ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্যান্য দল

গণফোরামে ‘চলছে গৃহদাহ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
গণফোরামে ‘চলছে গৃহদাহ’

ঢাকা: বিএনপির সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ করায় দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল দেখা দিয়েছে গণফোরামে। একই সঙ্গে গত ৫ মে গঠিত দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ‘স্বেচ্ছাচারী কায়দা’য় করা হয়েছে বলেও দলীয় প্রধান ড. কামাল হোসেনের কাছে অভিযোগ করেছেন গণফোরামের পাঁচজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দলটির একজন স্থায়ী সদস্যও। 

গণফোরামের পাঁচ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বলছেন, দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী স্বেচ্ছাচারী কায়দায় কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থে অগণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন এবং দলীয় আদর্শ ও লক্ষ্য জলাঞ্জলি দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে।

তাদের অভিযোগের একটি অনুলিপি বাংলানিউজের হাতেও এসেছে।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, জামাল উদ্দিন আহমেদ, এসএম আলতাফ হোসেন, তোবারক হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম ও স্থায়ী সদস্য অধ্যাপক ডা. এ এ মাহমুদ বীর প্রতীক।

দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় গঠনতন্ত্রে উপদেষ্টামণ্ডলীর কোনো বিধান নাই। অথচ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, এসএম আলতাফ হোসেন, তোবারক হোসেন গণফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। কিন্তু তারাসহ প্রকৌশলী সিরাজুল হককে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করে বস্তত দলের বাইরে রাখা হয়েছে।

গণফোরামের বর্তমান কমিটির একনম্বর নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আজীবন বিশেষ সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা মনোনয়ন না পেয়ে ওই রাতেই ড. কামাল হোসেনের কাছে আশ্রয় নেন। একই সঙ্গে বিএনপির সহযোগিতায় গত নির্বাচনে মনোনয়নও পান। তিনি পাঁচমাস আগে দলে যোগ দেন এবং দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির মর্যাদার আসীন হন; যা ন্যায়-নীতি, দলীয় আনুগত্য এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দলের বহু পরীক্ষিত নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ বিগত পাঁচবছরে দলের কোনো সভায় যোগ দেননি-এমন ব্যক্তিকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ উল্লেখ করে গণফোরামের ওই পাঁচ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. কামাল হোসেনকে বলেছেন, ‘আপনার কাছে আবেদন, বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে তথাকথিত অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিকভাবে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিন। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বৃহত্তর কর্মীসভা (কনভেনশন) আহ্বান করে দলে গণতন্ত্রের ধারা এবং আদর্শ সমুন্নত রাখুন। ’

যোগাযোগ করা হলে মফিজুল ইসলাম খান কামাল বাংলানিউজকে বলেন, গত ১২ অক্টোবর দলের সভাপতির কাছে অভিযোগপত্রটি দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো রকম সাড়া পাইনি।  

‘এখন আর রাজনীতি নাই। সবাই ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে চলে,’ বলেন তিনি।

গণফোরামের যে কমিটি করা হয়েছে তা কেউ মানে না দাবি করে মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছি। গণফোরাম যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল তাতে বিএনপির সঙ্গে জোট করার কথা না।

‘আমাদের দলের কয়েকজন নেতা গত নির্বাচনে প্রচুর টাকা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। আমরা এধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই,’ যোগ করেন তিনি।  

অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এ নিয়ে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে।

‘একটি গণতান্ত্রিক দলে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ থাকে। সবাই তো আর একমত হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। যারা অভিযোগ দিয়েছেন তারা সিনিয়র নেতা। এ ধরনের চিঠি দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। ’

দলের কনভেনশন ডাকার বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই তাদের বক্তব্য আমরা বিবেচনায় নেব।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট করার বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, এই বিষয়ে তাদের অভিযোগের সঙ্গে আমি একমত নই। ওনারা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন সেটা নিয়ে ওনাদের আরও চিন্তা করা উচিত। ঐক্যফ্রন্টে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নেই। বরং অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোক আছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
এমএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ