ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নির্বিচারে প্রাণী হত্যা বন্ধ হোক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৮
নির্বিচারে প্রাণী হত্যা বন্ধ হোক

নির্বিচারে চলছে বন্যপ্রাণী শিকার। সাপ থেকে শুরু করে নানা জাতের প্রাণী হত্যা করা হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। এছাড়া রাতের আঁধারে বনজঙ্গল ও গ্রামের পাকা সড়কগুলো অতিক্রমকালে চলন্ত গাড়ির চাকায়ও প্রাণ যাচ্ছে এসব প্রাণীর।

শুধু তা-ই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের নৃংশসতার ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নিজের কৃতকর্মফলের সন্তুষ্টিপ্রার্থীও হচ্ছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির একটি ‘সাদাবার কেউটে সাপ’ (Common Crait) হত্যা করে এর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যক্তি।


 
কেন এই প্রচার? সেই ব্যক্তির আত্মতুষ্টি? নাকি বিকৃত মনোভাবের বর্হিপ্রকাশ? এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান এবং বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী এবং ‘সোল’ (বিপন্ন বন্যপ্রাণী সেবা ও আশ্রয়স্থল) এর পরিচালক তানিয়া খান বলেন, মানুষ যে কতো হিংস্র হতে পারে এসব পোস্ট দেখলে বুঝা যায়। এটা তাদের হিংস্র মনোভাবের বর্হিপ্রকাশ। একটি মূল্যবান প্রাণী মেরে ফেলা, তারপর সেই মৃত প্রাণীটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা– বিকৃত রুচিরই পরিচয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, বন্যপ্রাণীদের হত্যা মানবিক দিক দিয়ে এটি উচিত না। আর আইনগত দিক দিয়েও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরিষ্কার বলা আছে, যে কোনো বন্যপ্রাণী ধরা, মারা বা রাখা কোনোটাই করা যাবে না। তো যারা একটা করছেন তারা এগুলো না জেনেই হয়তো করছেন। তাদের সচেতন করার দায়িত্ব বনবিভাগসহ আমাদের সবার।  
 
বন্যপ্রাণী দেখলেই এটাকে মারতে হবে– সারাদেশে এমন একটা বিকৃত উৎসব চলে। এতে সচেতনতার অভাব আছে। কেউ কেউ না জেনে না বুঝেই বন্যপ্রাণীদের মারছেন। সবচেয়ে বড় কথা সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমন পোস্ট দেখলেই এর বিরুদ্ধে কিছু লিখে দেওয়া অথবা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের কথা উল্লেখ করে দিলে কিছুটা উপকার হতে পারে বলে মনে করেন ড. কামরুল হাসান।

বাংলাদেশে প্রায় সর্বমোট ১০৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭১৮ প্রজাতির পাখি, ১৫৭ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪২ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। দিন দিন তাদের আবাসস্থল নানান কারণে মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যেই এদেশ থেকে ১৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অসংথ্য বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক এবং বন্যপ্রাণীপ্রেমী ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাও যদি মেরে ফেলা হয়, তাহলে আমরা আমাদেরই ক্ষতিসাধন করছি। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
বিবিবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।