ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২০
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রাম: দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ৩১ দফা নির্দেশনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি জনসমাগম রোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের মহামারি রূপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোভিড-১৯ এর উপসর্গ গোপন না রাখার আহ্বান জানিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াসহ ৩১ দফা নির্দেশনা জারি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। লুকোচুরির দরকার নেই, করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। পিপিই সাধারণভাবে সকলের পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে|
 
কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নদীবেষ্টিত জেলাসমূহে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে। পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।

সারাদেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সকল সরকারি কর্মকর্তারা যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন- এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

ত্রাণ কাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। সোশ্যাল সেফটি নেট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে। সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে, যাতে বাজার চালু থাকে। সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে যাতে জনসমাগম না হয়। ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সমাজের সকল স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন সকলকে নিয়ে কাজ করবে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন।

সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, যেমন: কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সকল সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় না করা, কারণ খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কৃষকরা নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। সকল শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে।
 
শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন। গণমাধ্যম কর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। গুজবে কান না দিতে  এবং গুজবে বিচলিত না হতেও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রতি উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সেই কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব উত্তরণের লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ২ শতাংশ সুদে এই প্যাকেজ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। তিন মাস পর্যন্ত বেতন অবশ্যই কোনও ব্যাংকে বা মোবাইল আর্থিক সেবা অ্যাকাউন্টে দিতে হবে। গাইড লাইনে বলা হয়েছে, উৎপাদিত পণ্যের অন্তত ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয় এসব প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে অর্থ নেওয়ার যোগ্য হবে। পাশাপাশি সংকট চলাকালীন (এপ্রিল, মে ও জুন) তিন মাসের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে হবে।

গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কয়েক মাসের মাথায় সেটি ছড়িয়ে পড়ে শতাধিক দেশে। চীন খুব দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চীনের মতো সফল হয়েছে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর। তাদের ছিল আগাম প্রস্তুতি, দ্রুত রোগ শনাক্ত করা, সফল ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। জনবহুল বাংলাদেশেও সরকার সেসব দেশের সফলতার উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক।

ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানোর পাশাপাশি হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। প্রায় সব দেশের সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে বিমান চলাচল। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হচ্ছে। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পেলেই হচ্ছে জেল-জরিমানা। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়েছে এসব কাজে। করোনা সচেতনতায় প্রচারণার পাশাপাশি মানুষও মুখে মাস্ক ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে অনেক সচেতন হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও যান চলাচল।

প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। আসুন, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বার্থে, পরিবার ও সমাজের স্বার্থে সবাই ঘরে থাকি, নিরাপদ থাকি।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২০
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।