ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ব্যাংকিং পেশায় নারী জাগরণের অগ্রদূত বিকেবির এমডি

মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২১
ব্যাংকিং পেশায় নারী জাগরণের অগ্রদূত বিকেবির এমডি

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান নায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য গণমানুষের ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, যা শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক।  

১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৭নং আদেশ বলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশে কৃষির মতো প্রকৃতিনির্ভর, অনিশ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাতে অর্থায়নের জন্য দেশের বৃহত্তর বিশেষায়িত ব্যাংক হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বর্তমানে যার কার্যপরিধি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ। হাল আমলে ব্যাংকটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কোর ব্যাংকিং সলিউশন তথা ১০৩৮টি শাখায় অনলাইনভিত্তিক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে দেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নিভৃত পল্লীতে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আর্থিক খাতে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখছে।  

বিগত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শক্তিশালী ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে গত জুন, ২০১৭ সালে আমানতের স্থিতির পরিমাণ ছিল ২২,৫৫৯ কোটি টাকা, যা জুন, ২০২১ এ আমানতের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২,৯৯৯ কোটি টাকায়। গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০,২৬১ কোটি টাকা নতুন  আমানত রেখেছে আমানতকারীগণ। ব্যাংকটির গত জুন, ২০১৭ সালে ঋণ স্থিতির পরিমাণ ছিল ১৮,৩১১ কেটি টাকা, যা জুন, ২০২১ এ ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫,৪৪৬ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে ঋণের স্থিতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭,১৩৫ কোটি টাকা।  

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে জুন, ২০১৭ সালের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪,৩১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ ক্রমান্বয়ে কমে জুন ২০২১ এ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,৪০৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ স্থিতির ৯ শতাংশ মাত্র।  

অন্যান্য ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন বাড়ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক তখন কৃষক খুঁজে কৃষকের ঘরে কৃষি ঋণ পৌঁছে দিয়ে তা সময় মতো আদায় করছে। যার ফলে খেলাপি ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটের ঘরে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বেশিরভাগ শাখা গ্রামে আর অধিকাংশ প্রবাসী ও গ্রামের বাসিন্দা। যে কারণে অনেক প্রবাসী বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাতে এ ব্যাংকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মানসম্মত গ্রাহক সেবার কারণে।  

গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ৩,৫০৫ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে যা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এর ইতিহাসে এক মাইলফলক। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। যুগশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, কৃষক দরদী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে স্বল্প সুদে, যা গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। জামানতবিহীন এ ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসার প্রয়াস পেয়েছে। আশার কথা, মুজিববর্ষ কর্মসূচির ঋণ গ্রহীতারা ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে যা আশাব্যঞ্জক। এতে প্রমাণিত হয় প্রকৃত কৃষক ও কর্মঠ দরিদ্র জনগোষ্ঠী কখনও ঋণ খেলাপি হয় না। সরকারের একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মধ্যে কর্ম সম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, যা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এক অনন্য অর্জন।  

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ১৪ শতাংশ হলেও এটি আজও গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি বলে স্বীকৃত। বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষভাবে এবং ৮৫ শতাংশ মানুষ জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খাতের সঙ্গে জড়িত। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক দেশের কৃষির মূল ভিত্তি শস্য, মৎস্য ও গবাদি পশুর উৎপাদনের জন্য কৃষকদেরকে ঋণ দিয়ে আসছে। কৃষকের দোড় গোড়ায় কৃষি ঋণ ও আধুনিক সকল ব্যাংকিং সেবা যেমন, আন্তঃব্যাংক লেনদেন তথা আরটিজিএস, ইএফটিএন-ইনওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড, আন্তঃব্যাংক চেক লেনদেন তথা ব্যাচ এবং সর্বশেষ সংযোজিত সরকারি ই-চালান সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ব্যাংকিং সেক্টরের কিংবদন্তী, নারী জাগরণের আলোক বর্তিকা, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রসেনানী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ইতিহাসে প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শিরীন আখতার। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির ব্যাপারে শূণ্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি ঘোষণা করে প্রকৃত কৃষক খুঁজে কৃষি ঋণ প্রদানের নির্দেশনা দেন। তার সুশাসন ও সুনীতির কারণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে প্রাণ চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি হয়েছে।  

বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে এক অনন্য নজির গড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্বে নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথিবীতে বাংলাদেশই একটি মাত্র দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা সকলেই নারী। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার সরকারের দৃঢ় নীতির কারণে সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং পেশার ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। আশা করা যায়, তার কর্তব্যনিষ্ঠা, সুশাসন,  দৃঢ় মনোবল ও ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কৃষককে হয়রানিমুক্ত কৃষি ঋণ, এসএমই ঋণ, শিল্প ঋণ এবং গ্রাহক বান্ধব সর্বাধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রান্তিক জনগণ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসাবে ইতিহাসে স্থান করে নেবেন।  

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২১
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।