গর্ভবতী অনেক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। চেম্বার-হাসপাতাল সর্বত্র এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
এছাড়া নন-কোভিড প্রসূতি ও প্রসব পরবর্তী নারীদের বিভিন্ন কারণে হাসপাতালে দীর্ঘদিন থাকতে হলে তিনিও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন হাসপাতাল থেকেই। গর্ভধারণের ফলে যেহেতু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই তাদের নিয়ে ভয় বেশি।
এর মাঝে নানা গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্বে অনুমোদন পাওয়া সব কোভিড টিকা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য নিরাপদ। তবে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস কেউ যদি টিকা নিতে না চায়, সেটা তার একান্ত নিজস্ব অভিমত। না দেওয়ার স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি নেই।
আমেরিকায় ১ লাখ ৩০ হাজার গর্ভবতী নারী ও ইংল্যান্ডে ৪ হাজার নারী ইতিমধ্যে টিকার আওতায় এসেছেন। তাদের মাঝে সমীক্ষা চালিয়ে মা ও শিশুর কোনও সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি।
গর্ভধারণের যে কোনও সময় কোভিড টিকা নেওয়া যাবে। তবে, কয়েকদিনের মধ্যে ডেলিভারি ডেট বা সিজারের ডেট থাকলে এর পরই টিকা নেওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মা টিকা নিয়েছেন তাদের বাচ্চার শরীরে জন্মের পর কোভিড এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার তরবারি ‘অ্যান্টিবডি’ সৃষ্টি হয়েছে।
স্তনদুগ্ধ দানকারী মা ডেলিভারির পর যে কোনও সময় এবং শিশুর বয়স যা-ই হোক না কেন টিকা নিতে পারবেন। টিকা নেওয়ার কারণে এক মুহুর্তের জন্যও দুধ পান করানো বন্ধ করার দরকার নেই।
গর্ভাবস্থা যেহেতু হাইরিস্ক একটা অবস্থা তাই তাদেরকে সবার আগে টিকা দেওয়া উচিত। কেননা, করোনা পরিস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। কখন এর ঊর্ধ্বগতি থামবে তা বলা যায় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম তাদের সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। নারীরা মাসিকের যে কোনও সময়ও টিকা নিতে পারবেন।
ইতিমধ্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশ গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী মাকে টিকা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। যেহেতু গর্ভবতীকে টিকা দিয়ে দুটো জীবন বাঁচানো সম্ভব, তাই সব গর্ভবতীদের টিকা দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আসুন, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী (প্রেগন্যান্ট অ্যান্ড লেকটেটিং) নারীকে সবার আগে টিকা দিতে আগ্রহী করে দুটো জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। তবে মনে রাখতে হবে, মাস্ক-সামাজিক দূরত্ব-টিকা; এ তিনটিই করোনা মোকাবেলার হাতিয়ার। এর আওতায় সবাই এলেই করোনা জয় সম্ভব।
অবসট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) বিশ্বের সব গাইনি সংস্থার সাথে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গাইনি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ।