ঢাকা, শনিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪ রমজান ১৪৪৬

রাজনীতি

গণমিছিল স্থগিত, সংক্ষিপ্ত সমাবেশেই কর্মসূচি শেষ করলো বামপন্থী সংগঠনগুলো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
গণমিছিল স্থগিত, সংক্ষিপ্ত সমাবেশেই কর্মসূচি শেষ করলো বামপন্থী সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের বামপন্থী ছাত্র, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে পূর্বঘোষিত গণমিছিল স্থগিত করেছে বামপন্থী ছাত্র, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। গণমিছিলের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেই কর্মসূচি শেষ করেছে সংগঠনগুলো।

শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুর পৌনে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ- বিসিএল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করে আমরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি শেষ করছি।

তিনি বলেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠী আমাদের এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য, ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করে আসছে। আমরা দেখেছি, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে। আমরা আজকে এ সমাবেশ থেকে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, ধর্ষণবিরোধী গণআন্দোলনকে ব্যবহার করে আপনাদের যে মনোবাসনা, সেই মনোবাসনা বাংলাদেশের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ ও যুবসমাজ পূরণ হতে দেবে না।

সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, মাগুরার শিশুসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণমিছিল করার কথা ছিল সংগঠনগুলোর।

এর আগে সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন বলেন, আপনারা জানেন জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়ন করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় লাখো মানুষ এ গণআন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট, স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশাভঙ্গ হয়েছে। সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থ হয় নাই। সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নানা গুম, খুন, ধর্ষণের বিচার করার সুযোগ এ অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল এবং এখনও আছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা নোয়াখালীতে ধর্ষণ, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা-লুটপাট, শ্রমিক হত্যার বিচার না করে এ সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বিচারহীনতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখে অভ্যুত্থানের চেতনার কথা বললেও কার্যত তার কোনো ফলাফল দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে না। বরং দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মব সন্ত্রাস ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রতীয়মান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মাগুরার শিশুর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকাহত। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও, ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

এ সময় তারা সাত দফা দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো:

১. মাগুরার শিশুসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে।

২. ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।

৩. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

৪. মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।

৫ . চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে।

৬. সাগর-রুনিসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংগঠিত হত্যার বিচার করতে হবে।

৭. হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।

সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল, যুব ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বারৈ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
এসসি/এমএমআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ