বিড়ির স্বাস্থ্যঝুঁকি সিগারেটের চেয়ে বেশী এই নব-আবিষ্কারের কথা অর্থমন্ত্রী বিগত কয়েক দিন ধরেই বলেছিলেন। প্রাক-বাজেট বিভিন্ন আলোচনায় তিনি তার এই নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে বারবার বলেছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, নিকোটিন নামক পদার্থের কারণে তামাকদ্রব্য গ্রহণকারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। সব তামাক জাতীয় দ্রব্য যথা বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দ্দা, সাদা পাতায় নিকোটিনের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদির মাঝে বিড়িকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে তাকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দায়ী করে জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং ধূমপানে জড়িত চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় তাকে তিন বছরের মধ্যে বন্ধ করার সংকল্প ঘোষণা কোনো ভাবেই যুক্তিতে মেলে না।
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, ধূমপানের মাঝে বিড়ির অংশীদারিত্ব মাত্র দুই শতাংশ, বাকী ৯৮ শতাংশ সিগারেটসেবী। অর্থমন্ত্রীর সংকল্প অনুযায়ী যদি বিড়ি উৎপাদন এদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কি জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং ধূমপানজনিত চিকিৎসা ব্যয় থেকে মুক্তি পাবে?
সাধারণজ্ঞানের ইতিবাচক জবাব দেয় না। কেননা, তখনও সিগারেট থাকবে ফলে সিগারেটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ধূমপানজনিত চিকিৎসা ব্যয় অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও অতীতে ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে আমরা ফেনসিডিল নামক কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ করে তার উৎপাদন বন্ধ করেছি। ফলাফল আমরা সবাই জানি। পাশের দেশের উৎপাদিত ফেনসিডিল বাজার সয়লাব করে, নেশায় আসক্ত করছে আমাদের। বিড়ির ক্ষেত্রে যে এটা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
অর্থমন্ত্রীর নব্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিড়ির ভয়াবহতা সিগারেটের চেয়েও বেশী বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন তার পেছনে রয়েছে অন্য মতলব। সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন, বিড়ির প্রতি তিনি খড়গহস্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবার পর থেকেই। শুল্কনীতির কূট-কৌশল প্রয়োগ করে তিনি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিকে সুযোগ করে দিয়েছেন বিড়ির বাজার দখল করার জন্য। বিড়ির বাজার দখল করেই তার প্রভু বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি সন্তুষ্ট হতে পারেনি, এখন তারা চায় বিড়ির সম্পূর্ণ বাজার দখল করে একচেটিয়া ব্যবসা করতে। আর তাই বিড়ি বন্ধ করে সিগারেটের বাজার একছত্র করার উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী চিকিৎসা বিজ্ঞানীর লেবাস গ্রহণ ও ফতোয়া জারি।
কিন্তু স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে বিদেশি সিগারেট বর্জনের মাধ্যমে দেশীয় কুটির শিল্প হিসেবে যে বিড়ির আবির্ভাব, সে বিড়ি টিকে রয়েছে। বিড়ি শিল্প ধ্বংস করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের টেন্ডু পাতা নিষিদ্ধ করেছিল। পরে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে বিড়ি শিল্প। যে বিড়ি শিল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ২৯ জুনজাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘বিড়ি আমাদের, সাধারণত গরিব মানুষ ব্যবহার করে। এই বিড়ি বানানোতে গরিব নারী ও সাধারণ শ্রমিক কাজেরসুযোগ পায়, তারা কাজ পায়। ’ যে বিড়ি নদী ভাঙন, পশ্চাৎপদ এলাকার হতদরিদ্র বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন, সে বিড়ি চক্রান্তের মাধ্যমে ধ্বংস করা যাবে না’।
অতীতের চক্রান্তকারীদের মতো পরিণতি হবে অর্থমন্ত্রীর। কারণ এদেশ‘মাথা নোয়াবার নয়’।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এসএইচ