ঢাকা: সব রকমক জরিপ, জ্যোতিষীদের ভাগ্য গণনা ও বিশ্ব মিডিয়ার আগাম খবরে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেট মনোনীত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির জয় ছিল সময়ের ব্যাপার! কোনো হিসাবেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ট ট্রাম্প’র বিজয়ের সম্ভাবনাটুকু আলোচনায় আসছিল না!
বিজয়ী বীরের পাশে কে না থাকতে চায়? আবার সে চাওয়ার মধ্যে যদি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের চমৎকার সম্পর্ক; গভীর বন্ধুত্ব! সুতরাং হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে ‘ভোটার বিহীন’ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপ দিয়ে খুব শিগগিরই একটা নির্বাচন আদায় করা সম্ভব হবে।
গত ৭ বছর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য কত কী-ই না করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার প্রতিটা ভাষণে যতবার এসেছে জাতীয় ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু, তার চেয়েও বেশি বার এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক হয়রানির শিকার নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়টি!
সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস হিলারিকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাংলাদেশে খুব শিগগিরই অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন না? নিশ্চয়-ই করবেন।
এমন বিশ্বাস থেকেই বোধ হয় বিপুল ও ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট বিএনপি ভেতরে ভেতরে সুখ অনুভব করছিল। যেমনটি তারা ভারতের নির্বাচনের আগে বিজেপির মোদিকে নিয়ে করেছিল!
মার্কিন মুল্লুকে যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত হিলারি ক্লিনটন তখন হঠাৎ খবর এলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হিলারির সাক্ষাতের একটি ছবি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করেছেন হিলারি ক্লিন্টন।
আর যায় কোথায়! উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল বিএনপি। খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল তার ফেসবুকে ওই ছবি পোস্ট করলেন। প্রেস উইং থেকে বাংলাদেশের মিডিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হলো সুখবরটি! বেশ কয়েকটি মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে নিউজও করল।
বাংলাদেশ সফরে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা ছবি নির্বাচনী প্রচারণায় হিলারি নিজে ব্যবহার করেছেন? নাকি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাঙালি কমিউনিটির বিএনপি সমর্থকরা করেছেন-সেটি যাচাই না করেই গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপির বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এতক্ষণে হয়তো থেমে গেছে। ট্রাম্পের বিজয় সেটা থামিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু একটা বিষয় পরিস্কার হয়েছে, বিপুল এবং ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও বিএনপি বার বার বিশ্বশক্তির উপর ইমান আনে। তাদের ভেতরে এই প্রতীতি জন্মায়-জনগণ তো নয়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমেরিকা, হিলারি, ভারত, মোদির আশীর্বাদ দরকার।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে কথা হয় কিছুক্ষণ আগে। তিনিও একমত ‘পরের মুখে ঝোল খাওয়ার বদাভ্যাস ত্যাগ করতে হবে বিএনপিকে। ’ যে জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তা দলটির আছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। হুদাই মোদি, হিলারি নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই।
দলের বিদেশনীতি কী হবে-সেটা যথাযথভাবে ঠিক করে নিয়ে বৈদেশিক বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কোনো দেশ বা দলের বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে ত্রাণকর্তা হিসেবে ধরে নিয়ে আলগা লাফা-লাফির কী দরকার? হিলারি বা মোদি নয়, বিএনপির সুদিন ফেরাবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণ!
এ সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় ততো কঠিন হবে না। তবে জনগণের উপর আস্থা না রেখে কেবলা পরিবর্তন করে ভারতমুখী হওয়ার চেষ্টা করলে অথবা মার্কিন মুল্লুকের কোনো একটি বিশেষ দল বা ব্যক্তির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়লে জনসমর্থন হারাতে পারে বিএনপি!
কারণ, সহজ-সরল বাঙালি সময় মতো অনেক জটিল হিসাবও মিলিয়ে ফেলে!
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
এজেড/এসআর