ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

রাষ্ট্র সংস্কার ও উন্নত জাতি গঠনে আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই: মাসুদ সাঈদী 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
রাষ্ট্র সংস্কার ও উন্নত জাতি গঠনে আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প নেই: মাসুদ সাঈদী 

জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সুশিক্ষা ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নতি-অগ্রগতি সম্ভব নয়।

এ শিক্ষা কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষকের ওপরই নির্ভর করে একটি জাতির সুষ্ঠু গঠন, সুন্দর বিকাশ ও উন্নতি-অবনতির পারদ। শিক্ষকের হাতে গড়া ছোট্ট শিশুটিই একদিন পরিণত হয় নামকরা অফিসার, খ্যাতিমান ডাক্তার, যশস্বী প্রকৌশলী, অকুতোভয় সেনানায়ক, চৌকস সমরনায়ক এবং বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়কে। মোটকথা, জ্ঞানগরিমা, সৃষ্টিশীলতা-সেবা, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বে যারাই বিশ্বকে কিছু উপহার দেন তাদের সবাই কোনো না কোনোভাবে শিক্ষকের স্নেহস্পর্শে ধন্য। এজন্য শিক্ষককে বলা হয় জাতি গঠনের মহান কারিগর।

শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এফ করিম আলিম মাদ্রাসায় বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন জিয়ানগর উপজেলা শাখা আয়োজিত সাধারণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মাসুদ সাঈদী বলেন, শিক্ষা আলোস্বরূপ। আর শিক্ষক হলেন আলোকবর্তিকা। এক প্রদীপ থেকে যেমন লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো যায়, ঠিক তেমনি একজন শিক্ষকের মাধ্যমে গোটা জাতিকে আলোকিত করা যায়। তিনি শিক্ষার্থীর দেহ-মনে যে আলো জ্বালিয়ে দেন, ক্রমে সে আলোয় উদ্ভাসিত হয় প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি জনপদ। অনস্বীকার্য যে, এই পৃথিবীর বিনির্মাণ ও শ্রীবৃদ্ধি যাদের হাতে হয়েছে তারা সবাই ছিলেন শিক্ষক অথবা গুরু বা পণ্ডিত। তাদের আলোয়ই আলোকিত হয়েছে পুরো পৃথিবী।

তিনি বলেন, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। নবী-রাসূলগণ আলাইহিমুস সালাম ছিলেন মানবজাতির মহান শিক্ষক। তাদের উত্তরাধিকার হিসেবে যারা শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত তারাও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বিবেচিত। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাদের ইলমী সুধা পানে ধন্য হন। তাদের দিকনির্দেশনা মেনে স্বীয় জীবন, সন্তান, স্বজন, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে আলোকের পথে, কল্যাণের পথে পরিচালিত করেন। দেশ-জাতির ক্রান্তিলগ্নে যে কোনো প্রয়োজনে তাদের কাছেই ছুটে আসে সর্বাগ্রে।

‘কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মাছের যেমন পতন শুরু হয় মাথা থেকে, ঠিক তেমনি জাতির অধঃপতন শুরু হয় জাতির নেতৃবৃন্দ তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, উল্কার গতিতে তা পুরো জাতিকে ধ্বংসের দিকে তাড়িত করছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে মানহীন শিক্ষকের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরূপ শিক্ষকের হাতে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মী কেউই নিরাপদ নয়। ’

মাসুদ সাঈদী বলেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অনেক শিক্ষকেরই নেই পর্যাপ্ত যোগ্যতা, উচ্চশিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও স্বীকৃতি। কিছু শিক্ষকের রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়েই কোমলমতি শিক্ষাথীরা বইবিমুখ হচ্ছে। পড়ার টেবিলের পরিবর্তে ক্লাব এবং পানশালায় ফুর্তি করছে। বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে রাস্তাঘাট এবং পার্কে আড্ডা দিচ্ছে। হিরোইজম দেখাতে কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাচ্ছে। কথিত বড়ভাইদের নির্দেশে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। দলীয় ক্যাডারদের খায়েশ পূরণ করতে নারী নিপীড়ন এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে জড়িত হচ্ছে। বই খাতা কলমের পরিবর্তে তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে ক্ষুর, চাকুসহ নানা অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র।  

‘অন্যদিকে শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনার ফল ইতোমধ্যে জাতি পেতে শুরু করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মনুষ্যত্বের পরিবর্তে পশুত্বের চর্চা বেড়েছে। ফলে সনদধারীর সংখ্যা বাড়লেও আলোকিত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ইভটিজিং, বুলিং, র‌্যাগিং, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসা, শিক্ষার্থী নির্যাতন ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় এই রাষ্ট্র সংস্কার ও সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান নাগরিকের সমন্বয়ে একটি উন্নত জাতি গঠনে আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প কিছু নেই ‘

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন জিয়ানগর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবু সায়াদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের পিরোজপুর জেলার প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাফাজ্জাল হোসেন ফরিদ, পিরোজপুর জেলা নির্বাচন বিভাগীয় সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিয়ানগর উপজেলা আমীর মাওলানা আলী হোসাইন, সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান রাতুল, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন পিরোজপুর জেলা সভাপতি সোহরাব হোসেন জুয়েল, শিক্ষক প্রতিনিধি তাওহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় বিভিন্ন কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

এদিকে বিকেলে দীর্ঘা বাজার কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী।

গোপাল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও চিত্তরঞ্জন পালের সঞ্চালনায় মতবিমিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজাকে কেন্দ্র করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কেউ যেন কোনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এদেশে হিন্দু মুসলমান সকলের সমান অধিকার রয়েছে। যারা বলেন “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”- তাদের এ কথায় আমরা বিশ্বাসী নই, বরং “ধর্ম যার যার, অধিকার সবার”- আমরা এ কথায় বিশ্বাসী। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদের ভাই বোন। তাদের অধিকারের ব্যাপারে আমরা সচেতন। মুসলমানের মত এদেশে তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারেনি। কথা বললেই মামলা হামলার শিকার হতে হতো। তারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছিল, চোরের মত দিনের ভোট রাতে নিত। তাদের করা জুলুম নির্যাতনের কারণে জনরোষে শেষ পর্যন্ত তারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ, পৌর আমির মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক শেখ, নাজিরপুর উপজেলা আমীর আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলা আমির মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, স্থানীয় কমিউনিটি নেতা সুব্রত বৈরাগী, শংকর পাল, বাবুল দাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।