শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা–১২ আসনের প্রার্থী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় নেতা ও প্রার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গণসংহতির ঘোষিত ইশতেহারের প্রধান কয়েকটি দিক হলো- ভয়মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি নাগরিকের জীবন-সম্পদ-মর্যাদার সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে; প্রতিটি গুম-খুন ও নিপীড়নের ঘটনায় তদন্ত করা হবে, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে; দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য রাষ্ট্র তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে; ভয়মুক্তভাবে মতামত প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজীয় আইন সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে; বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিকতার প্রধান উৎস প্রধানমন্ত্রীর হাতে একচেটিয়া ক্ষমতা রদ করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হবে; ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার জন্য প্রয়োজনীয় শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করা হবে; বিরোধীদের হয়রানির প্রধান হাতিয়ার নিম্ন আদালতকে সম্পূর্ণভাবে সরকারের আওতা থেকে মুক্ত করা হবে; বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ছাড়াও পুলিশকে একদিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করা হবে, অন্যদিকে তাদের দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহির আওতায় রাখতে সাংবিধানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে।
গণসংহতি ইশতেহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষাখাতে জিডিপির অন্তত ৬ ভাগ বরাদ্দ করা হবে; প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষকদের বেতন সরকারি কর্মকর্তাদের সমান নির্ধারণ করা হবে; জাতীয় ভিত্তিতে চাহিদা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে; পাঠসূচির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে জ্ঞান, সৃজনশীলতার বিকাশ ও জনশক্তি নির্মাণের জন্য উপযোগী শিক্ষার কাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার বিস্তার এবং উচ্চশিক্ষার সকল গ্রন্থাদি মাতৃভাষায় অনুবাদের লক্ষ্যে জাতীয় বন্দোবস্ত গ্রহণ করা হবে; কৃষকদের জন্য লাভজনক রেখেই কৃষিপণ্যের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা হবে; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে; প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য উদ্যোক্তাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ’
‘আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া সকল সম্প্রদায়, নারীর জন্য যৌক্তিক হারে কোটা রাখা হবে; স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা বা তার সন্তান ছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে কোটা বাতিল করা হবে; চিকিৎসার মান ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং এই খাতকে হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; পরিবেশ দূষণ বন্ধে কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে; নদী-খাল-জলাশয়-মুক্তস্থান-ফসলি জমি দূষণ ও দখলমুক্ত রাখাকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে; নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে; সাম্প্রদায়িক হামলা, হানাহানি ও বিদ্বেষ প্রতিরোধে পৃথক আদালত গঠন করা হবে; শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও জ্বালানি অপরাধীদের শাস্তি দিতে বিশেষ আদালত গঠন করা হবে। ’
এই ইশতেহার পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
ইশতেহার পাঠপরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার দুর্নীতি ও লুটপাট জারি রাখতেই মানুষকে ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে দমিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু এইভাবে তারা দেশটিকে এমন স্তরে নিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশ আজ অচলাবস্থায় পড়ে গেছে। গণসংহতি আন্দোলন তাই ভয়মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেন বিরোধীরাও রাজনীতি করার সুযোগ পায়, প্রতিটি মানুষ যেন নিজের মতপ্রকাশ করতে পারে রাষ্ট্র সে পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
জোনায়েদ সাকি প্রশ্নোত্তরে আরও অভিযোগ করেন, তিনি নিজে তেজগাঁও কলেজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারকর্মীরা হামলা, মারধর ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পুলিশি হুমকির কারণে নির্বাচনী অফিস বন্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। শুক্রবার ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। সারাদেশে সরকারী বাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশের উপস্থিতি ও সহযোগিতায় এ ধরনের হামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। সবার জন্য সমান সুযোগ অনেক পরের কথা, নির্বাচনের পরিবেশ আদৌ সৃষ্টি হয়েছে তা বলা যাবে না।
তিনি বলেন, জনগণই নির্ধারক শক্তি। তাই হামলা-মামলা, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে জনগণকে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোদাল প্রতীকে গণসংহতি আন্দোলনের তিন প্রার্থী জোনায়েদ সাকি, হাসান মারুফ রুমী (চট্টগ্রাম-১০) ও জুলহাসনাইন বাবুকে (পাবনা-১) বিজয়ী করার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/