সিলেট: সিলেট মুরারিচাদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক ছাত্রের ওপর ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েকজন কর্মী হামলা চালিয়েছে বলে দায় স্বীকার করেছেন সিলেটের জামায়াত নেতারা। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা।
তবে জামায়াতের এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মহানগর ছাত্রশিবির। সামাজিক মাধ্যমের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে নেতারা এই বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে জামায়াতের এই বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে শিবির।
বিষয়টি নিয়ে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেটে আনজুমানে আল ইসলাহ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছাত্রশিবিরের হামলায় দায় স্বীকার করে জামায়াত নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝি আর যেন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠক থেকে এক ভিডিও বার্তায় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এমসি কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করছি, দুঃখ প্রকাশ করছি। বিশেষ করে ফেসবুকের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানে যে বাড়াবাড়ি টুকু হয়েছে, তা আমাদের দৃষ্টিতে সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছু সংখ্যক কর্মী সেটার সঙ্গে জড়িত এবং যা করেছে, সেটা অন্যায়ভাবে করেছে -এটা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- আমরা পরস্পর ইসলামী সংগঠন, আমরা দেশ ও জাতির ভালো চাই। আমরা এদেশে একটি ইসলামী পরিবেশ চাই। আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর আদর্শের আলোকে একটি সুন্দর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক, আমাদের উভয় সংগঠনেরই একই উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। এই জায়গা থেকে নিজেদের মধ্য থেকে যদি কোনো ভুলত্রুটি বা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয় সেখানে ইসলামবিরোধী পক্ষ মূলত উপকৃত হবে। এ ধরনের আর কোনো ভুল বুঝাবুঝি হলে আমরা পরস্পর বসে তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসার দিকে যাব। কোনো কর্মী যেন এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করেন -যেটা করলে ইসলামের ক্ষতি হয়, সেদিকেও আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাবো। ’
এসময় সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এমসি কলেজের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদের প্রতি সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও সুস্থতা কামনা করে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাও জানান তিনি।
এছাড়া যারা আহত রয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করেন মো. ফখরুল ইসলাম। যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের রক্তের দাবি অনুযায়ী বৈষম্যহীন সুন্দর ও শান্তিময় দেশ ও সমাজ গঠনে উভয় সংগঠন ঐকমত্যভাবে কাজ করার ব্যাপারে তারা একমত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাসিক পরওয়ানার সম্পাদক মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, আল ইসলাহ নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নজমুল হুদা খান, শ্রমিক ফেডারেশন নেতা লোকমান আহমদ, আল ইসলাহ নেতা মাওলানা জইন উদ্দিন, মাওলানা জিয়াউল ইসলাম মুহিত প্রমুখ।
এদিকে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রাতে ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য সিলেট মহানগর শাখা সভাপতি শাহীন আহমদ ও সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
ছাত্রশিবির মহানগর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নাঈম হোসাইন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিলেটের এমসি কলেজে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ফায়দা হাসিল করতে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে আসছে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের প্রদত্ত বক্তব্য আমাদের নজরে আসে। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরে ওপর দায় দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ইতোমধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমিরও এ অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন তারা। তারা অবিলম্বে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানান। ’
এ বিষয়ে ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম সাজু বলেন, মহানগর জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের পেরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে মহানগর প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নাঈম হোসাইনকে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ১ নম্বর ব্লকের ১০১ নম্বর কক্ষে ঢুকে মিজানুর রহমান রিয়াদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মী। কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ফেসবুকে মন্তব্য করা নিয়ে তার ওপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়। আহত রিয়াদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় কলেজ প্রশাসন পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন এমসি কলেজ অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
এনইউ/এসআরএস