ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৬ মাস ধরে যুবলীগের সাংগঠনিক কাঠামো নেই সিরাজগঞ্জে!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
১৬ মাস ধরে যুবলীগের সাংগঠনিক কাঠামো নেই সিরাজগঞ্জে!

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। এক সময় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরের আতঙ্কের নাম ছিল এ সংগঠনটি।

অথচ এমন একটি সংগঠনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সাংগঠনিক কাঠামোই নেই ১৬ মাস ধরে। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ৪ বছর ধরে। সাংগঠন না থাকায় নেই কোনো কর্মসূচিও। ফলে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৬ মাস আগে ১ সদস্যের (শুধুমাত্র সভাপতি) কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এখন পর্যন্তও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়নি।  

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৫ জুন জেলা যুবলীগের সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাশেদ ইউসুফ জুয়েল সভাপতি ও একরামুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কমিটির সাধারণ সম্পাদক একরামুল হককে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ৮ ফেব্রয়ারি এক সদস্যের (শুধু সভাপতি) কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ১৪ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য পদ পেতে আগ্রহীদের জীবন বৃত্তান্ত পাঠানোর আহ্বান জানায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তখনই জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পদপ্রত্যাশী তাদের জীবন বৃত্তান্ত পাঠিয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানের প্রেক্ষিতে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন। জীবন বৃত্তান্ত আহ্বানের ১১ মাস পর দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দুই দফায় জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়ার পরও কমিটি ঘোষণা হয়নি।  

এদিকে কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় বর্তমানে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তদারকি না থাকায় জেলা নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা, থানা ও পৌরসভার ইউনিটগুলোর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য জেলা যুবলীগের শক্তিশালী সংগঠন জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা।  

যুবলীগের সাবেক একাধিক নেতা জানান, ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে জেলা যুবলীগের সম্মেলনে মঈনুদ্দিন খান চিনু সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এক বছর চার মাস পর ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর দায়িত্ব পালন করে। এরপর থেকেই আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি জেলা যুবলীগ। তবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ প্রথম জেলা যুবলীগ কমিটি বিহীন রয়েছে বলে নেতারা জানান।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ প্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করেন। প্রায় শতাধিক নেতা জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ফের জীবন বৃত্তান্ত চায় কেন্দ্রীয় কমিটি। তারও ৫ মাস হয়েছে, কমিটি দেওয়া হয়নি।  

সংগঠনের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী এক নেতা বলেন, খুব শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।  

জেলা যুবলীগের বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য একরামুল হক বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংগঠনের কার্যক্রম নেই। ফলে বিএনপি-জামায়াত এখন মাঠে চলে এসেছে। আওয়ামী লীগের পরেই যুবলীগের স্থান। এমন একটি সংগঠনের কার্যক্রম নেই। যত দ্রুত সম্ভব যোগ্য নেতৃত্বের একটি কমিটি দেওয়া করা দরকার।  

জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন খান চিনু বলেন, যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত দীর্ঘ সময় কমিটি বিহীন কখনও ছিল না। এতে সংগঠনে স্থবিরতা নেমে আসবে এটিই স্বাভাবিক। সামনে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। শক্তিশালী যুবলীগ ছাড়া এগুলো মোকাবিলা সম্ভব নয়।  

জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ পান্না বলেন, সামনের কঠিন দিনগুলো মোকাবিলায় যত দ্রুত সম্ভব আহ্বায়ক আর পূর্ণাঙ্গ কমিটিই যেটিই হোক দেওয়া প্রয়োজন।  

যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, কমিটি না থাকলে কার্যক্রম স্থবির থাকবে এটিই স্বাভাবিক। তবে চেয়ারম্যান দেখছেন খুব শিগগিরই কমিটি দিয়ে দেবেন।  

কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে) ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, কমিটি শিগগিরিই হবে। আহ্বায়ক কমিটি করার জন্য বায়োডাটা নেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য যারা নেতারা আছে তাদের কাছ থেকেও নাম নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
জেএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।