যশোর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৫ বছরে পতিত স্বৈরাচারের আমলে আমি, আপনি, আপনারা সকলেই অন্যায়, অত্যাচার, হামলা, মামলা, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তার প্রতিশোধ আমরা অবশ্যই নেব।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে দফাওয়ারি তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। কারণ এই ৩১ দফার মধ্যেই রয়েছে রাষ্ট্র মেরামতের যাবতীয় উপাদান। এর সফল বাস্তবায়নই হবে সত্যিকারের গণতন্ত্রায়ণ।
তিনি বলেন, ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, এটা বিগত স্বৈরাচার আমলে রাজপথে থাকা সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের। বড় দল হিসেবে এর বাস্তবায়নের দায় আমাদের ওপর বর্তায়।
এর আগে হোটেল ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল চত্বরে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া কর্মশালায় বিকেল চারটায় যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি সকল নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানান এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে তিনি বক্তৃতা করেন। কর্মশালায় যশোর, ঝিনাইদহ এবং নড়াইল জেলা বিএনপির প্রায় ৮০০ ডেলিগেট অংশ নেন।
সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাডভাইজারি কমিটির বিশেষ সহকারী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা ভালোমন্দের বিচার করতে জানে। আপনারা কোথাও গেলে মানুষ আপনাদেরকে সালাম দেন, সম্মান জানান। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে জনগণ আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা যেসব নেতাকর্মী নষ্ট করতে চাইবে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থপর হতে হবে। কারণ গত ১৭ বছরে অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কারও কারণে সেই অবস্থান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রশাসন, ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। তারা গালভরা উন্নয়নের গল্প করে দেশকে পরনির্ভরশীল করে তুলেছিল। দেশে সকল পর্যায় লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছিল।
তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কৃষকদের কোন ডাটাবেজ নেই। ভবিষ্যতে এটা তৈরি করে দেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের প্রায় এক কোটি প্রতিবন্ধীকে নানাভাবে সহায়তার মাধ্যমে সমাজ ও উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা হবে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি কাজ করছে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়বার সময়। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন ১৮ কোটি জনতা। যে বাংলাদেশে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা রাজনৈতিক দর্শনের কারণে কোনো মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা হবে না-এমন বাংলাদেশই আজ মানুষের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য ১৮ কোটি মানুষ যে ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে তিনি আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান। কিন্তু, তারেক রহমানের পক্ষে এই ১৮ কোটি জনতার স্বপ্ন পূরণ করা কখনোই সম্ভব হবে না যদি বিএনপি কর্মীরা তার সাথে সহযাত্রী না হন। সবাই গত ১৬ বছরে তারেক রহমানের সহযাত্রী ছিলেন বলেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, দেলোয়ার হোসেন খোকন, বীরমুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, প্রকৌশলী টি এস আয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, আব্দুস সালাম, হাসান জহির, নুরুজ্জামান লিটন, মতিয়ার রহমান ফারাজী, মোর্তজা এলাহী টিপু, সাবিরা নাজমুল মুন্নী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এসএএইচ