ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
‘আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, মাতৃক্রোড়ে যে শিশু প্রথম চোখ মেলেছিল, পরবর্তীকালে সে শিশুর পরিচিতি দেশের গণ্ডিরেখা অতিক্রম করে পরিব্যপ্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মা-বাবার আদরের ‘খোকা’, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সুপ্রিয় ‘মুজিব ভাই’, সমসাময়িকদের প্রিয় ‘শেখ সাহেব’ থেকে মুক্তিকামী বাঙালির ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি এবং শেষতঃ কায়েমীস্বার্থবাদীদের প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা-জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। যে জন্য সতেরোই মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিবস। 

বাঙালি জাতির জীবনে ‘মার্চ’ এক ঘটনাবহুল মাস হিসেবে চিহ্নিত। ১৯২০ সালের সতেরোই মার্চ জাতির পিতা এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন; ’৪৮ সালের এগারোই মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সফল ধর্মঘট পালন; ’৭১-এর পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দালন ছিল বিশ্বের বিস্ময়; ’৭১-এর তেসরা মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ; রেসকোর্স ময়দানে ’৭১-এর সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভুবন বিজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান; পঁচিশে মার্চ মধ্য রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পরপরই ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ প্রদান; অর্থাৎ এই মার্চেই এক নেতার অঙ্গুলিহেলনে কোটি কোটি মানুষ সাড়া দিলো, এক নেতার কণ্ঠের ধ্বনি কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হলো, একক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যক্তির সীমা অতিক্রম করে জাতির প্রতীক হয়ে উঠলেন।

আমরা স্লোগান দিতাম, ‘এক নেতার এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। ’ একদিনে এটি সম্ভব হয়নি। তিলে তিলে, ধাপে ধাপে তাঁর একচ্ছত্র নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে।  

জেল-জুলুম-নির্যাতন আর ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবন। যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, সেই নেতার শততম শুভ জন্মবার্ষিকীতে সমগ্র জাতি আজ কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছে-দেশব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ সগৌরবে উদযাপিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালির মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের শ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ধাপে ধাপে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৬-এর ছয় দফা তথা স্বাধিকার আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন এবং পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাঁকে জীবনের প্রায় তেরোটি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘It is said that no one truly knows a nation until one has been inside its jails.’ অর্থাৎ ‘এটা বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না, যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে। ’ 

২০১২ সালে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যাই এবং রোবেন আইল্যান্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ পরিদর্শন করি। এখানেই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকেও মিয়ানওয়ালি কারাগারে এরকম একটি নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছিল। এই বন্দিশালাতেই নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর দীর্ঘ সাতাশ বছর কারাজীবনের আঠারো বছর বন্দী ছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি বন্দিশালার নির্জন সেলটি। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কারাবন্দী ম্যান্ডেলার বিছানার জন্য একটি ও গায়ে দেওয়ার জন্য আরেকটি কম্বল, একটি প্লেট, গ্লাস ও জগ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি পড়ে জেনেছি কারারুদ্ধ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল একটি থালা, বাটি, গ্লাস আর কম্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল। ’ এখানে গিয়েই বারবার আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের কথা ভেবেছি- যে কারাগারে দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধু বন্দিজীবন অতিবাহিত করেছেন।  

বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে ইসলামিক সম্মেলনে লাহোরে গিয়ে মিয়ানওয়ালি কারাগারের জেল সুপার হাবীব আলীর কাছ থেকে বর্ণনা শুনেছি। জেলের সামনে কবর খুঁড়ে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী অথবা কবর বেছে নেওয়ার কথা বলেছিল। বঙ্গবন্ধু কবরকেই বেছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাংলার আলো-বাতাসে আমি বর্ধিত হয়েছি, মৃত্যুর পর এই কবরে না, আমার লাশ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও। ’ জাতির পিতা সাড়ে নয় মাস পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের নির্জন সেলে বন্দী ছিলেন। মিয়ানওয়ালি কারাগার ভিন দেশে হওয়ায় আমরা তা সংরক্ষণ করতে পারিনি। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে তিনি বন্দী ছিলেন সেসব সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর আগরতলা মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের যেখানে তিনি বন্দী ছিলেন সেটিও জাদুঘর করা হয়েছে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী নেতৃত্বের রয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আদর্শিক মিল। যেমন ’৭১-এর চৌঠা মার্চ বাঙালির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির জনক বলেছিলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতির মুক্তি আসে নাই। ’ তদ্রুপ দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘Real leaders must be ready to sacrifice all for the freedom of their people.’ অর্থাৎ ‘জনগণের মুক্তির জন্য অবশ্যই সবকিছু ত্যাগে প্রকৃত নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ’ 

বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। ’ ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালোবাসি। ’ 

বঙ্গবন্ধু সবসময় ছোটকে বড় করে তুলতেন। যেসব জায়গায় সফর করতেন, বক্তৃতায় সেখানকার নেতা-কর্মীদের বড় করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকে থানার, থানা আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলার এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে জাতীয় নেতায় রূপান্তরিত করে তিনি জাতির পিতা হয়েছেন। ফলত, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজো বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে টিকে আছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশাল হৃদয়ের মহান নেতা। সকলকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। মুহূর্তেই পরকে আপন করে নিতেন। কারো দুঃখ সহ্য করতে পারতেন না। যারা বিরোধী ছিলেন তাদেরকেও কাছে টেনে নিতেন। যখন বলতেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না’, মানুষ তাই বিশ্বাস করতো। ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি রাজনীতি করেননি। প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে বাঙালিরা যাতে বাংলাদেশের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সেজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেই তিনি রাজনীতি করেছেন। ’৬৭-এর সতেরোই মার্চ নিজের জন্মদিনে কারাগারের রোজনামচায় লিখেছেন, “আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই-বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস’। ”পৃষ্ঠা-২০৯। এই উক্তিটির সূত্রে মনে পড়ছে, ’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের সতেরো তারিখের কথা। সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২-তম জন্মদিন। সারাদেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি। ’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। ’ 

জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনসাধারণকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বলতেন, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক। ’  বিশাল হৃদয়ের মহৎ মনের সহজ মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের সবকিছুই জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। অতি সাধারণ জীবন ছিল তাঁর। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েও সরকারি বাসভবনে থাকতেন না। নিরাভরণ, ছিমছাম ৩২ নম্বরের বাড়িটিতেই আমৃত্যু থেকেছেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল সময়পোযোগী। সেই কবে ১৯৬৬ সালে ‘আমার সোনার বাংলা...’- তখনো জাতীয় সঙ্গীত হয়নি-গেয়ে হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন।  সেই সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বিশে মার্চ পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ছয় দফা কর্মসূচি নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই। ’ কবিগুরুর গান থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...। ’ আরও বলেছিলেন, ‘আমার দলের নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাবোই। ’ 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই কিন্তু বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবার সমস্ত ষড়যন্ত্র আইয়ুব খান গ্রহণ করেছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকারি নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা। স্বৈরশাসক তাঁকে প্রধান আসামি করে ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু মাথা নত করেননি। এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করেছিল, সে গণআন্দোলন প্রবল গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করেছে এবং কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। আমরা তাঁর রাজনৈতিক কর্ম ও জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখবো, তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই বাঙালির বন্ধু তথা ‘বঙ্গবন্ধু’।  

ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, I feel for my country and my people and then my family. সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা। যেখানেই মুক্তিসংগ্রাম সেখানেই তিনি সমর্থন করেছেন।  

বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় ভারতের মহাত্মা গান্ধী, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর সাথে। তাদের সমকক্ষ নেতা ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে আলোচনার টেবিলে বসে। আর বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁর জীবনকে বাঙালি জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন বলেছিলেন, ‘যে মরতে চায়, তাঁকে কেউ মারতে পারে না। ’ বঙ্গবন্ধুও  বলেছিলেন, ‘যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তাঁর মৃত্যু নাই। ’ 

বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও আপস করতেন না। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুচিন্তিত। আজকের যে বাংলাদেশ এটি বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন। ’৬৯-এর পাঁচই ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে নিজের কণ্ঠে স্লোগান দেন, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। ’ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যা কিছু সংঘটিত হয়েছে সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৫২ সালে বলেছিলেন, ‘একদিন আমি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হবো। ’ আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একদিন আমি এই দেশকে স্বাধীন করবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে তুচ্ছ। ’ সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে ধাপে ধাপে তাঁর আরাধ্য কর্মসূচী এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

’৭১-এর তেসরা জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ’৭০-এর নির্বাচনে নবনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছয় দফা ও এগারো দফা আজ আমার নয়, আমার দলেরও নয়। এটা আজ বাংলার জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। ’ জনগণের জন্যই ছিল তাঁর রাজনীতি ও কর্মসূচী। তিনি তাঁর বক্তৃতায় সেদিন আরো বলেছিলেন, ‘আমাকে মোনেম খান কাবু করতে পারেনি, এমনকি আইয়ুব খানও পারেনি। কিন্তু আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে আপনাদের এই অকুণ্ঠ ভালোবাসা। আপনারা দোয়া করবেন যেন আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি। ’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তিনি একাই রক্ত দেননি সপরিবারে রক্ত দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করে গেছেন।

মনে পড়ে, ’৭১-এর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা; যে ভাষণ আজ ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন। সেদিন তিনি একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই সাতই মার্চের ভাষণই ছিল আমাদের প্রেরণার উৎস। ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রারম্ভে তিনি বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। ’ তাঁর এই শেষ বার্তা হৃদয়ে ধারণ করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে ষোলোই ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারিনি। ’৭২-এর দশই জানুয়ারি যেদিন তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর বারোই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দশই এপ্রিল ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’-এর প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। মাত্র সাত মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা অর্জন করি সদ্য স্বাধীন দেশের উপযোগী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তোলেন। বিশ্বের ১১৫টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন।  

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যেদিন তিনি লন্ডনে, সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘বাংলাদেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ’ তখন বলেছিলেন, ‘এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই একদিন আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবো। ’ প্রশাসনিক সংস্কার করে, সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক বিকাশ বেগবান করে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার জন্য ঠিক যা যা করা দরকার তিন বছর সাত মাস নিরলস পরিশ্রম করে তিনি সেসবের ভিত্তি স্থাপন করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিদেশ সফর করেছি। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং ভালোবাসা স্বচক্ষে দেখেছি। পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সোভিয়েট ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পোদগর্নি, প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ, যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল জোসেফ ব্রোজ টিটোসহ বিশ্বের বরেণ্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অপরিসীম শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করেছেন। আমরা যখন ’৭৩-এ কমনওয়েলথ সম্মেলনে যাই, তখন এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ৩২টি দেশের রাষ্ট্রনায়ক এসেছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকসহ সকলের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরতো। তিনি অন্তরে যা বিশ্বাস করতেন দেশের মানুষকে এবং বিশ্ববাসীকে তাই বলতেন। যেখানেই গিয়েছেন মানুষ তাঁকে আপন করে নিয়েছে।  

আলজেরিয়াতে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব  দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আরেক দিকে শোষিত। আমি শোষিত মানুষের পক্ষে। ’ সেই বক্তৃতা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘে যখন ভাষণ দেন-আরও অনেকেই ভাষণ দিয়েছেন-ভাষণ দেবার সময়ই আলজেরিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা-যিনি পরবর্তীকালে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন-মঞ্চ থেকে নেমে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে মঞ্চে তুলে নিয়েছেন।  

বঙ্গবন্ধু যখন সোভিয়েট ইউনিয়নে যান তখন দেশটির শীর্ষ চার নেতা পোদগর্নি, কোসিগিন, ব্রেজনেভ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী আঁন্দ্রে গ্রোমিকো তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য ক্রেমলিনে সমবেত হন। ব্রেজনেভ বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘সত্যিই আমি ধন্য। আজ আপনার মতো মহান নেতার সান্নিধ্য লাভ করেছি। ’ 

আমরা যখন জাপান সফর করি, জাপানের সম্রাট হিরোহিতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করে জাপানি ভাষায় বলেছিলেন, ‘সত্যিই আপনি ইতিহাসের একজন মহান নেতা। ’ মার্শাল টিটোর যুগোস্লাভিয়াতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলাম। মার্শাল টিটোও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তৎকালীন বিশ্বে মার্শাল টিটো অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। কাছে থেকে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। দীর্ঘ নয় মাস চৌদ্দ দিন কারাবাসের পর পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত হয়ে যখন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান, সে সংবাদ শুনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ তৎক্ষণাৎ অবকাশ কেন্দ্র থেকে ফিরে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘সত্যিই আপিন একজন মহান নেতা এবং আমি কখনোই ভাবিনি আপনার সঙ্গে দেখা হবে। ’ এই ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।  

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ’৭২-এর দশই জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে সর্বকালের সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক গণমহাসমুদ্রে হৃদয়ের সবটুকু অর্ঘ্য ঢেলে আবেগমথিত ভাষায় বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। ’ স্থির-প্রতিজ্ঞ থেকে বলেন, ‘ভাইয়েরা, তোমাদেরকে একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আজকে আমি বলি, আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কাজ করে যেতে হবে। ’ বক্তৃতায় আরো বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। ’ 

বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালির সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। যে বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে বাংলার জন্য যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছেন বাঙালির জয়গান, সেই বাংলা ও বাঙালির জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব; কিন্তু বাংলা ও বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে দরদ, যে ভালোবাসা তার গভীরতা অপরিমেয়।

আজ বিশেষভাবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের থমথমে দিনটির কথা মনে পড়ছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বিদায় নেওয়ার সময় সকলেই বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, ‘আজ তো মনে হয় তারা অবশ্যই আপনাকে গ্রেপ্তার করবে। ’ দৃঢ়-প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘করুক না। তাতে কী? ওরা আমাকে আগেও গ্রেপ্তার করেছে এবং তাতে ওদের কোন লাভ হয় নাই। ওরা ফের আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু এ থেকে ওরা কি সুবিধা পাবে আমি জানি না। ওরা যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাতেও ওদের কোনো লাভ হবে না। আমার মৃত্যুর বদলা নিতে বাংলার মাটিতে হাজারো শেখ মুজিবের জন্ম হবে। ওদের দিন শেষ এটা ওরাও জানে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আজ এই সত্যই আমার হৃদয়টাকে অনাবিল আনন্দে ভরে দিচ্ছে। সর্বত্র উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, একটি সফল অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ইতিহাসে এই প্রথম বাঙালিরা নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে সবকিছু নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করছে। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে এবং তোমরা যদি আমার লাশ দেখার সুযোগ পাও তখন দেখবে, আমি কেমন সুখে হাসছি। ’ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে বিষাদাচ্ছন্ন স্বরে বলেছিলেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়...। ’

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

** জন্ম শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু, শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।