ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

স্কটল্যান্ড নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো আরো কঠিন হবে ।। মার্টিন কেটেল

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪
স্কটল্যান্ড নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো আরো কঠিন হবে ।। মার্টিন কেটেল

ব্রিটেনের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফল বের হল। তাতে স্বাধীনতা কবুল না করে স্কটল্যান্ডের জনগণ ইংল্যান্ডের অধীনে থাকতেই রাজি হল।

কিন্তু এর মধ্য দিয়ে লন্ডনে এখন একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্নটা হল, আগামী মাসের শেষ নাগাদ ব্রিটিশ সংবিধানের একটি নতুন সুরাহা জরুরি হয়ে পড়ছে।  

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবির এই লড়াইটা অনেকটা ওয়াটার লুর যুদ্ধের মতো। (১৮১৫ সালের জুনে বেলজিয়ামের ওয়াটারলু নামক এলাকায় সংঘটিত হয় এ যুদ্ধ। পরে এলাকাটি ব্রিটিশ শাসনভুক্ত হয়। সে সময় তারাও স্বাধীনতা দাবি করেছিল কিন্তু তা হয়নি, তাতে পরাজিত হয় ফরাসিরা। )বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডে ভোটের ফলাফলে স্বাধীনতার বিপক্ষে ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হওয়ায় এর প্রভাব হবে অনেক গভীর ও ব্যাপক। এমনকি স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’র জয় হলেও এর প্রভাব এতটা ব্যাপক ও গভীর হত না।     

স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট পড়েছে বেশি। এ কথার মানেই হল ৩০৭ বছর ধরে স্কটল্যান্ডকে যে অধীনতা দিয়ে আসছিল ইংল্যান্ড, সেটা একেবারে টিকে গেল। এর মানে শুধু এখানেই শেষ না, এই না ভোটের জয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য ইউরোপের বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিশালী গ্রুপ সেভেন বা জি-৭-এ টিকে যায়।

সবচেয়ে বড় যে ঘটনা ঘটল তা হল, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এতদিনকার যে সদস্যপদ ছিল সেটাও হাতছুট হল না যুক্তরাজ্যের। একইসাথে স্কটল্যান্ড ইংল্যান্ড থেকে আরো বেশি বিকেন্দ্রিকরণ হয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য পাবে। তবে রক্ষণশীল ডেভিড ক্যামেরনকে নিয়ে যে ধারণা করা হয়েছিল এ ফলাফলের কারণে তাকে চাইলেই আর জোর করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

আগামী মে মাসে নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতা(লেবার পার্টি) এড মিলিব্যান্ডের নেতৃত্বে যে সরকার আসতে যাচ্ছে তাদেরও আবার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। অবশ্য যদি এ নির্বাচনে স্কটল্যান্ড আলাদা হয়ে যেত তবে ২০১৬ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা হয়ত নাও পেতে পারত লেবার পার্টি।

এ না-ভোটের ফলে এখন স্পেনের মাদ্রিদও খুব সহজেই নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে। কারণ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার দাবিতে যখন স্কটল্যান্ডের জোর প্রচারণা চলছিল ঠিক সে সময় স্পেনের সাংবিধানিক আদালতে সে দেশের কাতালান এলাকা স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের প্রস্তাব তোলে। এতে করে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় স্পেন। এই না-ভোটের জয় মানে, আগের মতো শুক্রবারও সকাল থেকেই ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। কিন্তু হ্যাঁ হলে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটত।       

তবে এই গণভোট কেন্দ্রিক লড়াইয়ের মাঠ থেকে এখনো শিক্ষা নেয়া যায়। এই না ভোটের জয় খুবই নির্দিষ্ট। প্রায় ৫৪ বনাম ৪৬ শতাংশ ভোটের একদম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। দু মাস আগে জনমত জরিপগুলোতে যে ব্যবধান দেখা গেছে তাতে না ভোটের অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। তবে কয়েকদিন আগের জনমত জরিপগুলোতে যে চিত্র দেখা গেছে সেটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও যথার্থ। দ্বিতীয়ত, এই না ভোটের মধ্য দিয়ে যে ভোটাররা ব্রিটিশ ইউনিয়নের এই ক্ষমতাকে রক্ষা করল তারা হল নারী। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে নির্বাচনে অধিকাংশ পুরুষ ভোটাররাই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। পুরুষরা চেয়েছিল স্বাধীনতা। ইংল্যান্ডের থেকে বিভক্তি। নারীরা তা চায়নি। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, ধনিক শ্রেণীর অনেক বেশি ভোট পড়েছে ইংল্যান্ডে থাকার পক্ষে। কিন্তু গরিব ও ঐতিহ্যবাহী পুরোনো এলাকাগুলোতে ভালো করেনি না-ভোটের প্রচারকরা। এসব অঞ্চলে হ্যাঁ মানে স্বাধীনতার পক্ষের এসএনপির (স্কটল্যান্ড ন্যাশনা পার্টি) প্রভাব ছিল বেশি। গরিব এলাকাগুলোতে রক্ষণশীল ক্যামেরনের কনসার্ভিটিভ পার্টির প্রভাব খুবই কম। প্রভাব বেশি লেবার পার্টির। গ্লাসগো, ডোন্ডি, নর্থ লানার্কশায়ারের মতো এলাকাগুলো ছিল স্বাধীনতার পক্ষের দখলে।    

অঞ্চলটিতে বিশৃঙ্খলা হলে যে আপদ ঘটত তা থেকে সরে আসে লেবার পার্টি। দলটির এক সময়কার নেতা গর্ডন ব্রাউন আগেই সেখানকার উত্তেজনা নিরসন করে ফেলেছেন। কিন্তু লেবার পার্টির জন্য সেখানে বামদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে আগের চেয়ে আরো বেশি। এ ঘটনার ফলে বাম রাজনীতি আরো গভীর ও সম্প্রসারিত হবে স্কটল্যান্ডে।      

সার্বিকভাবে দেখলে স্কটল্যান্ডের বাসিন্দাদের জন্য না ভোটের মানে হল, সাময়িক স্থিতি। কিন্তু অন্যদের জন্য এর মানে হল হতাশা। যারা স্বাধীনতার পক্ষে বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছেন তারা ভেবেছিলেন এই হ্যাঁ ভোট তাদেরকে দুধ, মধু ও তেলের মতো সমৃদ্ধ এক দেশে নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই আলোকিত ভোর এমন করে ফুটে ‍ওঠেনি। বরং তাদের জন্য এই ভোর এই সময় খুবই নিষ্ঠুর আর ক্রশের মতো রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এই ক্ষত খুব সহজেই সেরে যাবে না।  

লন্ডনের এই মুহূর্তে জরুরি রাজনৈতিক প্রশ্ন হল ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকতা। এ নিয়ে ইতিমধ্যে লেবার পার্টির গর্ডন ব্রাউন গত সপ্তাহে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুক্রবার থেকে নতুন করে বিকেন্দ্রিকতার ইস্যু নিরসনে কাজ শুরু হবে। তবে গত কয়েকদিনের উত্তেজনার পরই হয়ত এই প্রতিশ্রুতি এসেছে। এই প্রতিশ্রুতি অবশ্যই এখন আলোচনার টেবিলে উঠানো জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্তত আগামী মাসের মধ্যে এটা করতে হবে। অবশ্য স্কটল্যান্ড, ইংলিশ, ওয়েলস উত্তরাঞ্চলীয় আইরিশ ও স্থানীয় অন্য সব অঞ্চলের নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে এই আলোচনা এবং সমঝোতায় পৌঁছানো এত সহজ নয়। বেশ কঠিন ও জটিল হয়ে উঠবে। তবে সবকিছুর পরও এখনই এই আলোচনার তোলার সবচেয়ে ভাল সন্ধিক্ষণ।

*লেখাটি ১৯ সেপ্টেম্বর গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়



মার্টিন কেটেল: গার্ডিয়ানের সহযোগী সম্পাদক




অনুবাদক: শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময় ১৬৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।