আবদুল হান্নান মাসুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক। জুলাই আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যখন ডিবি কার্যালয়ে আটক ছিলেন, তখন আন্দোলন চালিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি।
প্রশ্ন: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে দেশের মানুষ কেমন আছে বলে মনে করেন?
হান্নান মাসুদ : জুলাই অভ্যুত্থানের আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষ শান্তিতে আছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, রাজনৈতিক দলের সভাসমাবেশ করার স্বাধীনতা আছে। রমজানে বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার ষড়যন্ত্রও চলছে।
সেদিক থেকে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। তার পরও আমরা আশাবাদী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশ হবে নিরাপদ বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: এই সময়ে এসে আপনারা কেন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন?
হান্নান মাসুদ : রাজনৈতিক দল যে কেউ গঠন করতে পারে, এটা নাগরিক অধিকার। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা, রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা, সমালোচনা করতে পারাও নাগরিকদের অধিকার। সে জায়গা থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার পর আমরা দেশের মানুষকে নতুন স্বপ্নের কথা বলেছি। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে আমাদের নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রয়োজন। যে রাজনৈতিক দলের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আসবে। দেশের মানুষকে সাংবিধানিক পরাধীনতা থেকে বের করতে হলে ৫৪ বছরের ব্যর্থ রাষ্ট্রকে ঠিক করতে হবে। দেশের মানুষের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতেই আমাদের এই রাজনৈতিক দল গঠন।
প্রশ্ন: বিএনপি, জামায়াতের মতো বড় দল থাকতে সাধারণ মানুষ কেন আপনাদের ভোট দেবে?
হান্নান মাসুদ : এই একই প্রশ্ন তো অন্য দলকেও করা যায়।
বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে? জামায়াতকে কেন ভোট দেবে? অন্য যত ছোট দল আছে তাদের কেন ভোট দেবে? আসলে মানুষ কেন ভোট দেবে সেটা আমাদের কর্মফলের ওপর নির্ভর করবে। মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, সেটা যদি আমরা লালন করতে পারি, তাহলে মানুষ অবশ্যই আমাদের ভোট দেবে। আত্মপ্রকাশের দিনই স্পষ্ট হয়েছে যে, আমরা এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেছি এবং মানুষও আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে। এই জায়গায় সফল হতে পারলে মানুষ আমাদের ভোট দেবে।
প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনারা স্থানীয় নির্বাচন কেন চাচ্ছেন?
হান্নান মাসুদ : দেখেন, জাতীয় নির্বাচন কবে হবে সেটা একটি আপেক্ষিক বিষয়। আমরা এখনই বলতে পারছি না এই নির্বাচন কবে হবে। আমরা বলছি যে, আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ হতে হবে। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাযজ্ঞের বিচার হতে হবে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি করতে হবে। মৌলিক সংস্কারগুলো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই প্রক্লামেশন করতে হবে। এই শর্তগুলো জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পূর্ব শর্ত। তারপর জাতীয় নির্বাচনের দিকে যেতে পারি। আমরা বলছি এই আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে নতুন সংবিধান প্রয়োজন। এর জন্য অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজন। নতুন একটি প্রজাতন্ত্র প্রয়োজন। আমরা সেই নতুন প্রজাতন্ত্র নিশ্চিতের জন্য মনে করি, সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি একই সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচনটাও জরুরি। আমরা দেখছি প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়। বড় একটি রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে চলছে বর্তমান প্রশাসন। এই প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। জাতীয় নির্বাচন হলো ফাইনাল ম্যাচ। তার আগে আপনাকে প্রাথমিক ম্যাচগুলো খেলতে হবে। তার জন্য আপনাকে স্থানীয় নির্বাচন আগে দিয়ে তা দেখতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বোঝা যাবে সরকার নিরপেক্ষ আছে কি না।
প্রশ্ন: গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বলেছিলেন, তিনি আপনাদের এনসিপিতে যোগ দিচ্ছেন। এদিকে ওই দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলছেন, আপনি মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। আসল বিষয়টি কী?
হান্নান মাসুদ : রাশেদ ভাই প্রথমিকভাবে বলেছিলেন আমি মনগড়া বলেছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটি টক শোতে তিনি যখন ছিলেন, তখন স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। আমি যে মনগড়া বলেছি, সেটা তিনি বলতে পারেননি। ওনারা আমাদের সঙ্গে বারবার আলোচনায় বসছেন কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি বলে আসতে পারছেন না। ভবিষ্যতে আমাদের দলে চলে আসতে পারেন।
প্রশ্ন: অভিযোগ আছে, দেশের বন্দরগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে এবং সেখান থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন আপনি।
হান্নান মাসুদ : সাংগঠনিকভাবে বন্দর শ্রমিক, রিকশা শ্রমিকসহ মোটামুটি সব শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আমাকে রাখা হয়েছে। কিন্তু শুধু বন্দরকে সামনে নিয়ে আসার কারণ হলো আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা।
যেহেতু আমাদের নতুন দল আসছে তারা আমাদের দলের হয়ে কাজ করবে। এ জন্য আমি বন্দর শ্রমিক সংগঠনের উপদেষ্টা হয়েছি। আপনারা জানেন, এনসিপির আমি সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক। আমার কাজ হলো দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন গড়ে তোলা। সে জায়গা থেকে বিভিন্ন বন্দর, রিকশা শ্রমিক, গার্মেন্টসকর্মীসহ যত ধরনের শ্রমিক সংগঠন আছে এসবের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছে। যেমন—ঢাকা শহরে এক লাখ রিকশা আছে, তার মধ্যে ৫০০ রিকশা শ্রমিক নিয়ে আমার কাজ, তাহলে আমি পুরো রিকশা শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করছি—এমনটা বলা যাবে না। তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করছে। সেখানে ৫০০ জন শ্রমিকের সংগঠনে আমাকে উপদেষ্টা বানানো হলে চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর পুরোটা আমার নিয়ন্ত্রণে—এমনটা বলা যাবে না। ফলে এটা মনগড়া একটা অপপ্রচার, যার কোনো ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে আপনি এলজিবিটিকিউ সমর্থন করেন।
হান্নান মাসুদ : দেখুন, এলজিবিটিকিউর প্রতি সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। এটা আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় পাশাপাশি এই ভূ-খণ্ডের সভ্যতার পুরোপুরি বিপরীত। সুতরাং এটাকে সমর্থন করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: এখন তো আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, আপনাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থাকবে কি?
হান্নান মাসুদ : নাহিদ ভাইয়ের খণ্ডিত একটি বক্তব্য নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। আমাদের এই প্ল্যাটফর্মটি থাকবে, কিন্তু সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৫
এমএম