ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্যান্য দল

কমিউনিটি আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে: ডা. মুশতাক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২০
কমিউনিটি আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে: ডা. মুশতাক

ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষদের জন্য কমিউনিটি আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মন্তব্য করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন।

সোমবার (১ জুন) সন্ধ্যায় বংলাদেশ যুব ইউনিয়নের উদ্যোগে অনলাইনের মাধ্যমে ইউথ হেল্থলাইন (Youth Healthline) এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

করোনা রোগীদের সেবায় ইউথ হেল্থলাইনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সারা বিশ্বেই আমরা বর্তমানে দুর্যোগ মুহূর্ত অতিক্রম করছি। স্বাস্থ্য বিষয় বলতে আমরা যেটা বুঝি, শুধুমাত্র বড় বড় হাসপাতাল নির্মাণ, অনেক বড় বড় যন্ত্রপাতি নয়, চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে করোনা ভাইরাসের মত মহামারি মোকাবিলে করতে আমরা কতটা সক্ষম? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী যেটা বলা হয়, পাবলিক হেলথ সিস্টেম অর্থাৎ জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা কতখানি শক্তিশালী। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একেবারে দুর্বল নয়। আমাদের হয়তো সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে স্বাস্থ্য কাঠামো থাকলেও শহরের সিটি করপোরেশন এলাকায় স্বাস্থ্য কাঠামো একেবারেই নেই। আমরা গতবার ডেঙ্গুর সময় দেখেছি কী করুণ অবস্থা। মহামারি কিন্তু শুরু হয় শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকেই। শহরাঞ্চলে যদি স্বাস্থ্য সেবা না দেই, তাহলে এটা ছড়াতে থাকে। সোয়াইন ফ্লু ঢাকা থেকে শুরু হয়েছিল। করোনা আক্রান্তও প্রথম শনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুরের শিবচরে। বর্তমানেও আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাতেও অধিকাংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার এবং চট্টগ্রাম। অন্যান্য শহরেও মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস ঋতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো রোগ নয়। ডাইরিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা নিজে নিজেই কমে যায়।   শহর এলাকায় আমরা যদি রোগী শনাক্ত করে আইসোলেটেড না করতে পারি, তাহলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে না। যত সুযোগ দেওয়া হবে এই ভাইরাস ছড়াতেই থাকবে। যত মানুষ পাবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত করতে থাকবে। বাংলাদেশের সব মানুষ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে কি বাংলাদেশ থেকে এই মহামারি শেষ হয়ে যাবে। না হবে না। কারণ স্থলভাগের সাথে তিন দিকে আছে ভারত। তাহলে ভারতের সমস্ত লোককেও সংক্রমিত করতে হবে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে করোনা এখন ছড়ায়নি। সুতরাং যারা বলে হার্ড ইমিউনিটি বা দলবদ্ধভাবে আমরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা আমরা অর্জন করবো, এটা একদিকে অবাস্তব এবং আরেক দিকে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করে শুধুমাত্র সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা। এতে কত লোকের যে মৃত্যু হবে তার কোন সীমানা নেই।

সাবেক প্রধান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, যখন জনস্বাস্থ্যে বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করবেন, বাড়িতে থাকতে বলবেন, তখন কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। দৈনিন্দন আয়-রোজগার না করলে সে না খেয়ে মারা যাবে। সুতরাং তাদের সামাজিক সহায়তা দেওয়ার বাধ্য বাদকতার আন্দোলন্টা এখন যুব ইউনিয়নের করা দরকার। বলা দরকার সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তোমরা যদি রোগ থেকে মুক্ত থাকতে চাও তাহলে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করে, তাদের সামাজিক সুরক্ষাকে অবহেলা করে তোমরাও বাঁচতে পারবে না।  

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস কমেই শহরাঞ্চলের ঘনবসতি এলাকায় হানা দিচ্ছে এবং দিবে। আমরা সেসব এলাকায় কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিনি। শহর এলাকায় মৃদু লক্ষণ নিয়ে অনেকেই আমাদের সামনে ঘোরাফেরা করছে, তারা করোনা ছড়াচ্ছে। মহামারির সংজ্ঞা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। এটা যে কিছুদিনের মধ্যে ঘনীভূত মহামারি আকারে বাড়বে না সেটা বলা যায়না। সেটা হলে গণহত্যার মতো মানুষ মারা যাবে। ফলে যে সামাজিক অভিঘাত তৈরি হবে, তা রক্ষা করা কষ্টকর হবে।

তিনি বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি করোনায় সমাজের বেশ কিছু উপরতলার মানুষ মৃত্যু বরণ করছেন। কিন্তু এটা থেকে আবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না যে করোনায় শ্রমজীবী মানুষের কিছুই হবে না। ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইন বা হোম আইসোলেশন করা যায় না। এক ঘরে ৫ থেকে ৭ জন মানুষ থাকে। কীভাবে সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইন সম্ভব। ঘনবসতি এলাকায় কমিউনিটি কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। যাদের সামান্য জ্বর-কাশি আছেন তারা সেখানে থাকবেন। তাদের হাসপাতালে যাবার দরকার নেই। এসব কোয়ারেন্টিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার আর এখানে সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। কারণ তারাও বাঁচবে না যদি সমাজের বঞ্চিত মানুষদের করোনা থেকে মুক্ত করা না যায়। করোনা রোগী শনাক্ত করে আলাদা করা না গেলে এই মহামারি থামানো যাবে না।    

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আরও আলোচনা করেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ম. ইব্রাহীম।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২০
আরকেআর/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ