ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধ পূর্ণিমা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২০
ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধ পূর্ণিমা বুদ্ধ পূর্ণিমা

বুদ্ধ পূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এইদিনে মহামানব ভগবান বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। এবারের বুদ্ধবর্ষ ২৫৬৩। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ বৎসর আগে তাঁর আবির্ভাব। এবারই প্রথম করোনাকালিন ভিন্ন পরিবেশে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে।

বোধি লাভ: ভগবান বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভ বা বোধিপ্রাপ্তি মানবসভ্যতার এক চরম ও পরম প্রাপ্তি। বোধিলাভের জন্য তিনি কঠিন সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন।

‘ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং, ত্বগস্থিমাংস প্রলয়ঞ্চ যাতু

অপ্রাপ্য বোধিং বহূকল্পদুর্লভং, নৈবাসনাৎ কায়মতঃ চলিষ্যতে॥’

অর্থ: আসনে দেহ মোর যাক শুকাইয়া, ত্বক অস্থি মাংস যাক প্রলয়ে ডুবিয়া। না লভিয়া বোধিজ্ঞান দুর্লভ জগতে, টলিবেনা দেহ মোর এ আসন হতে।

বর্তমান ভারতের বিহার প্রদেশে বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষ মূলে সেই বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে রাত্রির প্রথম প্রহরে যখন গৌতম সংজ্ঞাবেদয়িতনিরোধ ধ্যানে নিমগ্ন হলেন তখন তিনি লাভ করলেন জাতিস্মর জ্ঞান। এ জাতিস্মর জ্ঞানের প্রভাবে তিনি জানতে পারলেন তাঁর জন্ম-জন্মান্তরের ঘটনা। সে রাত্রির দ্বিতীয় যামে তিনি লাভ করলেন দিব্যচক্ষু। যে চক্ষুর সাহায্যে জীবের গতি পরষ্পরা জ্ঞান। তাঁর মানস চক্ষে ভেসে উঠে সত্ত্বগণের চ্যুতি উৎপত্তির দৃশ্য। সে রাত্রির শেষ যামে তিনি প্রতীত্যসমুৎপদ বা কার্যকারণ তত্ত্ব অনুলোমভাবে উৎপত্তি ও বিনাশ বশে নিজ মনে আনুপূর্বিক পর্যালোচনা করে অরুণোদয়ের সময় সম্যক সম্বোধি বা সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভ করলেন। জগতে বুদ্ধরূপী মহাসূর্য উদিত হল। জগতের সৃষ্টি রহস্য তাঁর নিকট উদ্ঘাটিত হল। কারণ ছাড়া কার্য সংগঠিত হয় না। বুদ্ধত্ব লাভে তিনি বজ্রাসনে বসে আবেগপূর্ণ কন্ঠে উচ্চারণ করলেন:

সমুদিত যবে ধর্ম, জ্ঞানের বিষয়,

বীর্যযান ধ্যানরত ব্রাহ্মণের হয়।

দূরে যায় সর্ব শংকা, সকল সংশয়,

জানে যাহে হেতুবশে ধর্মসমুদয়। ।

তিনি আবিস্কার করলেন চার আর্যসত্য, অষ্টমার্গ। তিনি কম্ভুকণ্ঠে ঘোষণা করলেন: “জন্ম-জন্মান্তর পথে ফিরিয়াছি পাইনি সন্ধান, সে কোথা গোপনে আছে এ গৃহ যে, পুনঃ পুনঃ দুঃখ পেয়ে দেখা তব পেয়েছি এবার, হে গৃহ কারক গৃহ না পারিবি রচিবারে আর। ভেঙেছে তোমার স্তম্ভ, চুরমার গৃহ-ভিত্তিচয়, সংস্কার বিগতচিত্ত, তৃষ্ণা আজি পাইয়াছে ক্ষয়। ”

যে গৃহকারকের সন্ধানে গৌতম জন্ম-জন্মান্তরে পরিভ্রমণ করেছেন-তাঁর নাম তৃষ্ণা থেকেই রূপ-বেদনা সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান-এদের সমষ্টিরূপ এই দেহামিত্রত ব্যক্তিসত্তা, আমাদের আমি বোধ উদ্ভূত। বিদ্যা এই সমবায়ের চূড়া (গৃহকূট); রাগ-দ্বেষ-মোহ এই দেহগায়ের পার্শ্বকা (বাসুকা)। অবিদ্যার গ্রন্থি যখন ছিন্ন হয়, রাগ-দ্বেষ-মোহ ও সকল সংস্কার থেকে যখন চিত্ত মুক্ত হয়, তৃষ্ণার যখন ক্ষয় হয়, তখনই মানুষ দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে নির্বানে উপনীত হয়। প্রতীত্য সম্যুপদ ও নির্বান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞ যা বুদ্ধজ্ঞান। বুদ্ধ সমস্ত বিষয়ে সংশয়মুক্ত হয়েছেন। তাই তিনি উদাত্ত কন্ঠে এমন ঘোষণা করতে পেরেছিলেন-

‘সকলের বিভূ আমি, সর্ববিদ হয়েছি এখন

কোন ধর্মে নহি লিপ্ত, ছিন্ন মম সকল বন্ধন।

সর্বজ্ঞ সর্বত্যাগী তৃষ্ণাক্ষয়ে বিমুক্ত মানস

নিজ অভিজ্ঞতায় যদি সিদ্ধ আমি পূরিত মানস,

বল তবে আজীবক! কারে আমি করিব উদ্দেশ,

স্বয়ম্ভূ হইয়া নিজে গুরুরূপে করিব নির্দেশ?

আচার্য নাহিক মোর, নাহি গুরু, নাহি উপাধ্যায়,

সদৃশ যে কেহ নাই প্রতিদ্বন্দ্বী মম এ ধরায়।

আব্রহ্ম-ভুবন মাঝে কোথা আছে হেন কোন জন

প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী যুঝিবারে লোকাতীত রণ!

অর্হৎ আমি যে বিশ্বে, আমি হই শাস্তা অনুত্তর

সম্যক সম্বুদ্ধ আমি, শীতিভূত, নিবৃত অন্তর’।

ধর্মচক্র প্রবর্তিতে চলিয়াছি কাশীর নগর

অন্ধবিশ্বে বাজাইয়া অমৃত-দুন্দুভি নিরন্তর’।

বুদ্ধের আবির্ভাবে পৃথিবী ধন্য হয়েছিল, বুদ্ধের আশীর্বাদে অসংখ্য দুঃখিত মানুষ মুক্তি পেয়েছিল। পূর্ণ চন্দ্রের মতো জগৎকে আলোকিত করেছিলেন ভগবান বুদ্ধ। তাই কবি ডি এল রায় লিখেছেন: ‘উদিল যেখানে বুদ্ধ আত্মা মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার, আজিত অর্ধজগৎ ভক্তি প্রণতি চরণে তাঁর’।

পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ এখনো বুদ্ধকে স্মরণ করে। বুদ্ধের শান্তির বাণী গ্রহণ করে মুক্তি পথ খুঁজে নেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধকে স্মরণ করে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর কবিতায়- “ওই নামে একদিন ধন্য হল দেশে দেশান্তরে তব জন্মভূমি, সেই নাম আর বা এ দেশের নগরে প্রান্তরে দান করো তুমি। বোধিদ্রম তলে তব সেদিনের মহাজাগরণ, আবার সার্থক হোক মুক্ত হোক মোহ আবরণ, বিস্মৃতির রাত্রিশেষে এ ভারতে তোমারে স্মরণ না প্রান্তে উঠুক কুসুমি’।

বুদ্ধের ধর্ম প্রচার: ভগবান বুদ্ধের নিম্নোক্ত গাথাটি অধিকাংশ পণ্ডিতমহল প্রথম বুদ্ধবচন রূপে ধরে নেন।

যদা হবে পাতুভবন্তি ধম্মা

আতাপিনো ঝায়তো ব্রাহ্মণস্স,

অথস্স কঙ্খা বপয়ন্তি সব্বা

য়তো পজানাতি সহেতুধম্মন্তি।

আবার উদান গাথাটি ‘ধর্মপদ’ সহ বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায় প্রথম বুদ্ধবচন বলে-

অনেক জাতি সংসারং সদ্ধাবিস্সং অনিব্বিসং

গহকারকং গবেসন্তো দুক্খা জাতি পুনপ্পু নং,

গহকারক! দিট্ঠেইস পুন গেহং ন কাহাসি,

সব্বতো ফাসুকা ভগ্গা গহকূটং বিসঙ্খতং

বিসঙ্খারগতং চিত্তং তণ্হানং খয়মজ্ঝগা’তি।

ভগবান বুদ্ধ একজন ঐতিহাসিক মানুষ ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। সমগ্র ভারতবর্ষ এখনো বুদ্ধের পথ ধরে চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। অচিরাবতী, নৈরঞ্জনা, রুহিনী নদীর ফল্গুধারা এখনো বহমান। বুদ্ধ ৪৫ বৎসরব্যাপী বুদ্ধত্ব লাভের পর দিকে দিকে বিচরণ করে সদ্ধর্মকে প্রচার ও প্রকাশ করেন। বুদ্ধের ৪৫ বৎসরের বর্ষা ঋতু যাপনের ইতিহাস এখানে তুলে ধরা হলো।

ভগবান বুদ্ধের ধর্ম প্রচারের প্রথম স্থান সারনাথের ঈষিপতন মৃগধাব। পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে ‘ধর্মচক্র প্রবর্ত্তন সূত্র’ দেশনার মধ্যে দিয়ে। সেই পঞ্চবর্গীয় শিষ্যরা হলেন- কৌন্ডিন্য, বম্প, ভদ্রীয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ। ধর্মের চাকা ইহলোকে যা প্রচার হয়নি, তা প্রবর্তিত হলো। সে দেশনায় চতুরার্য সত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ সহ দুঃখ মুক্তিপথ দেখিয়ে ছিলেন। বুদ্ধের এ দেশনায় প্রথম কোন্ডিন্য দুঃখ মুক্তির প্রথম স্তর স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

ভগবান বুদ্ধের ধর্ম প্রচারের যে তথ্য পাওয়া যায় তা নিম্মে উল্লেখ করা হলো-

১ম ধাপ- রাজগৃহ >দক্ষিণগিরি >রাজগৃহ> কপিলাবস্ত>শ্রাবস্তী

২য় ধাপ- রাজগৃহ>চোদনবত্থু>রাজগৃহ

৩য় ধাপ- রাজগৃহ>বেণুবন>শ্রাবস্তী

৪র্থ ধাপ- শ্রাবস্তী (জেতবন বিহার)

৫ম ধাপ- রাজগৃহ>বৈশালী>ভগ্ন>শুশুমারগিরি>শ্রাবস্তী

৬ষ্ট ধাপ- রাজগৃহ>বৈশালী>শ্রাবস্তী>কিটাগিরি>বারানসী>শ্রাবস্তী

৭ম ধাপ- শ্রাবস্তী

৮ম ধাপ- রাজগৃহ>দক্ষিণগিরি>রাজগৃহ>বৈশালী>বারানসী>শ্রাবস্তী

৯ম ধাপ- চম্পা

১০ম ধাপ- কোসাম্বী>লোনকারগ্রাম>প্রাচীন >পারিল্যায়বন/শ্রাবস্তী

বুদ্ধের সময়কালে প্রাচীন ভারতে ষোলটি মহাজনপদ ছিল। সেই জনপদ বা রাজ্যে ভগবান বুদ্ধের বিচরণ ক্ষেত্র তা উল্লেখ পাওয়া যায়:

* অঙ্গ : চম্পা, ভদ্দিয়, কোটিগ্রাম, অঙ্গুওরাপ ও আপণ

* মগধ : রাজগৃহ, দক্ষিণগিরি, চোদনবত্থু, অন্দকবিন্দ, পাটালী গ্রাম, নালন্দা, উরুবেলা ও গয়ার্শীষ।

* বজ্জি : বৈশালী, ঞাতিক, বেলুব, ভাণ্ডগ্রাম, হস্তিগ্রাম, অম্বগ্রাম, জম্বুগ্রাম ও ভোগনগর।

* মল্ল : পাবা, অনুপ্রিয় ও কুশিনগর।

* কোসল: শ্রাবস্তী, কপিলাবস্ত, আতুমা ও বেরঞ্জা।

* বৎস : কোসাম্বী, লোনকার গ্রাম, পারিলেয়্যক, ভগ্ন, ও প্রয়াগ।

* কাশী : বারানসী, কিটাগিরি ও আলবী।

* পাঞ্চাল : সোরেয়্য, সাংকাশ্য ও কর্ণকুজঝ।

* চেতি : প্রাচীনবংস ও ভদ্দবতিকা।

বুদ্ধের ধর্মদেশনার স্থান: গৌতম বুদ্ধ উপরিবর্ণিত জনপদগুলোর কোথায় কতবার ধর্মদেশনা করেছেন তার হিসেব করলে নিন্মোক্ত তথ্য পাওয়া যায়।

স্থানের নাম ও সংখ্যা: অঙ্গ-০৮, অসমপুর-০২, আপন-০৫ রাজগৃহ-২৬, উরুবেলা-১৬ নালন্দা-০৯, গয়া ও গয়ার্শীষ-০৫, কিম্বিল-০৫, দক্ষিণগিরি-০২, পাটালী গ্রাম-০২, অন্দকবিন্দ-০২, চালিয়-০২, উক্কাচেলা-০২, হস্তিগ্রাম-০২, বিদেহ-০২, পাবা-০৩, বজ্জি-৪৯, কুশিনগর-০৭, কোলিয়-০৬, শ্রাবস্তী-৯১০, ইচ্ছানঙ্গল-০৬, সাকেত-০৫, সুম্ভ-০৩, শাল-০৩, উজঞা-০২, বারানসী-১০, আলবী-০৬, কোসাম্বী-০১, ভগ্ন, শুশুমারগিরি-১৯, চেতি-০১, কুরু, কম্মাসদম্প-০৪, ঞাতিক-১১, অন্যান্য-২৭।

বুদ্ধের সময় যেসব জনপদ, রাজধানী ও প্রচলিত ভাষা ছিল সেগুলো হল: অঙ্গ-চম্পা-মাগধী, মগধ-রাজগৃহ, কাশী-বারাণসী, কোশল-শ্রাবস্তী, বজ্জী-বৈশালী, মল্ল-পাবা (কুশিনারা), চেতী-সোত্থিবতী, বৎস (বংস)-কৌসম্বী, কুরচ-ইন্দ্রপস্থ, পাঞ্চাল-কাম্পিল্ল্য, মৎস্য-বিরাটনগর, সূরসেন-মথুরা, অস্সক (অশ্মক)-পোতলা, অবন্তী-উজ্জয়িনী, গন্ধার-তক্ষশিলা, কম্বোজ-দ্বারকা।

বুদ্ধ যে মধ্যমপন্থা বা অষ্টাঙ্গিক মার্গ দেশনা করলেন তার সাথে চতুরার্য সত্যও নিহিত আছে। এ চতুরার্য সত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গই সঠিক পথ যা মধ্যমপন্থা। দুঃখ, দুঃখ সমুদয়, দুঃখ নিরোধ ও দুঃখ নিরোধের উপায় হল চতুয়ার্য সত্য আর অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো-১. সম্যক দৃষ্টি, ২. সম্যক সংকল্প, ৩. সম্যক বাক্য, ৪. সম্যক আচরণ, ৫. সম্যক জীবিকা, ৬. সম্যক ব্যায়াম, ৭. সম্যক স্মৃতি ও ৮. সম্যক সমাধি। এর মধ্যে প্রথম দুটি হলো- প্রজ্ঞা; সম্যকবাক্য, সম্যক আচরণ, সম্যক জীবিকা। সম্যক ব্যায়াম হল- শীল; সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি হলো সমাধান।

ভগবান বুদ্ধ পঞ্চম দিনে ‘অনাত্নালক্ষণ সূত্র’ দেশনা করেছিলেন। ‘সব্বে ধম্মা অনত্তা’- সকল ধর্ম হলো অনাত্মা- রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান এগুলোকে পঞ্চ স্কন্ধ বলা হয়। তাও অনাত্ম। পরের দিন যশসহ তার চুয়ান্ন জন সঙ্গী নিয়ে বুদ্ধের ধর্ম গ্রহণ করে মার্গ ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। পঞ্চবর্গীয় শিষ্যসহ মোট ষাটজন অরহৎ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে বুদ্ধের বাণী প্রচার করতে লাগলেন।

এভাবেই বুদ্ধের ধর্ম বিস্তৃতি লাভ করলো। পরবর্তীতে সারিপুত্র ও মোগ্গলায়ন নামক দুজন বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। তাদের একজন ঋদ্ধির সেনাপতি অন্যজন ধর্মের সেনাপতি আখ্যা পেলেন। তারা বুদ্ধের পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের মধ্যে অরহৎ অশ্বজিৎ এর কাছ থেকে সংক্ষেপে ধর্মের উপদেশ পেলেন-

‘সে ধম্মা হেতুপ্পভবা, তেসং হেতু তথাগত আহ

তেসং চ য়ো নিরোধ, এবং বাদি মহা সমনো। ’

অর্থ: ‘যে সংস্কার রাশির উদ্ভব হেতু থেকে, আমার গুরু তথাগত তাদের হেতু নির্দেশ করেছেন আর সেগুলি কেমন করে নিরোধ হতে পারে, তাদের কথাও সেই মহাশ্রমণ বলেছেন। ’

কিছুদিন পর ভগবান বুদ্ধ সারিপুত্র ও মৌগ্গলায়নকে প্রধান শিষ্যত্ব করেছিলেন তার কারণ বুদ্ধের ধর্মপ্রচারে এ দুই প্রধান শিষ্যর অবস্থান অসামান্য। তাই বুদ্ধ তাদের সর্ম্পকে বললেন-‘এতদগ্গং ভিক্খবে মম সাবকানং মহাপঞঞানং যদিদং সারিপুত্ত, এতদগ্গং ভিক্খবে মম সাবকানাং, ইদ্বিযন্ত নং যদিদং মহা মোগ্গল্লানো’।

হে ভিক্ষুগণ! জ্ঞানী ভিক্ষু এই যে সারিপুত্র একে আমি ভিক্ষুদের আমি অগ্রণী করলাম আর এই ঋদ্বিমন্ত ভিক্ষু মহামোগ্গল্যায়ন ও ভিক্ষুদের অগ্রণী। এই দুর্লভ সম্মান দেবার মূলে ছিল এদের জ্ঞান ও নির্মল বিবেক বৈরাগ্য।

বুদ্ধের ধর্ম প্রচারে বিনয় পিটকার মহাজ্ঞ সুত্রে ভিক্ষুদের নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে ভিক্ষুগণ, বহুজনের শান্তি সুখের জন্য তোমরা দিকে দিকে বিচরণ করো। জগতের প্রতি অনুকম্পায় তোমাদের হৃদয় বিগলিত হোক। দেব ও মানবের প্রয়োজনে মঙ্গল ও সুখ সাধন করে চলো। দুজনে একসাথে যেও না। হে ভিক্ষুগণ, আদিতে যার কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং পরিশেষেও যার কল্যাণ, সেই পরম শ্রেয়ষ্কর ধর্মের যথামর্ম প্রচার কর। পরিশুদ্ধ ব্রক্ষ্মচর্যমণ্ডিত পুণ্যময় জীবনের মহিমা কীর্তন কর’।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।