ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমাদের দেশে সু কি হবে কবে?

অজয় দাশগুপ্ত, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১১
আমাদের দেশে সু কি হবে কবে?

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সফর করেছেন। এ লেখা আলোর মুখ দেখতে দেখতে তিনি ফিরেও আসতে পারেন।

সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এমন  কি বেসরকারি চ্যানেলগুলো কি বলবে? নিশ্চয়ই উন্নয়ন আর সার্কের নতুন দিগন্ত খোলার আরব্য রজনীয় গল্প অথবা কাব্য কাহিনী! শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা, মানুষ ফিরে তাকায় না, শোনেও না আর।

মিয়ানমার হলো দ্বিতীয় প্রতিবেশী যার সাথে আমাদের ভৌগোলিক সংশ্লিষ্টতা আছে। অর্থাৎ সীমান্ত। ভারতের মত অহরহ বা মাঝে মাঝে অঘটন না ঘটলেও সীমান্ত ঠাণ্ডা থাকেনি। ফেলানির লাশ তারে ঝোলেনি বটে, উদ্বাস্তু এসেছে হাজারে হাজার। আশির শেষ ও নব্বইয়ের গোড়ায় তাদের কর্মক্ষেত্র ছিল কক্সবাজার।

স¦চক্ষে দেখেছি রোহিঙ্গা আগমন ও আমাদের প্রকৃতি নিধনের নির্মম চিত্র। বন-বাঁদাড় গাছ-পালা উজাড় করে বসতি গেড়েছে তারা। গরীব দেশ আমাদের। নিজেদেরই চলার ক্ষমতা নেই তা আবার বেঝার ওপর শাকের আঁটি। শুধু কি প্রকৃতি? রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে জড়িয়ে নিজের বল বাড়িয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জামায়াতি রাজনীতি। রীতিমত ট্রেনিং ক্যাম্প আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল তাঁবুগুলো। কোন রাজনীতি বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাহস ও ক্ষমতা আছে মিয়ানমারের মুখের উপর এগুলো বলবে? রাজনীতিকরা তো ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। ঢাল তলোয়ার তো বটেই বন্দুক, কামান, মর্টার, ট্যাংক দিয়ে পোষা বাহিনীর শীর্ষ নেতা কী বলে শুনবেন?

ওয়ান ইলেভেন নাটকের অন্যতম কুশীলব মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত গণতান্ত্রিক সরকারের সামরিক (?) রাষ্ট্রদূত। সিডনিতে এক অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার পর মিয়ানমার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। মনে হচ্ছিল সামরিক দিকে বাঁক নেওয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়। জাঁদরেল জেনারেল, যার ভয়ে দেশের রাজনীতিবিদদের থর হরি কম্প ওঠে। কথিত ইয়াজউদ্দিন পাজামার এক পায়ে খালি জায়গায় দু’পা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আমাকে হতবাক করে দিয়ে জানালেন, ‘আমরা পারব না। অর্থাৎ মোকাবেলার ক্ষমতা নেই আমাদের। ’

হায়! জনগণ সিকি দাম, কোনও ক্ষেত্রে প্রায় বিনামূল্যে ভুর্তকি দিয়ে পোষা বাহিনীর কাছে তোমার ভরসা জিরো। নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো রাজনীতিও তা জানে বলে মনে হয় না।

মিয়ানমারে গিয়ে শেখ হাসিনার আর যাই অর্জন হোক এসব বিষয়ে কথা হবে না। কারণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতি গরীবের বউ। সবার মনোরঞ্জন করে চলা, কাউকে মনে কষ্ট না দেওয়া ‘পেয়ারা ভাবী’। মিয়ানমারের সামরিক শক্তিকে উপেক্ষা করার মত গণতান্ত্রিক আবহ, মেধা, ইতিহাস, ও সংস্কৃতি থাকার পরও আমরা পারি না। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের দীর্ঘ সংগ্রামেও সু কি’র জন্ম হয়নি। রাজনীতিতে অং সান সু কি’র জন্ম দিতে পারেনি। স্থির, অবিচল, ত্যাগী, আর সংগ্রামী সু কি নোবেল জয় করেছেন। হিলারিকে টেনে এনেছেন, বলিয়ে ছেড়েছেন তিনিই আদর্শ ও প্রেরণার উৎস। সে জাতীয় উচ্ছ্বাস না থাকলে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া কারো পক্ষেই কোনো অর্জন ছিনিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক
dasguptaajoy@hotmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।