নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সার্কভুক রাষ্ট্রগুলো থেকে আমদানি বাড়ানোকে গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে। ভারত যেসব পণ্যের আমদানি করে থাকে সার্কভুক্ত দেশ থেকে সেসব পণ্য এনে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় কমাতে নতুন ধরনের উদ্যোগ নিতে চায় মোদির সরকার।
সেকারণেই মোদি তার ক্ষমতা গ্রহণের শপথ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সার্কের সাত আঞ্চলিক জাতিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতকে এই আমন্ত্রণই নতুন ধরনের শক্তি যুগিয়েছে। যেমন মোদির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশা করছে, সার্কের এ সফরে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ভূমিকা রাখবে এ আমন্ত্রণ। এমনকি নন-ডিসক্রিমিনেটরি মার্কেট একসেস (এনডিএমএ) বা বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে দীর্ঘ বাণিজ্য বৈষম্য বাতিলের যে দাবি করে আসছে ভারত সেটার সুরাহার ব্যাপারেও আশা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের বাণিজ্য দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নন-ডিসক্রিমিনেটরি মার্কেট একসেসের ব্যাপারে ইতিমধ্যে দুদেশের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আমরা আশাবাদী যে, রাজনৈতিক উত্তেজনা শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ সংক্রান্ত বাণিজ্য চুক্তিও খুব শিগগিরই সাক্ষরিত হবে। ’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দেয়া বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) ইশতেহারে সার্ক ও আশিয়ানের মতো আঞ্চলিক ফোরামগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এর মানে হবে এসব ফোরামে ভারতের দিক থেকে তার অবস্থানকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অনুকূল জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা বৈষম্যমুক্ত অবাধ বাজার প্রবেশের স্ট্যাটাসে নিয়ে যাওয়া। কেউ এটাকে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মনে করলেও এই স্ট্যাটাসই ভারতের সামনে সার্কের সাফটার (সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড এরিয়া) পূর্ণ বাস্তবায়নের বাধা দূর করে দেবে।
দিল্লি ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’ এর অধ্যাপক রাম উপেন্দ্র দাস বলেছেন, ‘সাফটা চুক্তির জন্য এনডিএমএ-ই (বৈষম্যমুক্ত অবাধ মার্কেট একসেস) হলো ভালো নমুনা যা অক্ষরে অক্ষরে এবং স্পিরিটির দিক থেকে বাস্তবায়িত হবে। এতে করে আমরা অন্যান্য দেশে ব্যাপকভাবে প্রবেশের একটা সুযোগ ও অবস্থান পেয়ে যাবো। কিন্তু এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের অজুহাত তোলার কোনো কারণ বা যুক্তি নাই যে, কেন পাকিস্তান এনডিএমএ-কে মেনে নেয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করবে না। ’
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের রোডম্যাপের সঙ্গে ভারত পাকিস্তান উভয় পক্ষই একমত হয়েছে। রোডম্যাপের বক্তব্য হলো, ২০১৩ সালের মধ্যে সাফটার অধীনে ভারত তার বিশাল পণ্য তালিকাকে ১০০ পণ্যে নামিয়ে আনবে।
গত এপ্রিলে ভারতকে বাজারে বৈষম্যমুক্ত প্রবেশের স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে পাকিস্তান মন্ত্রীপরিষদের একটি বৈঠক নির্ধারিত হয়। কিন্তু সেটি ইসলামাবাদ বাতিল করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদ চেয়েছিলো ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে। তবে শেষতক ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজে নির্ধারিত না করেই ১শটি স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা বিনিময় করেছে। যেটাকে নন-পেপার শেয়ারিং বলা হয়। যাতে বর্তমান ৬১৪টি পণ্যের বিকল্পে কোনো আনুষ্ঠানিক শুল্ক দিতে না হয়।
পরিবর্তে পাকিস্তানকে ১২০৯টি পণ্যের অনুমোদন দেয়ার কথা। তবে বর্তমানে ভারতের দিক থেকে এসব পণ্য নিষিদ্ধ করা হলেও শুধু অনুমোদিত ১৩৭টি পণ্যের বিপরীতে ভারতের সব পণ্যের বিনিময় বাণিজ্যের জন্য স্থলপথ খুলে দেয়ার কথা বলা হয়।
সার্কের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য দপ্তর অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বড় ধরনের বাড়তি বাণিজ্যিক উদ্যোগ যুক্ত করেছে। সেইসঙ্গে সার্কভুক্ত আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপাল থেকে পণ্য আমদানি বাড়াতে শিল্প পরামর্শও নিতে পারে ভারতের বাণিজ্যিক দপ্তর।
ওই দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে আমাদের আরো আমদানি করা দরকার। এসব দেশের সঙ্গে আমাদের বড়ধরনের বাড়তি বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা জরুরি। যদি একটা পয়েন্ট পর্যন্ত আমরা এই আমদানি ভারসাম্য ঠিক না রাখি, তাহলে ভারত থেকে এসব দেশের কেনাকাটা বা আমদানি ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। চীনের সঙ্গে আমাদের যে সমস্যা হয়েছে ঠিক একই সমস্যা হতে পারে। ’
২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সার্কভুক্ত দেশে ভারতের নিবন্ধিত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হলো ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। যেটার আকার হলো ১৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
অথচ ঠিক এ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রপ্তানি হিসাব হলো ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ভারতের আমদানি হলো মাত্র শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ।
তার মানে সর্বশেষ অর্থবছরে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ থেকে ভারতের আমদানি বাণিজ্যে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশে নেমে আসে। যেটির আকার হলো ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এতে ভারতের দিক থেকে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
পণ্য আমদানি বাণিজ্য ছাড়ও মোদির সরকার সার্ক অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বাণিজ্য সেবা বাড়াবে। বিশেষ করে বহুমুখী ভিসা পদ্ধতি ব্যবহার করে পর্যটন ও চিকিৎসা ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করবে।
* নিবন্ধটি ২৬ নভেম্বর ইন্ডিয়া টাইমসে প্রকাশিত হয়
অনুবাদক: শাহাদাৎ তৈয়ব
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪