ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, যা জানা গেল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, যা জানা গেল

কুমিল্লা: সম্প্রতি কুমিল্লায় আব্দুল হাই কানু নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

তাদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি, এছাড়া আরও কিছু মামলা আছে তার নামে।

এক মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক আব্দুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়েছেন। এসময় পাশ থেকে একজন তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন। অপরজন বলছেন, কুমিল্লা থেকে বের হয়ে যেতে। এসময় আব্দুল হাই কানু আকুতি করে বাড়ি থেকে বের হবেন না বললে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এতো বছর বাড়িতে থাকতে পেরেছি? এসময় আরেকজন বলে ওঠেন, আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন? এসময় তিনি হাতজোড় করে সবার কাছে মাফ চান। একপর্যায়ে তাকে দুই হাত ধরে দুজন ব্যক্তি সামনের দিকে নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, রোববার সকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বাজার করতে বের হন। এসময় তাকে স্থানীয় কয়েকজন ধরে নিয়ে যান কুলিয়ারা হাইস্কুলের সামনে। সেখানে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়। এ ঘটনার পর পালিয়েছেন জড়িতরা। এদিকে জড়িতদের ধরতে পুলিশের কয়েকটি টিম তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে ছবি ছিল আব্দুল হাই কানুর। সে কারণে হয়তো তিনি রোষানলে পড়েছেন।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, আমার সঙ্গে যে বর্বর ঘটনা ঘটেছে।  ২০১৬ সালে আমার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বাতিসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সায় ছিল না। তিনি নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হয়রানি করেন। আমার বিরুদ্ধে নয়টি মামলা করা হয়। কারাগারেও যেতে হয়। কারাগারে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সঙ্গেও কয়েকদিন ছিলাম। রোববার মুজিবুল হকের নির্বাচনী এলাকায় আমার ওপর জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। তারা আমার গলায় ছুরি পর্যন্ত বসিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমি গ্রামের বাড়িতে আসি। এর আগে মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে এলাকা ছাড়া ছিলাম। ভেবেছিলাম এবার স্বস্তিতে গ্রামে থাকতে পারব। কিন্তু ওরা পাকিস্তানি হায়েনার চেয়েও হিংস্র আচরণ করেছে আমার সঙ্গে।

তারা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ২০০৬ সালে সে দুবাই চলে যায়। ৫ আগস্টের পর ফিরে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আরেকজন গাজীপুরে থাকে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কয়েকজনের পরিচয় পেয়েছি। জানতে পেরেছি জড়িতরা কেউ গাজীপুর, কেউ ঢাকায় থাকেন। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাই কানু একটি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এছাড়া আরও একাধিক মামলা আছে তার নামে। তার ছেলে মানুষকে অত্যাচার করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।