‘দুর্জনের ছলের অভাব হয় না’। বিশ্বক্রিকেটের মোড়লরা সে পথেই হাঁটছে।
এবার শ্রীলঙ্কার বেলায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়েই হয়েছিল আইসিসির ছলাকলার শুরু। আর তার সর্বশেষ রূপটা চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে বাংলাদেশবিদ্বেষের আঁতুড়ঘরটা ছিল ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
ওয়েস্ট উইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছিল ভারতের জন্য অশ্রুবর্ষণের আর বাংলাদেশের জন্য উতল উল্লাসের। ‘নিজেদের দিনে’ ১১ জন বঙ্গশার্দুল ‘মাইটি ইন্ডিয়াকে’ বিশ্বকাপ থেকে পত্রপাঠ বিদায় করে দেয়। আর তার প্রতিক্রিয়ার ঢেউ আছড়ে পড়ে গোটা ভারতে। শুরু হয় ধোনি-বাহিনির মুণ্ডুপাত। উচ্ছৃঙ্খল ভারতীয় দর্শক-সমর্থকেরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং ধোনিসহ অনেকের বাড়িঘরে পর্যন্ত হামলা করেছিল তারা। আর ভারতীয় মিডিয়াও বাংলাদেশ দলের বিরুদ্ধে নেমেছিল মুক্তকচ্ছ হয়ে। ভাবখানা এমন যেনবা ভারতকে বিশ্বকাপ থেকে বিদেয় করে দিয়ে মহাপাপ করে ফেলেছে মাশরাফি-বাহিনি! এরপর থেকে ভারতের প্রথম সারির মিডিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে ‘‘কমজোরি দল’’ বলে ঠাট্টা করে নিচুমনের পরিচয় দিয়ে গেছে ক্রমাগত।
এরপর এলো অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ। এ যেনবা ছিল বাংলাদেশ দলকে হাত-পা বেঁধে রাখারই বিশ্বকাপ। শিখর ধাওয়ানের বাউন্ডারি লাইন টাচ করে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচ ধরা এবং এরপর রিভিয়্যু-এর সুযোগ না দিয়ে তাকে আউট ঘোষণা করা। সবই যেন ছিল আগে থেকে লিখে রাখা নাটকেরই নির্লজ্জ মঞ্চায়ন!
কিন্তু ১১ জন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুঙ্কার কিছুতেই থামানো যায়নি। গুলি খাওয়া বাঘের মতোই দ্বিগুণ তেজে ফিরে এসেছিল বাংলার তরুণরা। বাংলাদেশে খেলতে এসে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে ধবল ধোলাই পর্যন্ত হতে হয়েছে; নয়তো মেনে নিতে হয়েছে সিরিজ পরাজয়। এরপর টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপেও মাশরাফি-বাহিনি রানার্স আপ হয়েছে। এটা সহ্য হচ্ছিল না ক্রিকেট মোড়লদের। বিশেষত মোড়লদের মোড়ল ভারতের। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের পর্ শ্রী নিবাসন নামের শঠকুলশিরোমণি বিদায় নিলেও তার অনসৃত নোংরা খেল তবু বন্ধ হয়নি। তার কদর্য কোটিল্যনীতিটি এখনো বহাল। যার মর্মকথা হচ্ছে, বাংলার বাঘেদের আর বাড়তে দিও না, যে করেই হোক ওদের থামাও।
এভাবেই এক বড় মোড়লের অদৃশ্য অঙ্গুলি নির্দেশে আইসিসি লেগে আছে বাংলাদেশের পেছনে। তাসকিন আর আরাফাত সানির ওপর অন্যায় নিষেধাজ্ঞার কোপ চালিয়েছে তারা। নিজেদের নিয়ম নিজেরাই লঙ্ঘন করেছে বারবার। যেখানে সতর্ক করার কথা সেখানে করেছে নিষিদ্ধ।
তাসকিন ও আরাফাত সানি ছোট মাঠের নন, বরং তারা বড় মাঠের খেলোয়াড়। বিশ্বমঞ্চ-কাঁপানো খেলোয়াড়। নিজেদের ক্রিকেটিং ক্যারিয়ারে এবার এক অভিনব অগ্নিপরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে তারা। মুষড়ে পড়ে, চুপসে গিয়ে নয় বরং বাঘের মতো ফিরে আসার জন্য লড়াইয়ে নামতে হবে তাদের। অপবাদ মিথ্যা প্রমাণ করার লড়াই এখন তাদের সামনে। সেজন্য চাই ধৈর্য এবং ধনুর্ভঙ্গ পণ; আর চাই হার-না-মানা মনোবল। সেটা তাদের ঢের আছে। তাদের জন্য আছে বাংলার ষোল কোটি মানুষের ভালোবাসা। আছে গোটা ক্রিকেটবিশ্বের আরো কোটি কোটি বিবেকবান মানুষের নীরব নৈতিক সমর্থন। সন্দেহ নেই, ফিরে আসার লড়াইটা বড়ই স্নায়ুক্ষয়ী; কিন্তু এমন লড়াইয়ে জিতে ফিরে আসাটাই তো প্রকৃত বীরের কাজ। ক্রিকেটের আর দশটা লড়াইয়ের চেয়ে খুব বেশি বড় নয় এ লড়াই। মুরলিধরণরা পারলে তাসকিন-সানিরা কেন পারবে না! এতো সহজে তো হাল ছাড়ার পাত্র নয় বাঘ। আমরা দেখতে চাই, ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বিপুল গর্জনসহ দুনিয়া কাঁপিয়ে ফিরে আসছে বাংলার দুই তরুণ বাঘ। দুনিয়ার মাঠে মাঠে আবার হুহুঙ্কারে লাফাচ্ছে ঝাঁপাচ্ছে তারা। ‘টাইগার টাইগার বার্নি ব্রাইট...!’
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
জেডএম/