ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

হুকার মাঝেও দেখি সাকার স্বভাব!

নিঝুম মজুমদার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
হুকার মাঝেও দেখি সাকার স্বভাব!

টিভির পর্দায় এই গত কয়দিনে যে ছেলেটি আমার নজর কেড়েছে সে হচ্ছে সাকার ছেলে হুকা। পুরো নাম হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

বড় ছেলে (ফাকা) ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীকে আমার কিছুটা শান্ত শিষ্ট মনে হোলো। তাদের বাবার এই ভয়াবহ সময়েও হুকা মাথায় জেল দিয়েছে, কায়দা করে চুল আঁচড়েছে, পাকিস্তানী কাবুলি স্যুট পড়েছে।

২০১০ সালে হুকাকে আমি যা দেখেছি তার তুলনায় ওর ওজন বেড়েছে বেশ। একটা দুলকি চাল আছে ওর ভেতর। বেশ মোটা আর তরতাজা হয়েছে এই পাঁচটা বছরে। দুটো গাল টমেটোর মত টসটসে হয়েছে। ওর ক্রোধে দুই হনু বেশ রক্তিম আকার ধারন করে। এটা আমার চোখ এড়ায়নি।

আমি খুব সুক্ষ্ণভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি যে হুকার ভেতরে সাকার মোটামুটি সব গুনাগুন (বদার্থে) রয়েছে। সাকা যেমন তাচ্ছিল্য করে কথা বলত, মুখটাকে উত্তর আর দক্ষিণে উঠিয়ে দিয়ে কথা বলত, হুকা ঠিক তাই করে। ওর ভেতর বাপের ফাঁসি নিয়ে আমি কোনো চিন্তাই দেখিনি। চোখে কালো সানগ্লাস, কাবুলি সুট, মাথায় জেল, ভাঁজ করে চুল আঁচরানো এসব সব আমাকে বেশ চিন্তিত করে দিয়েছে।

এই বিচারের ফলে আমরা ৪৪ বছর আগের অপরাধের একটা ন্যায্য সমাপ্তি টানতে চেয়েছি। আমাদের বাবা-চাচা-মা-বোন মুক্তিযুদ্ধে সাকাদের হাতে খুন হয়েছেন, মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, আমরা সেসব অপরাধের বিচার করেছি আদালতে। সভ্য সমাজে যা হয়, তাই হয়েছে। এখানে প্রতিহিংসার কিছু নেই। অপরাধ করেছে, শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু হুকাকে দেখে মনে হোলো, হুকা প্রতিশোধ নিতে চায় ভবিষ্যতে। ফেসবুকে দেখতে পেলাম হুকা নাকি শেখ হাসিনাকে দেখে নেবে বলেও জানিয়েছে। এসব প্রতিটি ব্যাপার অশনি সংকেত আমাদের ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য।

আমি যদি খুব বেশি ভুল না করে থাকি তাহলে এটা বলাই যায় যে খালেদা জিয়া খুব নিকট ভবিষ্যতে এই হুকাকে কিংবা তার মা ফাকা (ফারহাত কাদের) কে সংসদ সদস্য হবার জন্য মনোনয়ন দিবেন কিংবা তাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপিতে যোগ দেয়াবেন। এদের দুইজনের একজন রাজনীতি করবে আমি নিশ্চিত। তাহলে ঘটনা যা হচ্ছে সেটা হচ্ছে, এই রাজাকার পরিবারের কাছ থেকে আমরা ভবিষ্যতে আরো কিছু দেখতে যাচ্ছি যদিও পুরো ব্যাপারটা আমার অনুমান। আমি ভুল প্রমাণিত হতে পারি।

যদি একটা দেশের ন্যায় বিচাররের ফলে, ন্যায্য বিচারের ফলে এমন একটা পরস্থিতির সম্ভাবনা দেখি তাহলে প্রস্তুতিটা আমাদের তরফ থেকেও নিতে হবে। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতিটা হচ্ছে আমরা তো এখন এক ধরনের কলম যুদ্ধ, ইন্টেলেকচুয়াল যুদ্ধ কিংবা মানসিক একটা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছিই উপরন্তু একই সাথে আমরা হয়ত আমাদের সন্তানদের ট্রেনিং দিয়ে যাব এদের সাথে ফাইট করবার জন্য যদি আমরা বেঁচে না থাকি।

এইতো, আমার স্ত্রীকে গতকালই এসব দেখে বলছিলাম যে আমাদের ছেলেকে ভবিষ্যতে আইনজীবি হবার জন্য উৎসাহিত করব। ওকে প্রস্তুত করতে হবে, তৈরী করতে হবে। হুম্মাম, ফাকাদের সাথে লড়াই করতে হলে আমাদের এভাবেই তৈরী করতে হবে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে, আমরা তো চেয়েছিলাম এই বিচার শেষ হলে দেশকে নিয়ে অন্য পর্যায়ে কাজ করব। ভেবেছিলাম বিচারের পরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সামাজিক মূল্যবোধ, এই সময়ের তরুনদের শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা তাদেরকে নানাভেব সহযোগিতা আর পরামর্শ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। কত দিনা আর তৃতীয় বিশ্ব কিংবা উন্নয়নশীল দেশের তকমা লাগিয়ে বসে থাকতে হবে। ভেবেছিলাম এই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে আইন-শৃংখলা এগুলো নিয়ে চিন্তা শুরু করব, কাজ করব। ভেবেছিলাম এক নতুন বাংলাদেশ শুরু হবে।

হুকার কিংবা একাত্তরের ঘাতকদের এক একটা ছেলে মেয়েদের শাস্তি পরবর্তী কথা বার্তা দেখে তো মনে হচ্ছে এরা আমাদের ভালো থাকতে দেবে না। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করবার মনে হয় সময় এসেছে।

প্রিয় পাঠক, অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলানিউজের একজন নিয়মিত পাঠক নিঝুম মজুমদারের এই লেখাটি ফেসবুক থেকে নিয়ে বাংলানিউজকে ইমেইল করেছেন। তার প্রত্যাশা বাংলানিউজে লেখাটি প্রকাশিত হোক। ই-মেইল বার্তায় তিনি আরও লিখেছেন , বাংলাদেশে এখন ফেসবুক দেখা যায় না, সে কারণে কেবল তারই নয়, অনেকেরই এই প্রত্যাশা যে বাংলানিউজ যেনো লেখাটি প্রকাশ করে। ওই পাঠক ই-মেইলে নিঝুম মজুমদারের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন বাংলাদেশের এই মেধাবী সন্তান বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট অব নিউ সাউথ ওয়েলস-এর ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল রিসার্চ অ্যানালিস্ট তিনি। আর লিগ্যাল গিল্ড’র একজন কনসালট্যান্ট। এই লেখায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে নিঝুম মজুমদারের ক্রোধ, ঘৃণা ও উদ্বেগ যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি দেশের জন্য তার উচ্চাকাঙ্খাওফুটে উঠেছে। অনেকের প্রত্যাশায় লেখাটি বাংলানিউজের পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো।  


বাংলাদেশ সময় ১২২২ ঘণ্টা নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এমএমকে

** ফকা ও সাকাচৌ, একই কারাগারে শেষ নিঃশ্বাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।