ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই পরিবর্তনের (৫ আগস্ট) পরে যখন আমরা দুই-একটা জায়গায় খোঁজখবর নেই, অফিস আদালতে খোঁজখবর নেই, ভয়াবহ কাণ্ড; ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই সরকারি আমলাদের মধ্যে। এটা বলতে আমি বাধ্য হলাম।
এ সময় দেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ‘গ্রন্থ আড্ডা’র অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট কালকে হয়েছে। এতগুলো ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, তার মধ্যে মনে হয় সাড়ে পাঁচ হাজার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোতে, বাকিরা কী করবে? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হাইস্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়। আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল সেখানে লটারি করে ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলেরা পরীক্ষা দিচ্ছে, ক্লাস থ্রিতে যে ছেলেটা ভর্তি হবে তাকে যেতে হচ্ছে গাইবান্ধা স্কুলে। এটা কোনো ব্যবস্থা? কী লাভ এটাতে? কী তৈরি হচ্ছে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারি না। আমি বলব যে, উন্মাদনা চলছে শিক্ষার ক্ষেত্রে, এটার ব্যাপারে কেউ দৃষ্টিও দিচ্ছে না, কথাও বলছে না, বিষয়গুলো পরিবর্তন করার জন্য কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না।
শিক্ষাক্ষেত্রে হ য ব র ল অবস্থা মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বাংলাদেশের অনেক সমস্যা তার মধ্যে লেখাপড়াটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে! শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা এটা একদম শেষ, এটা মধ্যে কিছু অবশিষ্ট আছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে একেবারে ইউনির্ভাসিটি সব জায়গায় দেখবেন যে, এত নিচে চলে গেছে মান, তা বলে বোঝানো যাবে না। ক্যাডেট কলেজে সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করে, এটা তো মোস্ট প্রিভিলাইজড, বাট হোয়াট অ্যাবাউট দ্য প্রাইমারি স্কুলস। একেবারে কুড়িগ্রামের রৌমারি চরের সেই প্রাইমারি স্কুলে সেখানে কী শিক্ষা পাচ্ছে, কী সুবিধা পাচ্ছে, সেটা কিন্তু আমরা একেবারেই জানি না। অসংখ্য স্কুল তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন এমপিওভুক্তি করে, অনেক কলেজ তৈরি হয়েছে উইথ অনার্স অ্যান্ড মাস্টার্স, যেখানে আপনার কোনো শিক্ষক নেই, সেখানেও অনার্স খুলে বসে আছে।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া দরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু শিক্ষা বিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন হয় নাই। যেটা আপনার আগে প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি। গোটা সমস্যার মূলে ওই জায়গাটা। আমার যদি শিক্ষাটা ঠিক না হয়, পরিকল্পনা যদি আমার না থাকে, তা হলে আমি কী দিতে পারব বা সমাজে কী পরিবর্তন আমি আনতে পারব, আমি নিজে পরিবারের জন্য কী পরিবর্তন আনতে পারব। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে হাইস্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্র নেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, পলিসি গবেষক মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষা অনুরাগী আফরোজা খানম রীতা, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়িদ আবদুল্লাহ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের জহির দিপ্তী, মঞ্জুর এলাহী, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, হাসান আল আরিফ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
টিএ/এমজেএফ