ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন: অন্তর্বর্তী সরকারকে জামায়াত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৪
দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন: অন্তর্বর্তী সরকারকে জামায়াত

মেহেরপুর: দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করবে জামায়াতে ইসলামী।

খুব দীর্ঘ সময় নয়, আবার খুব সংক্ষিপ্ত সময় নয়, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, জুডিসিয়ারিসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোকে সংস্কার করে অবিলম্বে নির্বাচন ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।  

আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে মেহেরপুর জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। মেহেরপুর ড. শহীদ সামজ্জোহা পার্কে এই কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কর্মী সম্মেলন উদ্‌বোধনী বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসেন, যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চল টিম সদস্য ড. আলমগীর বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, মেহেরপুর জেলা জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুল আলম, গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমির রবিউল ইসলাম, মেহেরপুর পৌর জামাতের আমির সোহেল রানা ডলার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা কথা দিয়েছি, জামায়াতে ইসলামী একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সরকারকে সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু সেই সময়টা খুব লম্বা নয়। কারণ, সময় লম্বা হলে ষড়যন্ত্র বাড়ে, চক্রান্ত বাড়ে। এখনো প্রশাসনের অধিকাংশ জায়গায় এখনো ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে, সুযোগ পেলেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তাই আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে একটি জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।

তিনি বলেন, ‘১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসক দল আমাদের বুকের ওপর থেকে সরে যাওয়ায় একটা মুক্ত–স্বাধীন ও স্বস্তির বাংলাদেশে আমরা নিশ্বাস ফেলতে পারছি। এর পেছনে রয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার অকুতোভয় চেতনা ও রাজপথে রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সর্বোপরি মহান আল্লাহ তাআলার আসমান থেকে নাজিল হওয়া অসীম করুণা, দয়া ও রহমত এর পেছনে রয়েছে। ’

মিয়া পরওয়ার বলেন, ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন হয়েছে। এদেশে আবার নতুন করে ষড়যন্ত্রও শুরু হয়েছে। আগস্টের বিপ্লবের সাথে সাথে পাল্টা প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র হয়েছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দোসর সুপ্রিম কোর্ট, অপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের কিছু সংঘবদ্ধ বিচারপতিরা গোপনে ষড়যন্ত্র করে হাইকোর্টে মিটিং করছে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী  সরকারকে বাতিল করতে আদালতে ফুল কোর্টে মিটিং ডেকেছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতা খবর পেয়ে সকাল থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও করে এই দলবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। সেদিন তারা বাতিল করতে পারলে ৫ আগস্টের বিপ্লব ও রক্তদান ব্যর্থ হয়ে যেতো।

দিল্লিতে বসে খুনিদের মাস্টারমাইন্ড ঘুমিয়ে নেই, তিনি কাজে ব্যস্ত আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অমুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের উসকিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তারা বোঝাতে চায় আওয়ামী লীগ না থাকলে অমুসলিমরা নিরাপদে থাকে না। তাদের নিরাপত্তা দিতে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিপ্লবের পরপরই তারা মন্দিরে হামলা অমুসলিমদের ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার ষড়যন্ত্র করে তাদের উসকে দিয়েছে। তারা বোঝাতে চেয়েছে এদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা হিন্দু ভাইদের সাথে পূজার সময় মিলে মিশে তাদের ধর্ম পালনে সাহায্য ও মন্দির পাহারা দিয়ে তাদের সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। লাঠি হাতে মন্দির পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ১৫ বছরে কোনো খবর না থাকলেও জনপ্রশাসনে এ দাবি, সে দাবি সব দাবি পূরণ করা লাগবে। আনসার কাণ্ড, জনপ্রশাসনে অস্থিতরা তৈরি করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনাকে এদেশে আনতে এগুলো ছিল নতুন করে তার দোসরদের চক্রান্ত। তাদের সেই চক্রান্ত থেমে নেই, এখনও চলছে।

সকল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আসুন আমাদের ৫ আগস্ট এতো হাজার হাজার লোকের রক্ত দান, এত লোকের ফাঁসি, এতো জুলুম, লাখ লাখ লোকের নামে মামলা, ক্রসফায়ার, নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে সেই আত্মত্যাগের দিকে তাকিয়ে জাতীয় স্বার্থ মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিই। তাহলে অপশক্তি রাজনৈতিক ফ্যাসিস্টদের পরাজয় নিশ্চিত হবে। তারা আর জনগণের কাছে আসতে পারবে না।

উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা অরাজনৈতিক সরকার হওয়ার কারণে আপনাদের বিপথে পরিচালনা করার জন্য অনেক দেশি বিদেশি এজেন্সি কাজ করতে পারে, সক্রিয় হতে পারে। এজন্য প্রশাসনসহ সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।