ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

একজন কর্মবীর ও বলিষ্ঠ সংগঠকের বিদায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২০
একজন কর্মবীর ও বলিষ্ঠ সংগঠকের বিদায়

শ্রদ্ধেয় জাফর আহম্মদ খান স্যার আমাকে 'ছোট ভাই' ও মাঝে মাঝে 'নেতা' ডাকতেন। ফোন করেই ছোট ভাই কিংবা নেতা সম্বোধন করতেন। বলতেন, ছোট ভাই/নেতা কেমন আছো? ফ্রি থাকলে আমার রুমে আসো কথা বলবো। যদিও স্যারের সাথে আমার ব্যাচ ও বয়সের পার্থক্য অনেক ছিল। এতো আদর করে ডাকতেন যে না গিয়ে কোনো উপায় নেই! টোস্ট বিস্কিট আর চা, মাঝে মাঝে মুড়িও থাকতো। 

স্যার একজন কর্মবীর মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বদা লক্ষ্যে স্থির ও অবিচল থাকতেন।

তাতে যতো বাধা বিঘ্নই আসুক না কেন? অনেকের মতো শুধু ৯টা-৫টা রুটিন দায়িত্বে বিশ্বাস করতেন না। প্রয়োজনে অফিস সময়ের পর এমনকি সাপ্তাহিক/সরকারি ছুটির দিনেও তিনি কাজ করতেন। কর্ম সম্পাদনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও খুব দক্ষ একজন কর্মকর্তা। রেখে গেলেন বিবিএসে শত শত সফল কাজের উদাহরণ।  

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। স্যার আমার সাথে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। কর্মজীবন তিনি বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘ সময়। আমি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে বিবিএসের কল্যাণে অনেক ভালো পরামর্শ দিতেন। আমার ভুলত্রুটিগুলো স্পষ্ট করে ধরিয়ে দিতেন।  

তিনি অফিসার্স ক্লাব ঢাকার একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। জেআইসিএর অতি পরিচিত একজন নেতা ছিলেন। অফিসার্স ক্লাবে তিনি আমাকে প্রায়ই নিয়ে যেতেন। অনেক সময় যেতে চাইতাম না। স্যার বলতেন, আরে ভাই চলতো। আমার গাড়ি নিয়ে আবার চলে আসবে। বহু সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি।  

স্যার বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আমাকে ফোন করতেন। আমি কোনদিন আগে ফোন দেওয়ার সুযোগ পাইনি। যেখানে অনেক সদস্যকে ফোন দিতে দিতে ক্লান্তি চলে আসে। স্যার ফোন দিয়ে বলতেন, ছোট ভাই কোন আয়োজন আছে? আমি কয়টার সময় থাকবো? স্যার আমাদের সাথে হাজার হাজার স্মৃতি রেখে গেছেন। স্যার, ক্ষমা করবেন আমাদের। আপনার অনেক সুপরামর্শ ও নির্দেশনা প্রতিপালন করার সক্ষমতা যে ছিল না আমাদের! আপনার মনে অনেক কষ্ট রয়েই গেলো।  

কোন সিনিয়র নিজ থেকে আমাকে এতো আন্তরিকভাবে ভালো পরামর্শ দেবে? কে আমাকে অফিসার্স ক্লাবে নিয়ে যাবে? কে আমাকে বিভিন্ন দিবসে ফোন করবে? কে আমাকে ছোট ভাই বলে সম্বোধন করে এতো কাছে টানবে? আজ সব কিছুই স্মৃতি হয়ে গেলো! কিন্তু, আপনাকে ভোলা কি এতো সহজ স্যার?

বিবিএস অত্যন্ত আন্তরিক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন অভিভাবককে হারালো। আর আমরা হারালাম অফুরন্ত ভালোবাসা। কীর্তিমানের মৃত্যু নাই! ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসীব করুন। আমিন।

(করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শনিবার মারা গেছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কম্পিউটার উইংয়ের পরিচালক (যুগ্মসচিব) জাফর আহম্মদ খান। )

লেখক: বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।