কৃষি অর্থনীতি কি?
কৃষি অর্থনীতি একটি সম্পূর্ণ প্রায়োগিক অর্থনৈতিক বিজ্ঞান। অর্থনীতির বিভিন্ন নীতি যখন কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে কৃষি অর্থনীতি বলে।
কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব
কৃষি অর্থনীতি কৃষককে বিভিন্ন ফসল, পশু, মাছ ইত্যাদির লাভজনক প্রজাতি নির্বাচন ও উৎপাদন করতে পরামর্শ প্রদান, ফসল উৎপাদনের জন্য জমি নির্বাচন ও তাতে বিভিন্ন কাঁচামাল যেমন সার, বীজ, পানি ইত্যাদি ব্যবহারে দিক নির্দেশনা প্রদান, কৃষি ঋণ গ্রহণ ও এর যথার্থ ব্যবহারে তথ্য প্রদান, কৃষি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান, কৃষি পণ্য বিপণন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে এবং সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতির বিবেচনায় কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
কৃষি অর্থনীতি ব্যাংকিং বিষয়ক তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে অবদান রাখতে সহায়তা করে। কৃষি অর্থনীতি ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা তৈরিতে শিক্ষা প্রদান, কৃষি ব্যবসা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক শিক্ষা প্রদান, ফার্ম ব্যবস্থাপনা বিষয়ক শিক্ষা প্রদান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা বিষয়ক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের দারিদ্র্য দূর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে সহায়তা করে।
যা পড়ানো হয়
কৃষি অর্থনীতি সাধারণত সাধারণ অর্থনীতি, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং, সমাজ বিজ্ঞান, গ্রামীণ উন্নয়ন এর প্রায় সব প্রধান দিক পড়িয়ে থাকে। আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মৌলিক অর্থনীতি, ব্যষ্টিক অর্থনীতি, সামস্টিক অর্থনীতি, উৎপাদন অর্থনীতি, গাণিতিক অর্থনীতি, প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থনীতি, পরিবেশ অর্থনীতি, কৃষিনীতি ও পরিকল্পনা, কৃষি উন্নয়ন অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, বাংলাদেশের অর্থনীতি, খামার ব্যবস্থাপনা, কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, কৃষি বিপণন, গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরিকরণ, দাম বিশ্লেষণ ও দাম নির্ধারণ, কৃষি সমবায়, হিসাববিদ্যা, অর্থ সংস্থান বিদ্যা, ব্যাংকিং-র নীতি ও অনুশীলন, ব্যাংকিং-এ বিনিয়োগ ও আধুনিকায়ন, কৃষি ঋণ ও টাকার বাজার, কৃষি ঋণ ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান, দারিদ্র্য গবেষণা, গ্রামীণ উন্নয়ন, সরকার এবং রাজনীতি, নৃবিজ্ঞান, মৌলিক পরিসংখ্যান, প্রায়োগিক পরিসংখ্যান, গবেষণা পদ্ধতি, মান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়। সেই সাথে কৃষিতত্ত্ব, উদ্যানতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, কৃষি সম্প্রসারণ, পশু বিজ্ঞান, মাৎস্যবিজ্ঞান, ইংরেজি, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন সিস্টেম, ই-কমার্স ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।
এবং অনার্সের শেষ সেমিস্টার বা টার্মে সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এগ্রিবিজনেস ফার্ম অথবা কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করানো হয়ে থাকে।
চাকরির ক্ষেত্র
কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটরা দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরামর্শদানকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, এগ্রিবিজনেস ফার্ম, বহুজাতিক কোম্পানি ইত্যাদিতে সাফল্যের সাথে শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছে। কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটরা নিম্মোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে আবেদন করার যোগ্যতা রাখেঃ
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনঃ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাভুক্ত সরকারি সকল প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে আবেদন করতে পারে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরঃ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি অর্থনীতির বিশেষ ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে যা বর্তমানে উপাজেলাওয়ারি করার কাজ চলছে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট (IFPRI), আন্তর্জাতিক ফসল গবেষণা ইনস্টিটিউট (ICRISAT), মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT) ইত্যাদিতে কৃষি অর্থনীতির স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে যেখানে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ দেয়া হয়।
স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানঃ সকল স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড ইত্যাদিতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের স্বতন্ত্র বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়।
ব্যাংকঃ কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটরা সকল সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আবেদনের যোগ্যতা রাখে। বিশেষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ইত্যাদিতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এ কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের আলাদা ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
কনসালটেন্সি ফার্মঃ ক্যাসেড (CASSED), ইনোভিশন (Innovision) ইত্যাদিতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটরা খুব সহজেই চাকরি পেতে পারে।
কোম্পানিঃ প্রায় সকল সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের চাহিদা রয়েছে । বিশেষভাবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিঃ, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিঃ, জিল বাংলা সুগার মিলস লিঃ, পাবনা সুগার মিলস লিঃ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওঃ এশিয়া ফাউন্ডেশন, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন, ইউএসএআইডি, আইএফএডি, ইউএসডিএ, ড্যানিডা, এফএও, আইডিই, কেয়ার, ব্র্যাক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সানেট, ডেভেক্স, আশা, প্রশিকা, ডিএফআইডি, ওয়ার্ল্ড ফিশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (ব্যাট), হরটেক্স ফাউন্ডেশন, কারিতাস, এসএফডিএফ, বিএমডিএ, জিআইজেড, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, এসকিউ গ্রুপ, মাহদিন গ্রুপ, এগ্রো ডাইভারসিটি কমপ্লেক্স ইত্যাদিতে কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েটদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
একেএম গোলাম কাওসার: প্রভাষক, কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদ, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, baukausar@gmail.com