সিলেটে মঙ্গলবার এক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে বুঝা যায়, কারা হত্যা করতে পারে।
এই ব্লগারের অপরাধ, তিনি লেখালেখি করতেন! তিনি কি লিখতেন, কেন লিখতেন এইগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হবে অতীতের মতো। কিন্তু যে বিষয়টি আর বলা হবে না সেটি হচ্ছে লেখার জবাব লেখা দিয়েই দেয়া যেতে পারে। শারীরিক আঘাত কিংবা হত্যাকাণ্ড তো কোন সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এই সিলেটেই দুই দিন আগে সরকার দলীয় এক এমপি বলেছেন, তার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে তিনি ডক্টর মোহম্মদ জাফর ইকবালকে জনসম্মুখে চাবুক মারতেন! প্রফেসর জাফর ইকবালও লেখালেখি করেন এবং লেখার মাধ্যমেই মতামত প্রকাশ করেন। এই লেখার মাধ্যমেই তিনি মত দিয়েছিলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনো কেবল একটি অঞ্চলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য হতে পারে না। সিলেটিদের জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কোটার বিরুদ্ধে তিনি লেখালেখি করেছেন। তাই তাকে শুনতে হলো জনসম্মুখে চাবুকের বাড়ি খাবার কথা! তাও আবার সরকার দলীয় একজন এমপির মুখ থেকে!
এরা বুঝতে পারলো না, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করার ক্ষেত্রে কোটা সিস্টেম চালু করলে আখেরে সেই অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদেরই ক্ষতি হবে। দিন শেষে তো দেশের সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এমন তো না, সিলেট কোন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী-যার জন্য সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের আলাদা সুযোগ দিলে তারা লাভবান হবে। এখন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় যদি নিজেদের এলাকার কোটা চালু করে তাহলে লেখাপড়ার মান বিশ্ববিদ্যালয় সুলভ হবে কিনা তা অবশ্য এদের মাথায় আসছে না।
লেখক, ব্লগার হত্যাকাণ্ড চলছে, হুমকি ধামকিও চলছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে সাধারণ মানুষের করণীয় কি? নিশ্চয়ই আইনের আশ্রয় নেয়া। সেটি নিতে গেলেও যে ধরনের নাজেহাল হতে হয় তার প্রমাণ দুই দিন আগে মা দিবসে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারীর উপর তেড়ে আসা!
সেই নারীর দোষ কি ছিল? তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই নববর্ষে নারীর উপর যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করছিলেন এবং অপরাধকারীদের শাস্তি দাবি করছিলেন। আর তাকেই কিনা পুলিশের হাতে নাজেহাল হতে হলো!
তাহলে কি বিষয় এমন দাঁড়ালো- এই সমাজে কিছু লেখা যাবে না, প্রতিবাদ করা যাবে না। কেবল চোখ বন্ধ করে অন্যায় সহ্য করে যেতে হবে! যে সমাজে লেখালেখি করাকে প্রায় অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; যে যার মতো ইচ্ছে হত্যা করছে, হুমকি দিচ্ছে; সেই সমাজ আর যাই হোক সুস্থ সমাজ হতে পারে না। তবে কি এই জনপদে আলোকিত মানুষ হওয়াও অপরাধ!
আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক ও গবেষক, tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
জেডএম