানুষি সেই স্বপ্নটা বাছাইপর্বে ভেঙ্গে গেলেও, নতুন করে স্বপ্ন দেখতাম আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে। স্বপ্ন থেকে বাস্তবের ডাঙায় এসে জেনেছি শারীরিক সক্ষমতায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের গতি বিশ্ব দূরকথা এশিয়ার মানেও পৌঁছতে পারবে না। তখন স্বপ্নকে খাটো করে নিয়ে আসি দক্ষিণ এশিয়ায়। সেখানেও আশা টিকিয়ে রাখা গেলো না। যে মালদ্বীপকে নিজ চোখে দেখেছি ৮-০ ব্যবধানে হেরে যেতে, তাদের সঙ্গে মাঠে নামতেও এখন আমাদের মানত করতে হয়। ভয়ে বুক কাঁপে।

ব্রাজিল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ঘরোয়া ফুটবলের পাঁচালি কেন তুলছি, এনিয়ে বিরক্ত হতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবে যথার্থ ফুটবলপ্রেমীরা এতে বিরক্ত হবেন না বলে ক্ষীণ ভরসা আছে। কারণ এখন আমরা ফুটবল নিয়ে যেভাবে ভাবছি, বাকি চারটি বছর এভাবে আর ভাবা হয় না। এখন ঘর,অফিস,ছাদ,দেয়াল,গাড়ি,জমির আল সর্বত্রই ফুটবল। পতাকা উড়ছে নানা দেশের। এই সময়টাতে আমরা বিশ্বফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছি বলেই দাবি রাখতে চাই- ঘরোয়া বা দেশীয় ফুটবল নিয়ে একটুস খানি সময় বরাদ্দের।

আমরা দেখেছি জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা স্টেডিয়াম তো বটেই ফসলের মাঠও ছিল ফুটবলের দখলে। এখন স্টেডিয়ামেও নিয়মিত ফুটবল দেখা যায় না। ফুটবলের দায়িত্ব তারকা ফুটবলের হাতে তুলে দিয়েও ফুটবলে গতি আনা যায়নি। মানের দিক থেকেও ক্রমশ পড়তির দিকে। একথা মানতে রাজি, বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল নিয়ে আমাদের উন্মাদনা থাকবেই। সেই গন্তব্যে কারিগরি ও শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি মেনে নিয়েই আমরা যাত্রা করছি না। কিন্তু এশিয়ার গণ্ডি বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বেলাতেও কি আমরা মালদ্বীপ-নেপালে বিভক্ত হবার দিকে এগুচ্ছি? বিশ্বফুটবল নিয়ে উন্মাদনায় যখন ভেসে রইবো, তখন কি আমরা সাফ ফুটবল নিয়ে ছোট্ট স্বপ্নটুকুও দেখতে পাবো না? দেশের ফুটবল কর্তাদের কাছে সেই স্বপ্ন দেখার বায়নাটুকু রইলো।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।