বিশেষ করে তরুণ লিখিয়েরা ওনার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হতেন। ওদের পথ্য এবং পাথেয় উনি খুব ভালোভাবে বাতলে দিতেন।
তিনি কখনোই পাণ্ডিত্য জাহির করতেন না। তবে পাণ্ডিত্য ওনাকে ঠিকই জাহির করে দিয়েছিল। এটার একটা অনন্য ঝিলিক ঠিকরে বের হতো। যা সিদ্দিক ভাই লুকাতে চাইলেও পারতেন না। তাঁর এই ঝিলিক মানুষকে ধাঁধায় ফেলতো না, বরং আলোকময় পথ দেখাতো।
সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে মার্ক টোয়েনের জীবন থেকে একটি মজার ঘটনা বর্ণনা দিলেন। জনৈক বন্ধু মার্ক টোয়েনের ঘরে ঢুকে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত স্তূপীকৃত বইয়ের পাহাড় দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি রে বইগুলোর জন্য কিছু শেলফ কিনতে পারিস না। ’ মার্ক টোয়েন বললেন, ‘বন্ধু, বই যেভাবে জোগাড় করেছি, সেভাবে তো শেলফ জোগাড় করতে পারি না। ’ সিদ্দিক ভাই ওনার বইগুলো মার্ক টোয়েনের মত করে জোগাড় না করলেও ওনার পড়ার ঘরে ঢুকলে যে কারোই মার্ক টোয়েনের কথাই মনে পড়ে যাবে।
ম্যাক্সিম গোর্কির মতই ওনার যাত্রা ছিল 'পৃথিবীর পথে'। বড়ই মানবিক ছিলেন। আদম সন্তানদের সাম্যে বিশ্বাস করতেন। শোষণ ও বৈষম্যকে ঘৃণা করতেন মনেপ্রাণে। তথাপি তিনি ধর্মীয় বিধানকে উপেক্ষা করতেন না।
কিছু প্রগতিবাদী মনে করেন-ধর্মীয় কারণে দাড়ি রাখা প্রগতিবিরুদ্ধ, এক প্রকার গোঁড়ামি। অঞ্জতাপ্রসূত ঞ্জানহীন অহংবোধ থেকে এটি হয়। আবার হুজুর-মাওলানারা মনে করেন-প্রগতিশীল মানুষজন দাড়ি রাখেন না কিংবা অন্য ধর্মীয় বিধান পালন করেন না। এটা বিদ্বেষ ও মূর্খতাপ্রসূত। সিদ্দিক ভাইয়ের শ্মশ্রুমণ্ডিত সৌম্য চেহারা উভয় শ্রেণির মানুষের জন্য এক মহান শিক্ষা।
টলস্টয়ের মৃত্যুর পর তাঁর কোটের পকেটে হযরত মুহাম্মদ(স.)-এর জীবনী লেখা বই পাওয়া যায়। কেউ বলেন যে, তিনি ইসলাম ধর্মীয় ভাবালুতায় আক্রান্ত ছিলেন। হ্যাঁ, একেবারেই অন্তর্গত ভিতরের একান্তই একাকি মানুষ, যেথায় কেউ প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে সেই মানুষটি তাঁর সৃষ্টিকর্তা থেকে কিছু বিশেষ মেসেজ পেতে পারেন। এখানে একাকি মানুষটিরও কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কী মেসেজ পাবেন-তা সৃষ্টিকর্তাই নির্ধারণ করেন। তবে এটুকু বলা যায়-উন্নত বা নিষ্পাপ আত্মার অধিকারী একাকি মানুষ উন্নত ঈঙ্গিতই পেয়ে থাকেন।
আমি যতটুকু সিদ্দিক ভাইকে জেনেছি তাতে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি-ওনার ভেতরকার একান্ত একাকি মানুষটি অসম্ভবরকম উন্নত ছিল। পরিচ্ছন্ন ইমেজের বিরল প্রকৃতির মানব ছিলেন। গল্পপ্রিয় মানুষ ছিলেন। মানুষের সৎ গুণে ওনার মুগ্ধতা ছিল।
কত যে স্মৃতি উনার সাথে! উনি চলে গেলেন। আমরা কী নিয়ে বাঁচব। সমাজ তো আজ মানুষশুন্য। তাঁর শিখিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নিয়েই হয়তো জীবনের বাকি পথটুকু চলতে হবে। বিখ্যাত তিনটি প্রশ্নের অন্যতম হলো-মানুষ কী নিয়ে বেঁচে থাকে? এর উত্তর- মানুষ পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাবাসি করে বেঁচে থাকে।
আরেকটি বার নয়ন ভরে দেখার ইচ্ছে ছিল। এমন মমতাভরে কে জড়িয়ে ধরবে!বিদায় হে বিনয়ী বন্ধু ,বিদায়। আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন।
লেখক: বিচারক, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, পিরোজপুর।