ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ড্রাইভার মালেকের স্বাস্থ্য ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেট

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০
ড্রাইভার মালেকের স্বাস্থ্য ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেট

ড্রাইভার মালেক কাঁপিয়ে দিয়েছেন গোটা দেশকে। বিতর্ক আলোচনা, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে।

কিন্তু কেউ কি প্রশ্ন রাখছি- এই ঘটনার একক দায় কি মালেকের? তাকে সুযোগটা কারা দিয়েছেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি সোনার খনি? না হলে এত আলোচনা কেন? এক বন্ধু বললেন, ড্রাইভার মালেক আর কেরানি আবজালের অবস্থান দেখলাম। তাদের বসদের কী হাল বলুন তো? জবাবে বললাম, বসদের নিয়ে কথা বলা বারণ। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে লজ্জা পান না। ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা-মোকদ্দমা করেন। তাই আমরা এক মালেক নিয়ে বসে আছি। মালেকদের বসদের কথা বলছি না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করলে মালেক তৈরি হবে। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেবে মিঠু সিন্ডিকেট। ২০১২ সাল থেকে বলে আসছি, লিখে আসছি স্বাস্থ্যের মিঠু সিন্ডিকেটের কথা। কোনো ব্যবস্থা কেউ নেয়নি। মাফিয়াতন্ত্র কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছে মিঠু। ব্যাংকিং খাত তো নিষিদ্ধ জগৎ। আলোচনা করা যায় না। সবাই অনেক ক্ষমতাবান। আমরা ব্যস্ত ড্রাইভার নিয়ে। মাফিয়ারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। গডফাদারদের দূরত্ব নক্ষত্রে। করোনাকাল অনেক কিছু জানিয়ে দিয়েছে। মিঠু, আবজাল, ড্রাইভার বাদল সিন্ডিকেট কারা তৈরি করল? কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আজ সর্বনাশা অবস্থান তৈরি করল স্বাস্থ্য খাতে? হাত দিলেই ধরা পড়ছে অনিয়মের পাহাড়। সবকিছু বড় অচেনা। প্রশ্ন উঠছে, ড্রাইভার মালেকের কাছ থেকে কারা অর্থ নিতেন? কাজ করে দিতেন? এ ভাগ কত দূর যেত? মিঠুকে মাফিয়া কারা বানালেন? কান টানলে মাথা আসবে। জিজ্ঞাসাবাদে মালেকের দেওয়া নামগুলোকে ঘিরে তদন্ত হলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।

দরকার সংকটের স্থায়ী সমাধান। অনিয়ম সব সময় ছিল। কিন্তু অদক্ষতা সঙ্গে যুক্ত হলে প্রতিষ্ঠান চলে না। একজন দক্ষ মানুষ একটি প্রতিষ্ঠানকে বদলে দিতে পারেন। চিন্তা-চেতনায় আনতে পারেন পরিবর্তন। খুব কঠিন কিছু না। ঠুনকোভাবে সবাই সবকিছু দেখছে। গভীরতায় প্রবেশ করতে চায় না। ছালবাকলের ভিতরে বৃক্ষ থাকে। এক ড্রাইভারে সব আলোচনা শেষ হয়ে যায় না। আড়ালের মাফিয়াদের বের করতে হবে। কঠিন শুদ্ধি অভিযান দরকার। আগাছা পরিষ্কার হতে পারে দক্ষতার সঙ্গে সবকিছু মোকাবিলা করতে পারলে। দক্ষ ও নিষ্ঠাবান মানুষের কোনো বিকল্প নেই। নবরত্নের মতো সভাসদ হবে এমনও কথা নেই। হজরত ওমরের (রা.) মতো ক্ষিপ্তগতির মানুষ পাওয়া যাবে তাও বলছি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙানো মানুষকে অবশ্যই তার আদর্শিক চেতনায় থাকতে হবে। দুর্নীতি-অনিয়মের ভয়াবহতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। উড়ে এসে জুড়ে বসে হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া আওয়ামী লীগের আদর্শ নয়। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ, ১৯৭৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বলেছেন, ‘আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে। ’ বঙ্গবন্ধু স্বজনপ্রীতিকে দুর্নীতি হিসেবে অবহিত করেছেন। মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলবেন, কাজ করবেন বিপরীত কী করে হয়? ক্ষমতার মসনদে উল্লাস করা একদল লোকের কোনো অতীত নেই। শুধু বাণিজ্যের লোভে তারা ২০০৮ সালের পর সরকারি দল। মন্ত্রিত্ব, এমপি, দলীয় পদ সব পেয়েছেন তারা। এ ধরনের লোকই যোগ দিত সামরিক সরকারগুলোর সঙ্গে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিচ্ছে এখন তারা। সংস্থাগুলোর রিপোর্টে তারা স্বচ্ছ। কারণ আওয়ামী লীগে তাদের কোনো অতীত নেই। হিসাব-নিকাশে কেউ প্রশ্নও করে না মহোদয় ২০০৮ সালের আগে আপনি কোন দলে ছিলেন?

পবিত্র ধর্মগ্রন্থে আছে, ‘নিশ্চয়ই তোমরা সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকবে না। ঢাকলে পরকালে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। ’ পরকাল লাগে না। ইহকালে অনেকের অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে। খুনি-লুটেরাদের শাস্তি ইহকাল-পরকাল দুই কালেই হয়। সব কিছুর সীমা থাকা ভালো। প্রধানমন্ত্রী কত দিক সামাল দেবেন? বাকি মাননীয়দের দায়ভার কী? একটার পর একটা কেলেঙ্কারি ফাঁস সরকারকে বিব্রত করছে। বের হচ্ছে পুরোটাই মেরে দেওয়ার কাহিনি। চারপাশের অনেক কান্ডকীর্তির হিসাব মেলাতে পারি না। ডাকসুর ভিপি নূরকে ধরা, ছাড়া, মামলা দেওয়া, হামলার কান্ড দেখছি। একজন বললেন, ভাব দেখে মনে হচ্ছে, কেউ মিশনে নেমেছে নূরকে জাতীয় নেতা বানাতে। কী বলব বুঝতে পারছি না। কারণ যেদিকে তাকাই শুধু সরকারের আপনজনদের দেখি। ভুল ধরিয়ে দেওয়ার লোক দেখি না। সবার ভাবখানা এমন, সরকার ভুল করতে পারে না। কোথাও হিসাব-নিকাশে একটা ভুল হচ্ছে। কারও সাদা চোখে পড়ছে না ধরা। অনেক সময় আপনজনের সংখ্যা বেড়ে গেলেই সমস্যা বাড়ে। একটা কথা বলে রাখি, ক্ষমতার রাজনীতিতে চাটুকাররা আপন হতে পারে না। দালালরা স্থায়ী সহযোদ্ধা হয় না। করোলা তিতা হলেও উপকারী সবজি। আর আপন হতে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দরকার। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির চিন্তা-চেতনার সত্যিকারের মিলের প্রয়োজন। চাটুকার, দালালরা দুঃসময়ে কেটে পড়ে। ইতিহাস থেকে শেখার আছে। জানি ক্ষমতার রাজনীতিতে কেউ শেখে না। সমালোচনা কেউ সহ্য করে না। চারদিকে প্রশংসার বন্যা থাকলে সমালোচনা ভালো কীভাবে লাগবে? একজন বললেন, জামায়াত আর ফ্রীডম পার্টির অনেক লোক এখন কোথায় জানেন? বললাম কোথায়? জবাবে বন্ধু বললেন, একটা অংশ আওয়ামী লীগে ঢুকে গেছে। আর তারাই বেশি আপনজন সাজছে।
ইতিহাসের পাতায় ছোট ঘটনাই হুট করে বড় হয়ে আসে। আর কীভাবে তা আসবে কেউ জানে না। প্রেসিডেন্ট নিক্সনও জানতেন না ওয়াটারগেট টেপ কেলেঙ্কারি তাঁর সর্বনাশ ডেকে আনবে। প্রথমে তিনি বিষয়টি হালকাভাবে নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পাতাতে কী আর এমন হবে। অবশ্য নিক্সনের অনেক কর্মকান্ডই ছিল বিতর্কিত। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে এই মানুষটির নেতিবাচক ভূমিকা জড়িয়ে আছে। এক ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি সর্বনাশ করে দেয় নিক্সনের। ১৯৭১ সালে নিক্সন ছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা ছিল হতবাক করে দেওয়ার মতো। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে নিক্সনের অবস্থান এখনো বিব্রত করে আমেরিকানদের। তাঁর মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকা ছিল আরও বাজে। মার্কিন অধ্যাপক গ্যারি জে ব্যাস নিউইয়র্ক টাইমসে নিবন্ধ লেখেন এ কেলেঙ্কারি নিয়ে। তিনি তুলে আনেন নিক্সনের হোয়াইট হাউসের টেপ কেলেঙ্কারির কিছু চিত্রও। গোপন টেপরেকর্ডারে ধারণ করা অডিওতে আছে বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকার কথাও। আছে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতীয় নারীদের নিয়ে অশালীন কথা। ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বৈঠক করেন নিক্সনের সঙ্গে। বিষয় ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সমর্থন দেওয়া। বৈঠকের আগে হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে কথোপকথনের টেপে দেখা যায় ভারতীয় নারীদের নিয়ে নিক্সন নোংরা ও বর্ণবাদী কথা বলছেন। এ বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী কঠোরভাবে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। অন্যদিকে নিক্সন পাকিস্তানের পক্ষে। বৈঠকে ইন্দিরার যুক্তির কাছে নিক্সন দাঁড়াতেই পারেননি। বরং তিনি বৈঠকের পরও নোংরামো কথাবার্তা বলেন সহকর্মীদের কাছে। নিক্সন বলেন, তারা (ভারতীয় নারীরা) আমাকে নিস্তেজ করে ফেলে। তারা বিরক্তিকর, তাই তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। নিক্সন বলেছেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় হচ্ছেন ভারতীয় নারীরা। ’ এসব কথা প্রকাশিত হয়েছে, নিক্সন নিজেই হোয়াইট হাউসে সব রেকর্ড করতেন। যা পরে প্রকাশ পায়।

১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট কিসিঞ্জার-নিক্সনের আলাপে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয় ছিল। নিক্সন সেদিন জানতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে আটক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে পাকিস্তানি জান্তা মৃত্যুদন্ড দেবে কিনা? জবাবে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানিরা ভালো লোক, কিন্তু তারা আদিম মনমানসিকতার। ভারতীয়দের মতো সূক্ষ্ম চতুরতা তাদের মধ্যে নেই। ’ গ্যারি জে ব্যাস তার লেখনীতে হোয়াইট হাউসের লজ্জাজনক কূটনীতির কথা তুলে ধরেন। টেপগুলো সংগ্রহ করে লেখক বই লেখেন। তাঁর নিবন্ধ মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। মজার বিষয়, এ টেপ কেলেঙ্কারিই শেষ করে দিয়েছিল নিক্সনকে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের চ্যালেঞ্জের সময় ক্ষমতায় আসেন নিক্সন। অঙ্গীকার ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং যুদ্ধ শেষ করতে চার বছর সময় নেন। এতে আমেরিকানরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসাটা ছিল নিক্সনের জন্য চ্যালেঞ্জের। আর কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ভোটে জিততে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে জড়ান প্রেসিডেন্ট নিক্সন। এ কেলেঙ্কারি আড়াই বছর ধরে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চন্দ্র বিজয় একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে। চার বছর কাটিয়ে দেন। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় দ্বিতীয় দফার শুরুতেই। একদিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ক্ষত অন্যদিকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি। ভোটে ডেমোক্র্যাটদের ক্ষমতা ঠেকাতে গিয়েই নিজের কবর খোঁড়েন। যেনতেনভাবে ভোটে জিততে প্রতিপক্ষের কৌশল জানতে এবং তাদের তছনছ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেন। এতে জড়িয়ে পড়ে সরকার ও দলের কিছু লোক। তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াটারগেট ভবনে ডেমোক্র্যাটদের ন্যাশনাল কমিটির সদর দফতরে হানা দেবে। ছিনিয়ে আনবে তাদের পরিকল্পনার ডিস্ক। আর ফোনে আড়ি পেতে শুনবে সবার কথা।

যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। নির্বাচনী প্রচার চলাকালে নিক্সনের লোকজন হানা দিল ওয়াটারগেটে। তারা ডেমোক্র্যাটদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলগুলো নিয়ে গেল। টেলিফোনে বসাল আড়িপাতা যন্ত্র। কিন্তু সে যন্ত্র কাজ করছিল না ঠিকভাবে। আড়ি পেতে কিছুই শুনতে পারছিল না সিক্রেট এজেন্টরা। লাভ হচ্ছিল না বেশি। তারা সিদ্ধান্ত নিল আবার যাবে ওয়াটারগেট ভবনে। দ্বিতীয় দফা ’৭২ সালের ১৭ জুন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল ও সরকারের পাঁচ ব্যক্তি ওয়াটারগেট ভবনে আড়িপাতা মেশিন বসানোর চেষ্টা করে। প্রথম দফা হামলার কারণে সতর্ক ছিল নিরাপত্তারক্ষীরা। ব্যস, আর যাবে কোথায়। নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ল আগতরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আটক করল তাদের। এফবিআই আগেই কাজ শুরু করেছিল গোপনে। এফবিআই তদন্ত করতে গিয়ে চমকে ওঠে। তাদের দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসে নিক্সনের নাম। এফবিআই আরও জানতে পারে, হোয়াইট হাউসে ওভাল অফিসেও নিক্সন সবকিছু রেকর্ড করতেন।

এফবিআইর একজন কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে গোপন রেখে সব প্রকাশ করবেন। যে ভাবনা সে কাজ। নিজের নাম ও অবস্থান গোপন করে যোগাযোগ করেন ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিকের সঙ্গে। এ দুই সাংবাদিক হলেন কার্লবার্ন স্টেইন ও বব  উডওয়ার্ড। তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা শুরু করেন এফবিআইর এই কর্মকর্তা। তার নাম মার্ক ফেল্ট। দারুণ পেশাদার এক গোয়েন্দা। নিজের নাম গোপন রাখেন সাংবাদিকদের কাছে। নিজের পরিচয় দেন ডিপ থ্রোট নামে। সাংবাদিকরা তাদের বইতেও সোর্সের নাম লেখেন ডিপ থ্রোট। মার্ক গোপনীয়তা পছন্দ করতেন। তাই তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর গোপন রেখেছিলেন নিজেকে। এমনকি নিজের পরিবারের কাছেও। মার্ক সহায়তা না করলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হতো না। বিশ্ব জানতে পারত না নিক্সনের এক ভুলে কত সর্বনাশ। ওয়াশিংটন সফরকালে ২০০৬ সালে ওয়াটারগেট ভবনের সামনে গিয়েছিলাম। এ কেলেঙ্কারি ফাঁসের কারণে নিক্সন প্রশাসনের ৪৩ জনকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল শীর্ষ পর্যায়েরও অনেক রাঘববোয়াল। সিনেট তদন্তও নিক্সনের বিপক্ষে যায়। তারাও ’৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে সিনেটে। ’৭৪ সালের শুরু থেকে নিক্সন বুঝতে পারেন আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। ওই বছরেরই ৮ আগস্ট বিদায় নেওয়ার কথা ঘোষণা দেন নিক্সন। সেই শেষ ভাষণে নিক্সন বলেছিলেন, ‘আমি কখনো দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার লোক নই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার স্বার্থকেই সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। কাজেই আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। আগামীকাল তা কার্যকর হবে। ’ ৯ আগস্ট দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায় নেন নিক্সন। এ পদত্যাগের আগের আড়াই বছর আমেরিকান মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় নিক্সন কেলেঙ্কারির অডিও টেপ। টেপ প্রকাশের বাধা-বিপত্তি আদালতেও গড়ায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ’৭৪ সালের ৫ আগস্ট হোয়াইট হাউস চারটি টেপ প্রকাশে বাধ্য হয়। সে সময় দল পাশে দাঁড়ায়নি। বরং নিক্সনের পদত্যাগের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে সবাই। ’৬৯ সালে ক্ষমতায় বসেন নিক্সন। টেপ কেলেঙ্কারিতে সে ক্ষমতার অবসান হয়। আর কেরানি আবজাল ধরা পড়ার পর তার স্বীকারোক্তিতে মালেকের ড্রাইভার-জীবনের অবসান হয়।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।